ফ্রেমবন্দি

নিউ ইয়র্কে তিন বন্ধুর আড্ডা

এক সময় ক্যামেরার সামনে নিয়মিত আসতেন ফেরদৌস, মৌসুমী ও ঋতুপর্ণা। মৌসুমী ঢালিউডে ব্যস্ত থাকলেও ফেরদৌস ও ঋতুপর্ণা দুই বাংলাতেই সমানতালে কাজ করতেন। ওই জায়গা থেকে দুজনের সঙ্গেই পর্দায় জমজমাট ছিল ফেরদৌসের রসায়ন। সহকর্মীর গণ্ডি ছাড়িয়ে সম্পর্ক বন্ধুত্বের রূপ নিয়েছিল। তবে আজকাল তিনজনের কাউকেই সেভাবে চলচ্চিত্রে দেখা যায় না। অভিনেতা থেকে নেতা হয়েছেন ফেরদৌস। এফডিসির চেয়ে সংসদে বিচরণ তার বেশি। আর মৌসুমী আছেন যুক্তরাষ্ট্রে। অন্যদিকে ঋতুপর্ণা এপার বাংলার সিনেমায় নিয়মিত কাজ করেন না। টলিউডেও কাজ করেন বেছে বেছে। তাই ক্যামেরায় আগের মতো আর একসঙ্গে দেখা যায় না এই তিন গুণী অভিনয়শিল্পীকে। সম্প্রতি তাদের এক জায়গায় এনেছে সুচিত্রা সেন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত এ উৎসবে যোগ দিতে গিয়েছিলেন ফেরদৌস। ঋতুপর্ণা গিয়েছিলেন শুভেচ্ছা দূত হয়ে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে যুক্ত হয়েছিলেন মৌসুমী। সেখানেই  পর্দার এই ত্রিরত্ন একসাথে হন লেন্সবন্দি।

আমেরিকার লং আইল্যান্ডে বসবাস করেন মৌসুমী। বন্ধু ফেরদৌস আসবেন শুনে সে বাড়িতে পড়েছিল সাজ সাজ রব। অতিথি ফেরদৌসকে নানা রকম পদ রেঁধে খাইয়েছেন মৌসুমী। সে খবর ঘটা করে নায়ক জানিয়েছেন সামাজিক মাধ্যমে। মৌসুমীর খাওয়ার টেবিলে বসে লেন্সবন্দি হয়েছিলেন তিনি। তার ছবি সোশ্যাল হ্যান্ডেলে প্রকাশ করে জানিয়েছেন আতিথেয়তার কথা। ক্যাপশনে লিখেছেন, মৌসুমী আমার প্রিয় মানুষ এবং ভীষণ কাছের একজন। অনেক দিন পর সেই মানুষটার সঙ্গে দেখা। কী যে ভালো লেগেছে, কী যে অসাধারণ সময় কেটেছে, লিখে বোঝাতে পারব না। মৌসুমী নিজ হাতে রান্না করেছে। আমার এই নতুন জীবন (সংসদ সদস্য) নিয়ে মৌসুমীর কত কথা, কত প্রশ্ন, কত যে আগ্রহ! গাড়িতে উঠে অনেক দূর এগিয়ে পেছনে ফিরে দেখি, প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে তাকিয়ে আছে সে। এই সম্পর্কগুলো অটুট, এই বন্ধনগুলো দৃঢ়, এই স্মৃতিগুলো অমলিন।’ ফেরদৌসের কথায় স্পষ্ট যে সেই সন্ধ্যায় বন্ধুত্বটা বেশ জমিয়ে উপভোগ করেছেন তারা।

