পরিবেশ রক্ষা ও সুশাসনে স্বীকৃতি পেল আদানি পাওয়ার

এনএসই সাসটেইনেবিলিটি রেটিংয়ে তাপবিদ্যুৎ খাতে সবার ওপরে

পরিবেশ রক্ষা, সামাজিক দায়িত্ব এবং সুশাসনের ক্ষেত্রে ভালো কাজের স্বীকৃতি পেয়েছে ভারতের সবচেয়ে বড় বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আদানি পাওয়ার লিমিটেড। দেশটির ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (এনএসই) গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত এবং এনএসই ইনডিসেস লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এনএসই সাসটেইনেবিলিটি রেটিংস অ্যান্ড অ্যানালিটিক্স লিমিটেড বাস্তব তথ্যের উপর আদানি পাওয়ারকে মূল্যায়ন করে ১০০-এর মধ্যে ৬৫ নম্বর দিয়েছে। এই নম্বরের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটিকে উন্নয়নশীল (Aspiring) শ্রেণিতে রাখা হয়েছে।

মূল্যায়নে দেখা গেছে, তাপবিদ্যুৎ, মিশ্র ও সমন্বিত জ্বালানি খাতে কাজ করা বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আদানি পাওয়ার সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। এতে পরিবেশ, সমাজ এবং কর্পোরেট পরিচালনায় দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক চর্চা ও টেকসই প্রবৃদ্ধির প্রতি প্রতিষ্ঠানটির অঙ্গীকার প্রতিফলিত হয়েছে।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের ফলে পরিবেশের ওপর যে ক্ষতিকর চাপ পড়ে, তা কমাতে আদানি পাওয়ার শিল্পের সেরা মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল বয়লার প্রযুক্তি, যা তুলনামূলকভাবে কম কয়লা ব্যবহার করে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম এবং কার্বন নিঃসরণও কম হয়।

এ ছাড়া প্রতিটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নিয়মিত দূষণ পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিক সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পানি সংরক্ষণে গুরুত্ব দিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জিরো লিকুইড ডিসচার্জ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে, যাতে ব্যবহৃত পানি বাইরে ফেলা না হয় এবং স্থানীয় পানিসম্পদের ওপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে আদানি পাওয়ার শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও দক্ষ জনবল তৈরির ওপর জোর দিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে রয়েছে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি প্রদান, নিয়মিত স্বাস্থ্য ক্যাম্প আয়োজন এবং জীবিকা উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি।

এছাড়া কর্মীদের নিরাপত্তা, সুস্থতা ও কল্যাণের দিকেও বিশেষ নজর দেওয়া হয়। সব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নিয়মিত নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং নারীসহ সব শ্রেণির মানুষের জন্য সমান সুযোগ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মপরিবেশ তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় আইন ও নিয়মের বিষয়ে আদানি পাওয়ার বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে। কোম্পানির নিয়োগ ও পারিশ্রমিক কমিটি, নিরীক্ষা কমিটি এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটি-এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতেই স্বাধীন পরিচালকের সংখ্যা আইনে নির্ধারিত ন্যূনতম সীমার চেয়ে বেশি।

এ ছাড়া যেসব ঠিকাদার ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আদানি পাওয়ার কাজ করে, তাদের ক্ষেত্রেও পরিবেশ, সামাজিক ও সুশাসন সংক্রান্ত কঠোর মানদণ্ড অনুসরণের শর্ত আরোপ করা হয়েছে, যাতে পুরো সরবরাহ শৃঙ্খলে দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক আচরণ নিশ্চিত করা যায়।

শুধু দেশের মধ্যেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আদানি পাওয়ারের কার্যক্রম স্বীকৃতি পেয়েছে। বৈশ্বিক গবেষণা সংস্থা সাসটেইনালিটিক্স আদানি পাওয়ারকে পরিবেশ-সামাজিক-সুশাসন ঝুঁকির ক্ষেত্রে ‘মাঝারি ঝুঁকি শ্রেণিতে রেখেছে। এই মূল্যায়নে প্রতিষ্ঠানটির স্কোর ২৯.২, যেখানে বৈশ্বিক বৈদ্যুতিক ইউটিলিটি খাতের গড় স্কোর ৩৬.৯। কম স্কোর মানে ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম।

অন্যদিকে সিএসআর হাব আদানি পাওয়ারকে ৭৭ শতাংশ পরিবেশ-সামাজিক-সুশাসন রেটিং দিয়েছে, যা বৈশ্বিক শিল্পগড় ৫১ শতাংশের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এসব স্বাধীন মূল্যায়ন ভবিষ্যতেও পরিবেশ ও সুশাসনের প্রতি অঙ্গীকার বজায় রেখে দীর্ঘমেয়াদে অংশীজনদের জন্য টেকসই মূল্য সৃষ্টির বার্তা দেয়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

twelve − 10 =