প্যান্ট ঝড় থামিয়ে সিরিজ জয়ের অবস্থানে অস্ট্রেলিয়া

সালেক সুফী

এসসিজির বদলে যাওয়া পেসি বাউন্সি উইকেটে অস্ট্রেলিয়া ভারতের সমশক্তির দুটি দলের মধ্যে অনুষ্ঠানরত বর্ডার গাভাস্কার টেস্ট সিরিজের গুরুত্বপূর্ণ ৫ম টেস্ট  দ্বিতীয় দিনশেষে ব্যাট বলের তীব্র লড়াইয়ে জমে উঠেছে। দুই দলের প্রথম ইনিংস স্বল্প রানের শেষ হওয়ার পর ভারত দ্রুত উইকেট হারিয়ে কোনঠাসা হয়ে পড়লে মারকুটে ভারতীয় ব্যাটসম্যান ঋষভ প্যান্ট উইকেটে এসে ঝড় তোলে। চার ছয়ের তান্ডবে ৩৩ বলে ৬১ রান তুলে অস্ট্রেলিয়াকে চিন্তায় ফেলে। কামিন্স প্যান্টকে ফিরিয়ে ঝড় থামানোর পর দিনশেষে ভারত সংগ্রহ করেছে ১৪১/৬. লিড ১৪৫ হাতে আছে ৪ উইকেট। আহত জাসপ্রিত বুমরাহ দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিং করতে পারবে কিনা নিশ্চিত না. ভারতের প্রয়োজন অন্তত ২০০ রানের লিড. কঠিন এই উইকেটে রান করা সহজ না সেটি ইতিমধ্যে প্রমাণিত। গোটা সিরিজের মত কাল সিরিজের শেষ দিনও উপভোগ্য হবে.

২-১ ম্যাচে এগিয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে ভারতের সংগ্রহীত ১৮৫ রানের জবাবে নিজেরা ১৮১ রানে গুটিয়ে যায়।  দিনশেষে ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪১/৬ করে ভারত এগিয়ে ১৪৫।রানে।

অস্ট্রেলিয়া এই টেস্ট জয় করলেই চলতি পর্যায়ের আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ২০২৫ লর্ডসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে। একই সঙ্গে জয় করবে বর্ডার গাভাস্কার টেস্ট সিরিজ। ভারতের জন্য টেস্ট জয় অনেক জরুরি। জয়ী হলে ওদের ক্ষীণ সম্ভাবনা থাকবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল খেলার। এমনকি টেস্ট অমীমাংসিত থাকলেও সিরিজ পরাজিত হবে ভারত। কিন্তু টেস্টের বর্তমান পরিস্থিতিতে বৃষ্টি বিঘ্ন না হলে জয় পরাজয় নির্ধারিত হবে সেটি  নিশ্চিত.

আজ দ্বিতীয় দিন সকালে ১/৯ শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। শুরুতে প্রতিআক্রমণ করে ভারত আক্রমণকে ভড়কে দিতে চেষ্টা করে কনস্টাস।  কিন্তু বুমরা নেতৃত্বে ভারতের বোলাররা উইকেটের সহায়তা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের কোনঠাসা করে ফেলে। মার্নাস লাবুচাঙ ,ট্রাভিস হেড ,কনস্টাস দ্রুত ফিরে গেলে একপর্যায়ে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর দাঁড়ায় ৪/৩৯. স্টিভ স্মিথ এই টেস্টে অভিষিক্ত বিউ ওয়েবস্টারকে নিয়ে রুখে দাঁড়ায়। পুরো সিরিজ জুড়ে ভালো ব্যাটিং করা স্মিথ এবং অভিষিক্ত ওয়েবস্টার ৫ম উইকেট জুটিতে ৫৭ রান যোগ করার পর প্র্যাডিশ কৃষ্ণার বলে টেস্ট ক্রিকেটে ১০,০০০ রানের মাইলস্টোন থেকে ৫ রান দুরে থাকা অবস্থায় স্মিথ আউট হয়ে গেলে বাকি সময় ওয়েবস্টার এক প্রান্ত আগলে রেখে লড়াই করে. ভারত আক্রমণের প্রাণ ভোমরা জাসপ্রিত বুমরাহ আহত হয়ে বিদায় নিলেও সিরাজ ( ৩/৫১) , প্র্যাডিশ কৃষ্ণা ( ৩/৪২) এবং নীতিশ কুমার  রেড্ডি ( ২/৩২) দুর্দান্ত বোলিং করে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস ১৮১ রানে গুটিয়ে দেয়।  অভিষিক্ত বিউ ওয়েবস্টার আস্থার সাথে খেলে ৫৭ রান করে দলের ব্যাটিং ধস প্রতিরোধ করলেও আলেক্স ক্যারি *(২১) ছাড়া বাকি কেউ ভারতের উজ্জীবিত বোলিং মোকাবিলা করতে পারে নি. ভারত প্রথম ইনিংসে ৪ রানে এগিয়ে থাকার মনস্তাত্ত্বিক সুবিধা অর্জন করে. কিন্তু খেলার এই পর্যায়ে বুমরার আহত হয় টেস্ট ম্যাচ জয় করে সিরিজ বাঁচানোর লড়াই ভারতের জন্য কঠিন করে তুলেছে।

