পূজায় সোনার গয়না ছাড়াও বিভিন্ন গয়না

নাহিন আশরাফ

পূজাকে ঘিরে সবার রয়েছে নানা রকম আয়োজন। বাঙালি নারীদের পূজার সাজ যেন কল্পনা করা যায় না গয়না ছাড়া। শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, লেহেঙ্গা যাই হোক সবকিছুর সাথেই নারীরা বেছে রাখে তাদের পছন্দের গয়না। পূজার সাজ বলে কথা। পূজার সময়ে তাই সবাই নিজেকে একটু ভিন্নভাবে সাজাতে চায়। পূজার কেনাকাটার একটি বিশেষ অংশ জুড়ে থাকে শুধু গয়না। গয়না হতে হবে অবশ্যই পোশাকের সাথে মানানসই। একটা সময় পূজা মানেই ছিল শুধুমাত্র সোনার গয়না পরা। শুধুমাত্র অভিজাত ঘরের নারীরাই সোনার গয়না দিয়ে পূজার দিন সাজতে পারতো। এখনো অনেকের সোনার গয়না পূজার দিন পরিধান করে থাকে। কিন্তু সোনার গয়না ছাড়াও বিভিন্ন উপাদানের গয়না এখন জায়গা করে নিয়েছে নারীদের মনে।

পূজা মানেই যে গা ভর্তি দামি সোনার গয়না পরতে হবে তা নয়। সাশ্রয়ী দামে বাজারের বিভিন্ন ধরনের গয়না এখন বেছে নিচ্ছে নারীরা। সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায় মোটিফভিত্তিক গয়না। কাপড় কিংবা মাটি দিয়ে তৈরি করা হয় মা দুর্গার মুখ, দেবীর আগমন, আগমনের বাহন, স্বরসতী, গণেশ, পেঁচা, ময়ূর ইত্যাদি। বেশ কয়েক বছর ধরে কাপড়ের গয়না জনপ্রিয়তা পেয়েছে। নিজের সৃজনশীলতা দিয়ে উদ্যোক্তারা তৈরি করে থাকে কাপড়ের গয়না, সেখানে বাহারি রকমের নকশা করা হয়। কাপড়ের গয়নার মূল আকর্ষণ প্রিন্ট ও ডিজাইন। বাঙালিয়ানা সাজের সাথে কাপড়ের গয়না যেন পরিপূর্ণতা পায়।

অনলাইনে অনেক উদ্যোক্তারা এ ধরনের গয়না তৈরি করে নিজেরা সাবলম্বী হচ্ছে। পাশাপাশি সবার কাছে পৌঁছে দিচ্ছে এ ধরনের ভিন্নধর্মী গয়না। কাপড়ের গয়না শাড়ির পাশাপাশি ওয়েস্টার্ন ড্রেসের সাথে অনেকে পরিধান করে থাকে। এতে আমাদের ঐতিহ্য ধরে রাখা যায়। বাটিক, জামদানি কাপড়, সুতির কাপড়, কাতান কাপড় ইত্যাদি দিয়ে কাপড়ের গয়না তৈরি করা হয়। এ ধরনের কাপড়ের গয়না আকর্ষণীয় করার জন্য রুদ্রাক্ষ কিংবা কড়ি বসানো হয় এবং নানা ধরনের পাথর কিংবা পুঁথি দিয়ে সাজানো হয়। জামদানি, সুতির কাপড় আমাদের ঐতিহ্য। গয়নায় মাধ্যমে তুলে ধরা হয় আমাদের ঐতিহ্যকে। এছাড়া গামছা কাপড় দিয়েও গয়না তৈরি করা হয়ে থাকে। দামে সাশ্রয়ী ও বহন করা সহজ বলে অনেকেই বেছে নিচ্ছে কাপড়ের গয়না। কাপড়ের যে শুধু মালা হয় তা নয়, কাপড়ের চুড়ি, আংটি, ঝুমকা তৈরি করা হয়। দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো যেমন আড়ং, অঞ্জনস, যাত্রা তারা তাদের কালেকশনেও কাপড়ের গয়না রেখে থাকে। গামছা কাপড় দিয়ে তৈরি করা গয়না বেশ ট্রেন্ডি। একরঙা শাড়ির সাথে অনেকেই রঙিন গামছা কাপড়ের গয়না বেছে নিয়ে থাকে।

পূজার সকালটা সাধারণত স্নিগ্ধ হয়, তাই সাজেও থাকা চাই স্নিগ্ধতা। পূজায় হালকা শাড়ি কিংবা সালোয়ার কামিজ পরলে তার সাথে বেছে নেওয়া যেতে পারে মানানসই কাপড়ের গয়না। পূজায় হালকা সাজের জন্য আরও বেছে নেওয়া যেতে পারে কাঠের গয়না। কাঠের গয়নায় নানা কারুকাজ করে আকর্ষণীয় করে তোলা হয়। কাপড়ের মতো কাঠের গয়নাতেও মোটিফ রাখা হয়। কাঠের গহনায় সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায় শিউলি, গোলাপ, শাপলা ফুল ইত্যাদির মোটিফ। এছাড়া কখনো পাখি, ময়ূর, মাছ ইত্যাদি ভিন্নধর্মী মোটিফ কাঠের গয়নার লক্ষ্য করা যায়। উৎসব পার্বণ ছাড়াও অনেকে নিত্যদিনের ব্যবহারের জন্য কাঠের মালা, লকেট ইত্যাদি বেছে নেয়। পূজাতে হালকা ধরনের গয়না পরতে চাইলে বেছে নিতে পারেন কাঠের গয়না।

