পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পাচ্ছেন শবনম

দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম জনপ্রিয় নাম অভিনেত্রী শবনম। দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেছেন তিনি। নিজের অভিনয়ের দক্ষতা দিয়ে অর্জন করেছেন অসংখ্য সম্মাননা ও পুরষ্কার। এবার তার ঝুলিতে যুক্ত হতে যাচ্ছে পাকিস্তানের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার সিতারা-ই-ইমতিয়াজ পুরষ্কার। যা পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতি সেবার জন্য দেওয়া হয়।

পাকিস্তানের সংবাদপত্র পাকিস্তান অবজারভার জানায়, ‘মহানায়িকা শবনমকে পাকিস্তানের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে অসামান্য অবদানের জন্য সম্মানসূচক এ পুরষ্কার দেওয়া হবে। আগামী বছর ২৩ মার্চ শবনমের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেয়া হবে।’

এর আগে তিনি দেশটির চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার নিগার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ১৩ বার।

শৈশবেই বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে নাচ শেখেন শবনম। একজন নৃত্যশিল্পী হিসেবে তিনি সুপরিচিতি লাভ করেন। সেখানেই একটি নৃত্যের অনুষ্ঠানে নির্মাতা এহতেশাম তার নাচ দেখে ‘এদেশ তোমার আমার’ চলচ্চিত্রের নৃত্যে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন।

এহতেশামের আরও কিছু সিনেমায় অতিরিক্ত শিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন শবনম। কিন্তু এহতেশামের পাশাপাশি পরিচালক মুস্তাফিজের নজর কাড়তে সক্ষম হন অতিরিক্ত শিল্পী হিসেবে অভিনয় করেই।

মুস্তাফিজ পরিচালিত ‘হারানো দিন’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে ১৯৬১ সালে নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন শবনম। এ সিনেমাতেই তিনি ঝর্ণা বসাক থেকে ‘শবনম’ নাম ধারণ করেন।

আজ গুণী অভিনেত্রী শবনমের জন্মদিন। ১৯৪০ সালের ১৭ আগস্ট ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার আসল নাম ঝর্ণা বসাক। শৈশবে বুলবুল ললিতকলা একাডেমি থেকে নাচ শেখেন তিনি। অসাধারণ নাচের দক্ষতা অর্জন করে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। এক অনুষ্ঠানে শবনমের নৃত্য দেখে তাকে সিনেমায় নাচের সুযোগ করে দেন বরেণ্য নির্মাতা এহতেশাম। একইসঙ্গে আরও কিছু সিনেমায় ছোট চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি।

১৯৬১ সালে শবনম প্রথম নায়িকা হিসেবে অভিনয় শুরু করেন। মুস্তাফিজ পরিচালিত সিনেমাটির নাম ছিল ‘হারানো দিন’। এই সিনেমাতেই তিনি শবনম নামটি ধারণ করেন। সিনেমাটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। যার সুবাদে শবনমও হয়ে ওঠেন দর্শকদের প্রিয় নায়িকা।

এর পরের বছরই উর্দু সিনেমায় অভিষেক হয় শবনমের। ‘চান্দা’ সিনেমায় অভিনয় করে তিনি তৎকালীন সমগ্র পাকিস্তানে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এরপর তিনি টানা নব্বই দশক পর্যন্ত কাজ করে গেছেন। মাঝে বাংলাদেশ হয়েছে স্বাধীন। কিন্তু পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশ কোথাও শবনমের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি।

ষাটের দশকে শবনম পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। এ কারণে ১৯৬৮ সাল থেকে তিনি লাহোরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

শবনম অভিনীত বাংলা সিনেমাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ‘আমার সংসার’, ‘এ দেশ তোমার আমার’, ‘আম্মাজান’, ‘কখনো আসেনি’, ‘জোয়ার ভাটা’, ‘নাচের পুতুল’, ‘রাজধানীর বুকে’, ‘সহধর্মিনী’ ইত্যাদি।

তার অভিনীত উর্দু সিনেমাগুলো হচ্ছে- ‘আখেরি স্টেশন’, ‘আসরা’, ‘আনমল মোহাব্বত’, ‘আনারি’, ‘আনোখী’, ‘আয়না’, ‘আবশার’, ‘আখো আখো মে’, ‘ইন্তিখাব’, ‘কারাবান’, ‘ক্যয়সে কাহু’, ‘কসম আজ ওয়াক্ত কি’, ‘কাভি আলভিদা না ক্যাহনা’, ‘চান্দা’, ‘চালো মান গায়ে’, ‘জাঞ্জীর’, ‘জাগীর’, ‘তালাশ’, ‘তুম মেরে’, ‘দোস্তী’, ‘দিল্লাগী’, ‘দিল নাশীন’, ‘নয়া আন্দাজ’, ‘নারাজ’, ‘প্রীত না জানে রীত’, ‘পেহচান’, বেগানা’, ‘বিন্দাস’, ‘রিশতা’, ‘হাম দোনো’, ‘শরীক-ই-হায়াত’, ‘শরাফত’, ‘সাগর’ ও ‘সমন্দার’।

পাকিস্তানের চলচ্চিত্র শিল্পে অসামান্য অবদান রাখায় ১২বার সে দেশের সম্মানজনক নিগার পুরষ্কার লাভ করেছেন শবনম। এছাড়া ২০১৯ সালে স্টাইল অ্যাওয়ার্ডে তাকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়।

ব্যক্তিগত জীবনে শবনম বিয়ে করেছিলেন সঙ্গীত পরিচালক রবিন ঘোষকে। তাদের বিয়ে হয়েছিল ১৯৬৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর। ২০১৬ সালে রবিন ঘোষ মৃত্যুবরণ করেন। শবনম-রবিন দম্পতির একমাত্র সন্তান রনি ঘোষ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

ten + eighteen =