প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপে তামিম অবসর সংকটের আপাত সমাধান

সালেক সুফী

আফগানিস্তানের সঙ্গে চলমান ওডিআই সিরিজের প্রথম ম্যাচে শেষে চটজলদী সংবাদিক সম্মেলন ডেকে ওডিআই অধিনায়নক তামিম ইকবালের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ ক্রিকেট অঙ্গনকে বিস্মিত করেছিল। দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনাটির আপাত সমাধান হয়েছে কিংবদন্তি ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা সংসদ সদস্যের উদ্যোগে ক্রীড়া অনুরাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপে। তামিম ঘোষিত অবসর থেকে ফিরে আসার ঘোষণা দিয়েছে।  তবে চলতি সিরিজ দেড় মাস বিশ্রাম শেষে তামিম এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপে দলকে যথারীতি নেতৃত্ব দিবে।

বাংলাদেশের ক্রীড়া অনুরাগী সবাই ক্রিকেটে ঘটে যাওয়া এই সংকটের দ্রুত সমাধানে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে। তবে এটিও ভুলে গেলে চলবে না তামিমের অবসর ঘোষণা অবশ্যই দীর্ঘদিনের জমে থাকা খেলোয়াড়ের সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের এবং বিশেষত টিম ব্যবস্থাপনার সমন্বয়ের অভাবে সৃষ্ট ক্ষোভের বিস্ফোরণ। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বিষয়টির আপাত সমাধান হলেও আসল সমস্যার স্থায়ী  সমাধান না হলে ধূমায়িত ক্ষোভ আবারো বিস্ফোরিত হতে পারে।

তামিম, মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক, রিয়াদ সহ ক্রিকেটারদের সঙ্গে বিসিবি, নির্বাচকমণ্ডলী বা টিম ব্যাবস্থাপনার সুসম্পর্ক নেই এটি নানাভাবে প্রকাশিত। আর তাই বেশ কিছু দিন ধরে খেলোয়াড় বিসিবি ব্যাবস্থাপনার অনাকাঙ্ক্ষিত ট্রিটমেন্টের শিকার হয়েছে। কিংদন্তি ক্রিকেটার মাশরাফি ক্রিকেটে থেকেও নেই।

নীরব ঘাতক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ দীর্ঘ বঞ্চনার প্রতিক্রিয়ায় জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে টেস্ট শত রান কয়েও অবসর ঘোষণা দেয়। তামিম, মুশফিক সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও টি২০ ফরমেট থেকে সরে দাঁড়ায়।  অপরিহার্য রিয়াদকে ওডিআই থেকে আড়ালে রাখা হয়েছে। এগুলো সবই বিসিবির অপেশাদার ভূমিকার কারণে এবং হেড কোচের অপরিমিত হস্তক্ষেপের পরিণতি। এই বিষয়গুলোর স্থায়ী সমাধান না হলে ক্রিকেট অঙ্গনের গভীর ক্ষত উপশম হবে না।

বাংলাদেশের ক্রিকেটের বর্তমান অবস্থানের সবচেয়ে বড় অবদান ক্রিকেট সমাজের যার পুরোধা বিশ্বমানের কিছু খেলোয়াড়।  এখানে অবশ্যই তামিম অন্যতম। মাশরাফি, তামিম, রিয়াদ সহ খেলোয়াড়রা খেলোয়াড়ি জীবন শেষে সম্মানজনকভাবে মাঠ থেকে বিদায় নিবেন সেটি কাঙ্ক্ষিত।

কেন একজন কিংবদন্তি খেলোয়াড়কে অশ্রু সজল হয়ে অসময়ে বিদায় নিতে হবে? কেন অপরিহার্য খেলোয়াড়কে দলের বাইরে রাখা হবে? কেন বিসিবি দীর্ঘ সময়েও পর্যাপ্ত সংখ্যায় বিকল্প খেলোয়াড় সৃষ্টি করতে পারবে না ? বিদেশি প্রশিক্ষক হয়তো প্রয়োজন আছে।  কিন্তু তাদের কাজের নির্দিষ্ট সীমানা কেন নির্ধারিত থাকবে না ? কেন বিসিবি প্রধানকে অশালীন ভাষায় খেলোয়াড়দের অসম্মান জানাতে হবে?

বাংলাদেশ ক্রিকেটের শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে উলিালখিত প্রশ্নগুলোর স্থায়ী সমাধান চাই। না হলে এই দেশে আর মেধাবী খেলোয়াড় সৃষ্টি হবে না।  বাংলাদেশ বিশ্বঅঙ্গনে শ্রেষ্টতর লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়বে।  পরিশেষে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতার প্রশংসা করি এবং একই সঙ্গে মাশরাফিকেও ধন্যবাদ তার চিরায়ত শুভ ভূমিকার জন্য।

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

19 + seventeen =