দ্বিতীয় ইনিংসে ঝড়ের গতিতে সূচনা করে যশোভি জাসোয়াল।  মিচেল  স্টার্কের প্রথম ওভারেই চারটি বাউন্ডারি আদায় করে আনে উড়ন্ত সূচনা।  ৭ ওভারে সংগ্রহীত হয় ৪২ রান.কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান বোলিং আক্রমণে ক্রমাগত অপরিহার্য হয়ে ওঠা স্কট বোলান্ড আক্রমণে এসেই পর পর রাহুল এবং জাসোয়ালকে ফেরত পাঠিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনে. এই টেস্ট সিরিজে আক্রমণে এসে প্রথম ওভারে উইকেট তুলে নেয়া বোলান্ড অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছে। অনেক আশা ছিল অস্ট্রেলিয়ায় সম্ভবত শেষ টেস্ট ইনিংস খেলা বিরাট কোহলি জ্বলে উঠবে। কিন্তু ভারত সমর্থকদের হতাশ করে কোহলি বোল্যান্ডের লেংথ বলে সিরিজে একই ধারায় স্লিপে ক্যাচ তুলে ভারতকে বিপদে ফেলে। ভালো খেলতে থাকা শুভমান গিল ধৈর্য্য হারিয়ে অভিষিক্ত ওয়েবস্টারের প্রথম বল অকারণে আক্রমণ করে অসময়ে উইকেট রক্ষক কারীর হাতে ধরা পড়লে ভারতের স্কোর দাঁড়ায় ৪/৭৮. দলের এই কোন থাকা অবস্থায় ঋষভ প্যান্ট রুদ্র মূর্তি ধারণ করে. ছয় চার আর চার ছয়ে ৩৩ বলে ৬১ রানের ইনিংসটি থামাতে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ককে ব্যাতিব্যাস্ত মনে হয়. অবশেষে নিজে আক্রমণে এসে প্যান্টকে ফিরিয়ে কামিন্স অস্ট্রেলিয়াকে খেলায় ফিরিয়ে আনে।  দিনশেষে বোলান্ড নীতিশ কুমারের উইকেট তুলে নিলে ভারতের স্কোর দাঁড়ায় ১৪১/৬. চার উইকেট হাতে নিয়ে কাল ভারত চাইবে লিড অন্তত ২০০ পর্যন্ত নিয়ে যেতে।

ম্যাচ পরিস্থিতি ,উইকেটের অবস্থা দেখে মনে হয় অস্ট্রেলিয়া হয়তো টেস্ট জিতে সিরিজ জয় এবং আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলা নিশ্চিত করতে চলেছে। তবে গৌরবোজ্জ্বল অনিশ্চয়ইতার ক্রিকেটে নাটকীয় কিছু হতেও পারে। কিন্তু সেটি অনেকাংশে নির্ভর করবে ভারতের মূল অস্ত্র জাসপ্রিত বুমরা বোলিং করতে পারবে কিনা।

যাইহোক টেস্টের ফলাফল মেলবোর্ন এবং সিডনিতে পরপর দুটি অবিস্মরণীয় টেস্ট ম্যাচ দেখেছে ক্রিকেট প্রেমিকেরা। ভাবনার সময় এসেছে বর্তমান অযথায় সীমিত সময়ে ৫ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলোয়াড়দের শারীরিক সুস্থতার উপর চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়ছে কিনা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

seven + nine =