‘মা লো মা’ গান নিয়ে বিতর্ক

প্রকাশের পর শ্রোতারা লুফে নিয়েছে কোক স্টুডিও বাংলার তৃতীয় সিজনের দ্বিতীয় গান ‘মা লো মা’। ছাদ পেটানোর স্মৃতি এবং লোকগান ও র‌্যাপের মিশেলে এ পরিবেশনে সবাই যখন মুগ্ধ তখন হঠাৎ ছন্দপতন ঘটে। গানটির গীতিকারের নাম নিয়ে মিথ্যাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়। কোক স্টুডিও বাংলা গানটির গীতিকার হিসেবে খালেক দেওয়ানের নাম উল্লেখ করলেও দাবি করা হয় তথ্যটি ভুল। গানটি নাকি নেত্রকোনার বাউল রশিদ উদ্দিনের লেখা। তাই নিয়ে চলছে বাদানুবাদ। একদল বলছেন, গানটি রশিদ উদ্দিনের লেখা। আরেক দলের দাবি গানটি খালেক দেওয়ানের। খালেক দেওয়ানের নাতি সাগর দেওয়ান দাবি করেছেন গানটি খালেক দেওয়ানের লেখা। তার কথায়, ‘যারা এই দাবি করছেন আমরা তাদের আহ্বান জানাচ্ছি তাদের কাছে যদি কোনো প্রমাণ থাকে সেগুলো উপস্থাপন করতে। গানটি যখন রেকর্ড করা হচ্ছিল তখনও আহ্বান জানিয়েছি। বারী ভাইয়ের কণ্ঠে গানটি আমি শুনিনি। যখন কোক স্টুডিও বাংলায় গানটি রেকর্ড করা হচ্ছিল তখন গানটি শুনেছি। বারী ভাইও (সংগীতশিল্পী বারী সিদ্দিকী) রশিদ উদ্দিনের নামে গানটি গেয়েছেন। কেন গেয়েছেন আমি জানি না। এর আগে পরে বাউল মিরাশ উদ্দিনের অনেক গান বারী ভাই রশিদ উদ্দিনের নামে ঢাকা শহরে ঢুকিয়েছেন। হয়তো গানের ইতিহাস সম্পর্কে জানতেন না। না জেনে করতে পারেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কেন আমাদের মা-বাবা, গ্রামবাংলার যারা আছেন, মুরুব্বিরা যারা আছেন তাদের জিজ্ঞেস করলে সবাই একবাক্যে বলবেন এটা খালেক দেওয়ানের গান। জন্মের পর থেকেই এই গান খালেক দেওয়ানের নামে শুনে আসছি। তিনি তো পালাকার ছিলেন। মঞ্চে শতাধিকবার এই গানটি গেয়েছেন। ৫০-৬০ বছর আগের কথা বলছি। এছাড়া ১৯৬০ সালে হিজ ভয়েস মাস্টার কোম্পানিতে এই গান রেকর্ড করা হয়েছিল। সে সময় নিজের নামেই গানটি গেয়েছিলেন খালেক দেওয়ান। ইউটিউবে খুঁজলে এখনও পাওয়া যাবে।’

এদিকে নেত্রকোনায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সেখানকার সবাই গানটিকে রশিদ উদ্দিনের গান হিসেবেই জানেন। অধ্যাপক যতীন সরকারসহ অনেকেই এরকম মন্তব্য করেছেন। এদিকে রশিদ উদ্দিন রচিত গানের বই এবং খালেক দেওয়ানের গানের বইতেও গানটি রয়েছে। জানা গেছে, অল্প কয়েকটি লাইন ও শব্দ ছাড়া দুটি গানের বাকি কথাগুলো এক। রচিয়তা দুজন বেঁচে না থাকায় এই রহস্য ভেদ করা আসলেই কঠিন হয়ে পড়েছে। গানটির রচয়িতা আসলে কে সে ভার এখন কপিরাইট অফিসের। দুইপক্ষের উপযুক্ত তথ্য প্রমাণাদি যাচাই করে তারাই বলতে পারবে গানটি কার।

সরকারি জমি পেল অভিনয়শিল্পী সংঘ

দেশের চলচ্চিত্র ও শিল্পীদের সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি রাজনৈতিক দলগুলোর মতো হট্টগোলে ব্যস্ত। এ ওর পেছনে লেগে থাকা, লেজুড়বৃত্তি এসব নিয়ে ব্যস্ত। সেখানে ছোট পর্দার অভিনয়শিল্পী সংঘ যেন মুদ্রার ওপিঠ। আহসান হাবিব নাসিম ও রওনক হাসানের নেতৃত্বে সবাই এক হয়েছেন। ব্যক্তি স্বার্থের দিকে না তাকিয়ে সংগঠনটি শিল্পীদের কল্যাণে কাজ করছে। শিল্পীদের পেশাগত সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এরইমধ্যে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এবার সংগঠনটি যেন আরও একধাপ এগিয়ে গেল। তাদের অনেকদিনের স্বপ্ন ছিল ‘অ্যাক্টরস হোম’। যেখানে শিল্পীরা নিজেদের মতো করে অবসর কাটাবে, বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেবে, বিভিন্ন সভা বৈঠকগুলো আয়োজন করা হবে। এবার এ স্বপ্নের বাস্তবায়ন হওয়ার পথে। এরইমধ্যে ভবনটির জন্য রাজধানীর আফতাব নগরে ৩ কাঠা সরকারি জমি বরাদ্দ পেয়েছে সংগঠনটি। সংগঠনটির সভাপতি নাসিম জমি পাওয়ার তথ্য জানিয়ে বলেন, শিল্পীরা চিকিৎসা সেবাসহ আরও বেশ কিছু সুবিধা যেন পান সে বিষয়েও পরিকল্পনা আছে তাদের। সাধারণ সম্পাদক রওনক জানান, ‘চেইনশপ স্বপ্ন’র সঙ্গে আমাদের একটি চুক্তি হয়েছে। বার্ধক্যের কারণে কাজ করতে পারছেন না, এমন ২০ জন অভিনয়শিল্পীর প্রত্যেককে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকার বাজার সরবরাহ করা হবে। দ্রুতই আমরা সেই শিল্পীদের তালিকা তৈরি করব।’

