প্লট বরাদ্দে জালিয়াতি: হাসিনা, জয় ও পুতুলসহ ২২ জনের সশ্রম কারাদণ্ড ও জরিমানা

‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে সরকারি জমি বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা পৃথক তিনটি মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ২২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। খবর বাসস

এর মধ্যে পৃথক তিন মামলায় শেখ হাসিনার সাত বছর করে ২১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া এই তিন মামলায় তার এক লাখ টাকা করে তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাকে আরো ১৮ মাসের কারাভোগ করতে হবে।

শেখ হাসিনার ছেলে ও  সাবেক আইসিটি উপদেষ্টা সাজীব ওয়াজেদ জয়কে এক মামলায় পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাকে আরো ৬ মাসের কারাভোগ করতে হবে।

শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের এক মামলায় পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাকে আরো ৬ মাসের কারাভোগ করতে হবে।

আজ (বৃহস্পতিবার) বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন এ রায় ঘোষণা করেন।

এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনের পৃথক দুই মামলায় ছয় বছর করে ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা করে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাকে আরো ১২ মাসের কারাভোগ করতে হবে।

সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের পৃথক তিন মামলায় ৬ বছর করে ১৮ বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ করে তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাকে আরো ১৮ মাসের কারাভোগ করতে হবে।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকারের পৃথক তিন মামলায় ৬ বছর করে ১৮ বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা করে তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাকে আরো ১৮ মাসের কারাভোগ করতে হবে।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিনের পৃথক তিন মামলায় ৬ বছর করে ১৮ বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা করে তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাকে আরো ১৮ মাসের কারাভোগ করতে হবে।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদারের পৃথক তিন মামলায় ১ বছর করে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাকে আরো তিন মাসের কারাভোগ করতে হবে।

রাজউক-এর সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞার পৃথক তিন মামলায় ৫ বছর করে ১৫ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে দেড় লাখ টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাকে আরো ৯ মাসের কারাভোগ করতে হবে।

রাজউকের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ নাসির উদ্দীনের পৃথক তিন মামলায় তিন বছর করে ৯ বছরের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা করে ৬০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাকে আরো ৬ মাসের কারাভোগ করতে হবে।

রাজউক-এর সাবেক সদস্য মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.) এর পৃথক তিন মামলায় তিন বছর করে ৯ বছরের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার করে ৬০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাকে আরো ৬ মাসের কারাভোগ করতে হবে।

রাজউক-এর সাবেক সদস্য কবির আল আসাদের এক মামলায় তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও বিশ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাকে আরো দুই মাসের কারাভোগ করতে হবে।

রাজউক-এর সাবেক সদস্য তন্ময় দাসের পৃথক দুই মামলায় তিন বছর করে ৬ বছরের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা  করে ৪০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাকে আরো চার মাসের কারাভোগ করতে হবে।

রাজউক-এর সাবেক সদস্য মো. নুরুল ইসলামের পৃথক দুই মামলায় তিন বছর করে ৬ বছরের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার  করে ৪০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাকে আরো চার মাসের কারাভোগ করতে হবে।

রাজউক-এর সাবেক পরিচালক শেখ শাহিনুল ইসলামের এক মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ড ও বিশ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাকে আরো দুই মাসের কারাভোগ করতে হবে।

রাজউক-এর সাবেক সহকারী পরিচালক কামরুল ইসলামের এক মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ড ও বিশ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাকে আরো দুই মাসের কারাভোগ করতে হবে।

রাজউক-এর সাবেক উপ-পরিচালক মো. হাফিজুর রহমানের এক মামলায় এক বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাকে আরো এক মাসের কারাভোগ করতে হবে।

রাজউক-এর সাবেক উপ-পরিচালক হাবিবুর রহমান সবুজের এক মামলায় এক বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাকে আরো এক মাসের কারাভোগ করতে হবে।

রাজউক-এর সাবেক উপ-পরিচালক নায়েব আলী শরীফের পৃথক দুই মামলায় এক বছর করে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা করে দশ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাকে আরো দুই মাসের কারাভোগ করতে হবে।

রাজউক-এর সাবেক সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলামের এক মামলায় এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাকে আরো এক মাসের কারাভোগ করতে হবে।

রাজউক-এর সাবেক সদস্য খুরশীদ আলমের পৃথক তিন মামলায় এক বছর করে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা করে ১৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাকে আরো তিন মাসের কারাভোগ করতে হবে।

এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় পৃথক তিন মামলা হতে জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকারকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

এর আগে ২৩ নভেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে এই তিন মামলায়  রায় ঘোষণার জন্য ২৭ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে গত ১৪ জানুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আট জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন দুদক-এর উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন।

তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদক-এর সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া। এই মামলায় ২৯ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন।

শেখ হাসিনা ছাড়াও মামলায় অপর আসামিরা হলেন— জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, রাজউক-এর সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, রাজউক-এর সাবেক সদস্য শফি উল হক, খুরশীদ আলম, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), উপ-পরিচালক নায়েব আলী শরীফ, জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব শহিদ উল্লাহ খন্দকার এবং সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।

অপরদিকে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে ১৪ জানুয়ারি সজীব ওয়াজেদ জয় ও শেখ হাসিনাসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় মামলাটি করেন দুদক-এর সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান।

তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ আরো দু’জনসহ মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারি পরিচালক  এস এম রাশেদুল হাসান।  এ মামলায় আদালতে  ২৩ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা ও জয় ছাড়াও এ মামলায় চার্জশিটভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন— জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব শহিদ উল্লাহ খন্দকার, রাজউক-এর সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, পরিচালক কামরুল ইসলাম, উপ-পরিচালক নায়েব আলী শরীফ, সদস্য মো. নুরুল ইসলাম, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।

এছাড়াও, রাজধানীর পূর্বাচলে ১০ কাঠার প্লট জালিয়াতির ঘটনায় গত ১২ জানুয়ারি দুদক-এর সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদি হয়ে শেখ হাসিনা ও পুতুলসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে তৃতীয় মামলাটি করেন।

তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ শেখ হাসিনা ও পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদক-এর সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া।  এই মামলায় আদালতে ২৮ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

মামলার অপর ১৬ আসামি হলেন— জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউক-এর সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, রাজউক-এর সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, কবির আল আসাদ, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), মো. নুরুল ইসলাম, পরিচালক শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপ-পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান ও হাবিবুর রহমান, তদন্ত প্রাপ্তে আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।

গত ৩১ জুলাই ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন এই তিন মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

four × 4 =