জনপ্রিয়তা পাচ্ছে পিতলের গয়না। দেশীয় ব্র্যান্ড ছাড়াও অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন পেইজে পাওয়া যায় পিতলের ব্রেসলেট, চুরি, মালা, কানের দুল, আংটি ইত্যাদি। পিতলের গয়নার রঙ সোনালি হয়। তাই অনেকে সোনার বদলে পিতলের গয়না বেছে নেয়। এছাড়া হাতা কাটা ব্লাউজ পরলে অনেকে পূজার দিন পিতলের বাজু পরে থাকে। তবে পিতলের গয়না নিয়ে অনেকের অভিযোগ থাকে। এটি খুব সহজে কালো হয়ে যায়। তাই খুব যত্ন সহকারে পিতলের গয়না তুলে রাখা উচিত।

পিতলের গয়না যেকোনো পোশাকের সাথে মানানসই। পিতলের গয়না আকর্ষণীয় করার জন্য এর মধ্যে মুক্তা পাথর ইত্যাদি বসানো হয়। হালকা গড়নের হওয়ার কারণে অনেকেই শাড়ি কিংবা সালোয়ার কামিজের সঙ্গে বেছে নিয়ে থাকে পিতলের ব্রেসলেট কিংবা হালকা মালা। কয়েক বছর ধরে কালেকশনে সকলেই রাখার চেষ্টা করে পিতলের গয়না। এ ধরনের ধাতু খুব সহজে কালো হয়ে যায় বলে বলা হয় সোনার গয়নার থেকেও বেশি যত্ন সহকারে রাখা উচিত। পিতলের গয়না কে ক্রাফট, বিশ্বরঙ কিংবা অনলাইন ভিত্তিক পেইজ কারখানা ইত্যাদিতে পাওয়া যাবে। যদি গয়না কালো হয়ে যায় তাহলে লবণ ও লেবুর রস দিয়ে কিছুক্ষণ ঘষে নিলে অনেক সময় কালো দাগ কিছুটা দূর হয়।

তরুণীদের পছন্দ ব্ল্যাক পলিশ গয়না। সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে বড় ব্ল্যাক পলিশ ঝুমকা। এ ধরনের বড় ঝুমকা পরিধান করলে সাধারণত আর কোনো কিছুই পরা লাগে না। যেকোনো মার্কেট থেকে শুরু করে অনলাইন ভিত্তিক পেইজ, সব জায়গায়ই ব্ল্যাক পলিশ গয়নার সমাহার। ব্ল্যাক পলিশ ঝুমকার মধ্যে ময়ূর, ফুল ইত্যাদির নকশা করা হয়। ডিজাইনের উপর ভিত্তি করে ১০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে এ ধরনের ঝুমকা পাওয়া যায়। পূজার দিন কোনো হালকা পোশাকের সঙ্গে ভারী ঝুমকা পরিধান করতে চাইলে বেছে নেওয়া যেতে পারে ব্ল্যাক পলিশ ঝুমকা।

দেশীয় উপাদান কড়ি, রুদ্রাক্ষ, ঝিনুক ইত্যাদি দিয়ে তৈরি গয়না অনেকে বেছে নেয় পূজার জন্য। পূজার সাজের সঙ্গে দেশীয় ঐতিহ্য খুব ভালোভাবে যায়। তাই অনেকের ইচ্ছা থাকে দেশীয়ভাবে নিজেকে সাজানো। পোশাকের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষ বেছে নেয় দেশীয় পোশাক তার সাথে মানানসই দেশীয় গয়না। বাঙালি নারীদের সাজের মধ্যে চুড়ি থাকবে না, তা হতে পারে না। তাই অনেকের কাছে পূজার মূল আকর্ষণ হাত ভরা কাচের চুড়ি। কাচের চুড়ির রিনিঝিনি শব্দে মন ভরে ওঠে। কাচের চুড়ি ছাড়াও অনেকে মালা কিংবা দুলের সঙ্গে মিল রেখে সেট অনুযায়ী চুড়ি পরে থাকে।

দেশে ডিজাইনাররা তৈরি করছে বিভিন্ন জার্মান সিলভার গয়না। যারা পূজার দিন একটু ভিন্নধর্মী কিছু পরতে চান তারা বেছে নিতে পারেন এ ধরনের গয়না। রঙ্গবতী, পারপেল বক্স এমন বিভিন্ন পেজে ধরনের গয়না পাওয়া যায়। ডিজাইনাররা নিজের সৃজনশীলতা দিয়ে এ ধরনের গয়না তৈরি করেন বলে এগুলো কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী। মানের উপর নির্ভর করে এর দাম কিছুটা বেশি হলেও এ ধরনের গয়না আপনাকে অনেক আভিজাত লুক দিতে পারে।

যদি একটু ভিন্ন ধরনের কিছু চান তাহলে বেছে নিতে পারেন কুন্দনের দুলের গয়না। পাকিস্তানি ও ভারতীয়রা এ ধরনের গয়না সবচেয়ে বেশি পরলেও আমাদের দেশেও কুন্দনের দুলের গয়না অনেক বেশি জনপ্রিয়। যে ধরনের গয়নায় বেছে নেন না কেন, খেয়াল রাখতে হবে তা যেন আপনার পোশাক এবং ব্যক্তিত্বের সাথে মানানসই হয়।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: ফ্যাশন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

two + fifteen =