জমিটি বুঝে পেয়ে সেখানে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। সভাপতি আহসান হাবিব নাসিম জানান, ‘বিষয়টি  অবশ্যই আমাদের জন্য আনন্দের। দীর্ঘদিন বিষয়টি নিয়ে চেষ্টা চলছিল। অবশেষে জায়গা বুঝে পাওয়াটা অভিনয়শিল্পী সংঘের একটি সফলতা বলে মনে করছি। শিল্পীদের প্রশিক্ষণ, মিটিং, একসঙ্গে সময় কাটানোসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য ব্যবহৃত হবে এটি। ওই জায়গা থেকে আজ আমাদের আনন্দের দিন।’

৮ শিল্পীকে নিয়ে আসিফ ইকবালের ঐশ্বর্য

প্রযুক্তির আগ্রাসনে হারিয়ে গেছে অনেক কিছু। এরমধ্যে অন্যতম গানের অ্যালবাম। একটা সময় ছিল ফিতার ক্যাসেটে বন্দী থাকতো গান। আজকাল অনলাইনে সহজলভ্য হওয়ায় তা বিলুপ্ত। বিকল্প হিসেবে ইউটিউব কিংবা অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে সিঙ্গেল ট্র্যাক মুক্তিতে অভ্যস্ত শিল্পীরা। নতুন প্রজন্ম তো ভুলেই গেছে অ্যালবাম প্রথার কথা। এদিকে নন্দিত গীতিকবি আসিফ ইকবাল আবার অ্যালবামের সময়ের। সে যুগে দেশের ডাকসাইটে অনেক গায়কই তার গান কণ্ঠে তুলেছেন। আজকাল তিনিও ইউটিউবে অভ্যস্ত। হয়তো তারপরও ছাড়তে পারেননি অ্যালবামের মায়া। তাই দেশের নামকরা ৮ জন শিল্পীকে নিয়ে তৈরি করছেন গানের অ্যালবাম। সবগুলো গানের কথা লিখেছেন তিনি নিজেই। সুর ও সংগীত পরিচালনায় আছেন শাহবাজ খান পিলু, মীর মাসুম ও কিশোর দাস। কণ্ঠ দিয়েছেন সৈয়দ আব্দুল হাদী, তপন চৌধুরী, কুমার বিশ্বজিৎ, সামিনা চৌধুরী, আগুন, শাফিন আহমেদ, পার্থ বড়ুয়া ও বাপ্পা মজুমদার।

অ্যালবামটির নাম ‘ঐশ্বর্য’ রাখার কারণ ব্যাখ্যা করে আসিফ বলেন, বাংলা গানের ইতিহাস যখন লেখা হবে, তখন এই মানুষগুলোকে আমাদের গানের ঐশ্বর্য হিসেবে ধরা হবে। সেই ভাবনা থেকেই তাদের নিয়ে এই অ্যালবাম করা এবং নামকরণের সার্থকতা খুঁজে পাওয়া। এই নন্দিত শিল্পীদের ব্যাপারে তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের আরও আগ্রহী করে তোলা এবং পুরানো শ্রোতাদের নস্টালজিয়ার একটা সুবাতাস বইয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে এই অ্যালবামটির উদ্যোগ নিয়েছিলাম। আর লিরিক্যাল ভিডিও প্রকাশ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, গানের কথা-সুর-গায়কিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া। আশা করি, শ্রোতাদের বেশ ভালো লাগবে।’

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: ফ্রেমবন্দি

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

nineteen + ten =