পাবনায় সুচিত্রা সেনের ৯২তম জন্মদিন উদযাপন

নানা আয়োজনে বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়িকা ও পাবনার মেয়ে সুচিত্রা সেনের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) বেলা ১১টায় এ উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসন ও সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের আয়োজনে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়।

জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের সামনে থেকে বের হয়ে শোভাযাত্রাটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা শহরের হেমসাগর লেনে সুচিত্রা সেন সংগ্রহশালায় এসে শেষ হয়। পরে সেখানে সুচিত্রা সেনের ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন অতিথিরা। এরপর সংগ্রহশালা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা।

পাবনার ডিসি বিশ্বাস রাসেল হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন, এসপি আকবর আলী মুনসী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল, সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. রাম দুলাল ভৌমিক, সাধারণ সম্পাদক ড. রনেশ মধু, পাবনা প্রেসক্লাব সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান প্রমুখ।

এছাড়া দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পাবনা প্রেসক্লাব, নাট্য সংগঠন ড্রামা সার্কেল ও প্রথম আলো বন্ধুসভাসহ স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন অংশগ্রহণ করেন।

পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনে সুচিত্রা সেনের পৈতৃক এই বাড়ির অবস্থান। এই বাড়িতেই তিনি বাবা-মা ও ভাইবোনের সঙ্গে শৈশব ও কৈশোর কাটিয়েছেন। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত তিনি অধ্যয়ন করেছেন পাবনার দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

ঐতিহাসিক এই বাড়িটি দীর্ঘ দিন ধরে জামায়াতে ইসলামীর একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখন করে রেখেছিল। পাবনার সকল সংগঠনের সামাজিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ২০১৪ সালে মহানায়িকার দখলকৃত পৈত্রিক বসতবাড়িটি জামায়াতের হাত থেকে দখলমুক্ত করা হয়। এখন বাড়িটিকে একটি সংগ্রহশালা তৈরির পরিকল্পনায় এগিয়ে যাচ্ছে।

১৯৪৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিয়ের পর তিনি স্বামীর সঙ্গে কলকাতায় চলে যান। সুচিত্রা সেনের বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত তখন পাবনা পৌরসভার স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদে চাকরি করতেন। ১৯৫১ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর নেন। ১৯৬০ সালে করুণাময় দাশগুপ্ত বাড়িটি জেলা প্রশাসনের কাছে ভাড়া দিয়ে পরিবার নিয়ে কলকাতায় চলে যান। ১৯৮৭ সাল থেকে ইজারার মাধ্যমে বাড়িটি দখলে নেন জামায়াত নেতারা। ২০০৯ সাল থেকে পাবনাবাসী বাড়িটি দখলমুক্ত করে সেখানে সুচিত্রা সেন সংগ্রহশালা করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। ২০১৪ সালে বাড়িটি দখলমুক্ত হয়। বর্তমানে বাড়িটি পাবনা জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

তবে মহানায়িকার স্মৃতিবিজড়িত পৈত্রিক এই বসতবাড়িতে তাদের রেখে যাওয়া কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। শুধু সেই সময়ে নির্মিত ৫ কক্ষ বিশিষ্ট একটি একতলা শৈল্পিক ভবন রয়েছে। পাবনা জেলা প্রশাসন ও সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ সেটিকে সংস্কার করে কিছু ছবি ও বই দিয়ে সাজিয়েছেন। আগত দর্শনার্থীদের জন্য সেখানে বড় পর্দায় সুচিত্রা সেন অভিনীত সিনেমা দেখার ব্যবস্থা করেছেন। তাই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়সহ সরকারের কাছে সাংস্কৃতিক কর্মীদের দাবি, মূল ভবন রেখে জায়গা অধিগ্রহণ করে সেখানে আধুনিক সংগ্রহশালাসহ চলচ্চিত্র প্রশিক্ষণাগার গড়ে তোলা হোক।

মহানায়িকা সুচিত্রা সেন বাংলা ও হিন্দি মিলে ৬১টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনে পৈত্রিক বাড়িতে সুচিত্রা সেন জন্মগ্রহণ করেন। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি ভারতের কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই মহানায়িকা।

ঢাকা পোস্ট

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

two × 3 =