পুরোনো সিনেমাই ভরসা হলমালিকদের

অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কাটিয়ে এখনো সচল হতে পারেনি দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি। বেশির ভাগ হল বন্ধ, চালু থাকা হলগুলোও ধুঁকছে নতুন সিনেমার অভাবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন সিনেমা মুক্তির সাহস করতে পারছেন না নির্মাতারা। ফলে পুরোনো সিনেমাই এখন ভরসা হলমালিকদের। এ সংকট কাটিয়ে উঠতে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার শরণাপন্ন হয়েছেন হলমালিক সমিতির নেতারা।

ঈদুল আজহার পর মাত্র দুটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। গত ১২ জুলাই শবনম ফেরদৌসির ‘আজব কারখানা’ ও ২৩ আগস্ট ‘অমানুষ হলো মানুষ’। এর পর প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও নতুন সিনেমার কোনো খবর নেই। কবে নাগাদ মুক্তি পাবে, তা-ও বলতে পারছেন না নির্মাতারা। ঈদুল আজহায় মুক্তি পাওয়া ‘তুফান’, ‘আগন্তুক’ ও ‘ডার্ক ওয়ার্ল্ড’ এখনো চালানো হচ্ছে কিছু হলে। এ ছাড়া কিছু হলে রোজার ঈদের সিনেমা ‘রাজকুমার’ ও ‘লিপস্টিক’ও প্রদর্শিত হচ্ছে। তবে ব্যবসার অঙ্ক সন্তোষজনক নয় বলে জানা গেছে। সেন্সর বোর্ড অকার্যকর থাকায় কোনো বিদেশি সিনেমাও মুক্তি পাচ্ছে না। তাই মাল্টিপ্লেক্সগুলোতেও চালানো হচ্ছে পুরোনো সিনেমা।

সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বেশ কিছু সিনেমা মুক্তির কথা থাকলেও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে পিছিয়ে গেছেন নির্মাতারা। মুক্তির তালিকায় ছিল শাকিব খানের ‘দরদ’, সিয়াম-বুবলীর ‘জংলি’, আরিফিন শুভ-মন্দিরার ‘নীলচক্র’। এ ছাড়া মুক্তি পিছিয়েছে ‘হৈমন্তীর ইতিকথা’, ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ ও ‘নন্দিনী’। অক্টোবরে দুর্গাপূজা উপলক্ষে ‘শরতের জবা’ মুক্তির কথা থাকলেও এখন নভেম্বরে মুক্তির পরিকল্পনা করছেন সিনেমাটির পরিচালক ও প্রযোজক কুসুম শিকদার।

সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে সচল করতে ১৫ সেপ্টেম্বর সেন্সর বোর্ড পুনর্গঠন করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। ২০২৩ সালে চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন থাকার পরও সেন্সর বোর্ড পুনর্গঠন করা নিয়ে চলচ্চিত্রের অনেকে সমালোচনা করেন। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম জানান, সেন্সর বোর্ড থেকে বাদ যাচ্ছে ‘সেন্সর’ শব্দটি। দ্রুত গঠন করা হবে সেন্সর সার্টিফিকেশন বোর্ড।

দ্রুত সংকট কাটিয়ে না উঠতে পারলে সিনেমা হলের সংখ্যা আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন হলমালিকেরা। চলচ্চিত্র প্রদর্শক ও হলমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, ‘তিন মাসের বেশি সময় ধরে হলে মানসম্মত সিনেমা মুক্তি পায়নি। ঈদুল আজহার পর মুক্তি পেয়েছে মাত্র দুটি সিনেমা। মাঝে অস্থিতিশীল সময়ে বন্ধ ছিল হলগুলো। এখন চালু হলেও নতুন সিনেমার অভাবে দর্শকখরায় ভুগছে। যে হলগুলো চালু আছে, সেখানে পুরোনো সিনেমা প্রদর্শিত হচ্ছে। হলের সংখ্যা কমতে কমতে এখন ষাটের নিচে নেমেছে। এভাবে চলতে থাকলে হলের সংখ্যা আরও কমে যাওয়ার শঙ্কা আছে।’

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে হল ব্যবসায়ীদের সংকট নিয়ে কথা বলেছেন আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল। তিনি বলেন, ‘হলমালিক সমিতির পক্ষ থেকে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেছি। আমাদের সমস্যাগুলো তাঁকে জানিয়েছি। দ্রুত নতুন সিনেমা মুক্তির ব্যবস্থা করার ব্যাপারে তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। আশা করি শিগগির নতুন সিনেমা মুক্তির খবর পাওয়া যাবে। এ ছাড়া হল সংস্কার নিয়েও উপদেষ্টার সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।’

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

2 × three =