পাকিস্তানে দুর্দান্ত সফল বাংলাদেশ কেন ভারতে বিপর্যস্ত হলো

সালেক সুফী

টেস্ট ক্রিকেট এমন এক খেলা যেখানে সকাল দেখে বিকেল চেনা যায় না। বাংলাদেশ পাকিস্তানে দুর্দান্ত সাফল্য পেয়েছে দলগতভাবে উন্নত ক্রিকেট খেলে। সেই ধারা বাংলাদেশ ভারতে বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। দল হিসাবে লড়াই করতে পারেনি।

পাকিস্তানের তুলনায় ভারতের টেস্ট দল অনেক শক্তিশালী আর ভারতের মাটিতে প্রায় অজেয়। তবুও বলবো বাংলাদেশ চেন্নাইতে অনুষ্ঠিত  প্রথম টেস্টে একটা পর্যায় পর্যন্ত ভালো বোলিং করে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিল। রবিচন্দ্র অশ্বিন আর রবীন্দ্র জাদেজার ১৯৯ রানের ৭ম উইকেট জুটি ম্যাচ এ সিরিজের বাঁক বদল করে দেয়। এর পর থেকে বাংলাদেশ খেই হারিয়ে ফেলে।

প্রথম টেস্টে ২৮০ রানের বিপুল ব্যবধানে হারার পর বাংলাদেশ দল এলোমেলো হয়ে যায়। দ্বিতীয় টেস্টে দুই দিনেরও বেশি সময় বৃষ্টি বিঘ্নিত হওয়া সত্ত্বেও জয়ের জন্য ভারতের ইমপ্যাক্ট এবং ইনটেন্ট কৌশলের কাছে হেরে যায় বাংলাদেশ। শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপ নিয়ে আগ্রাসী ভারত বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণকে তুলোধুনো করে দ্রুততম ৫০, ১০০, ১৫০, ২০০ , ২৫০ রানের নতুন মাইল ফলক স্থাপন করে।

দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ব্যাটিং ভারতের ত্রিমুখী উঁচু মানের বোলিংয়ের বিরুদ্ধে স্বল্প সময়ে গুটিয়ে গেলে ৭ উইকেটের বিশাল ব্যাবধানে ম্যাচ জয় করে  ধবল ধোলাই করে কাঙ্ক্ষিত পয়েন্ট অর্জন করে। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলার পথে ভারত অনেক এগিয়ে যায়।

দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশের অর্জন বলতে মমিনুলের ১০৭ রান, মেহেদী মিরাজ এবং সাকিবের ৪টি করে উইকেট পাওয়া। ফিরে তাকালে দেখা যাবে বাংলাদেশ কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিছু ব্যক্তিগত সাফল্য অর্জন করলেও শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো অবস্থানে যাওয়ার জন্য দলীয় পারফরমেন্স করতে পারেনি।

ব্যাটিংয়ে মূল ভরসা মুশফিক, লিটন, ইদানিং ভালো খেলা মেহেদী মিরাজ অবদান রাখতে পারেনি। এক সময় ব্যাটিংয়ে ভরসার স্থল সাকিব ছিল অনুজ্জ্বল। তরুণ ওপেনার দুই জন বড় স্কোর করতে পারেনি। সব কিছুর সম্মিলিত ফলাফল বাংলাদেশের শোচনীয় সিরিজ পরাজয়।

বিশেষ করে দ্বিতীয় টেস্ট সীমিত সময়ে ব্যাটিং করে পরাজয় এড়ানোর কোনো অজুহাত দিতে পারবে না বাংলাদেশ। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের সমস্যা ছিল পাকিস্তানে খেআর সময়। কিন্তু সেখানে মুশফিক, লিটন আর মেরাজ অবিস্মরণীয় ব্যাটিং করে দলের জয়ে ভূমিকা রেখেছে। ভারতে সেটি হয়নি।

বাংলাদেশ-ভারতের টেস্ট সিরিজের ফলাফল লংগার ভার্সন ক্রিকেটে শক্তিশালী দলের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাবধান সুস্পষ্ট করে দিয়েছে।অন্যতম কারণ ঘরোয়া ক্রিকেটের দৈন্য দশা, খেলোয়াড়দের স্পোর্টিং উইকেটে নিয়মিত ক্রিকেট খেলার অনভ্যাস। কিছু উঁচু মানের ক্রিকেটারদের ব্যাতিক্রমধর্মী সাফল্যের কারণে কালে ভদ্রে টেস্ট ম্যাচে জয় আসলেও বাংলাদেশকে টেস্ট ক্রিকেটে ধারাবাহিক হতে এখনো অনেক পথ পাড়ি  দিতে হবে।

ভারত এমনকি শ্রীলংকার ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে বাংলাদেশের অনেক কিছুই শেখার আছে। বিসিবির বর্তমান পরিকাঠামো পরিবর্তন না হলে সভাপতি বা দুই-একজন পরিচালকের মাধ্যমে ক্রিকেটের গুণগত পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না।

যাহোক টেস্ট সিরিজ শেষ হয়েছে। শুরু হবে তিন ম্যাচের  টি২০ সিরিজ। ভারত শীর্ষস্থানীয় অনেক খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দিয়ে কিছুটা খর্ব শক্তির স্কোয়াড ঘোষণা করেছে। কিন্তু এই স্কোয়াডেও অনেক তুখোড়  টি২০ বিশেষজ্ঞ খেলোয়াড় আছে।

দেখা যাক টেস্ট সিরিজের দুঃস্বপ্ন ভুলে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারে কি না। ভারতের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলা ছাড়া বিকল্প নেই।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

20 − 3 =