বইমেলায় নতুন মাত্রা মেট্রোরেল

মাহবুব আলম

এবার শুরুতেই একুশের বইমেলা জমে উঠেছে। মেলার দ্বিতীয় দিন ছিল শুক্রবার, ছুটির দিন। রৌদ্রোজ্জ্বল দিন। সেই সাথে ছিল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শিশু প্রহর। এদিন মেলায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, শত শত মা-বাবা তাদের শিশু সন্তানদের নিয়ে মেলায় এসে এ স্টল থেকে ওই স্টলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আর ওদের মনের মতো বই খুঁজছেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল মেলা মাঠে শিশু-কিশোরদের এই আনন্দ উৎসব রীতিমতো দেখার একটা বিষয় হয়ে ওঠে। বিশেষ করে যখন দেখা গেল অনেক শিশু-কিশোর দল বেঁধে তাদের শিক্ষকদের সঙ্গে মেলা প্রাঙ্গণ মাত করে রেখেছে। শিশু প্রহরে শিশু-কিশোরদের বাড়তি আনন্দ দেওয়ার জন্য রয়েছে সিসিমপুর স্টল। যেখানে বাচ্চাদের জন্য আকর্ষণীয় সব মজার মজার বই সাজানো রয়েছে। একই সঙ্গে শিশুচত্বরে সিসিমপুরের প্রিয় চরিত্রগুলোর সঙ্গে দেখা হওয়ায় ছোট্টমণিরা ছিল দারুন খুশি।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল, তারপর সন্ধ্যে নামতেই মেলা প্রাঙ্গণে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। বইপ্রেমীদের ভিড়ে মেলার এ প্রান্ত ও প্রান্ত সর্বত্র সরগরম হয়ে ওঠে। সেইসাথে লেখক-কবি-শিল্পী-সাংস্কৃতিক কর্মীদের আগমন ঘটে। বিশেষ করে বিভিন্ন টেলিভিশনের লাইভ সম্প্রচার কেন্দ্র ও বই পরিচিতির জন্য নির্ধারিত স্থানে লেখক-কবিদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। দেখা যায় একের পর এক লেখক-কবি টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে উজ্জ্বল আলোয় মেলা নিয়ে তাদের মতামত তুলে ধরছেন। আবার কেউ বা তাদের সদ্য প্রকাশিত বই সম্পর্কে কিছু বলছেন। এক্ষেত্রে অবশ্য সুন্দরী নারী কবি-লেখকদেরই অধিক প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। কথায় আছে, লেডিস ফার্স্ট। সত্যিই তাই দেখা গেল মেলার দ্বিতীয় দিনে। অবশ্য, পরিচিত লেখক-কবি হলে তারা কেউই কখনো উপস্থিত হন না, শুক্রবারও হননি। শুধু লেখক-কবি-শিল্পী সংস্কৃতি প্রেমিক নয়, বিভিন্ন টেলিভিশনে প্রকাশকদেরও সাক্ষাৎকার অর্থাৎ মতামত নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে অবশ্য প্রকাশকদের নিজস্ব স্টলে গিয়েই তাদের মতামত নিয়েছেন বিভিন্ন টেলিভিশনের রিপোর্টার ও ক্যামেরাপার্সনরা। ছটা নাগাদ মৃদুল প্রকাশনার স্টলে গিয়ে দেখা গেল ওই স্টলের মালিক অর্থাৎ প্রকাশক শহিদুল ইসলাম একটা টেলিভিশনে মেলার পরিবেশ নিয়ে কথা বলছেন। তিনি এবারের মেলার বিষয়ে অত্যন্ত আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, দীর্ঘদিন বাদে এবার নির্বিঘ্ন পরিবেশে মেলা হচ্ছে। করোনার মতো মহাদুর্যোগের পাশাপাশি গত কয়েক বছর রাজনৈতিক সংঘাতের একটা আশঙ্কা নিয়ে মেলা করতে হয়েছে। এবার সেরকম কোনো আশঙ্কাই নেই।

মেলা এবার কেমন হবে? এ বিষয়ে একবাক্যে সবাই বলছেন, খুব ভালো হবে। অনেকেই বলছেন, শুরুটা যখন ভালো হলো আশা করি শেষটাও ভালো হবে। তবে অনেকে মেলার পরিছন্নতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিশেষ করে ধুলা নিয়ন্ত্রণে প্রতিবারের ব্যর্থতার কথা বলেছেন। সেইসঙ্গে দর্শনার্থীদের এখানে সেখানে এটা ওটা ফেলাতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে সকল প্রকাশক-শিল্পী-কবি-লেখক সামগ্রিকভাবে মেলার ব্যবস্থাপনার সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, বাংলা একাডেমির ক্ষুদ্র পরিসর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বৃহত্তর পরিবেশে যে মেলা হচ্ছে এটার জন্য আমরা গর্ববোধ করি। এ বিষয়ে কথা হয় কবি রফিক হাসান, কবি শাহীন চৌধুরী, কবি শহীদুল ইসলাম, বিজ্ঞান লেখক আব্দুল গাফফার রমি, প্রকাশক সৌরভ আলম সাবিদ, সুজন জাহাঙ্গীর, জাহাঙ্গীর বাবুসহ অনেকের সাথে। তারা একবাক্যে বলেছেন, এবারের মেলায় নতুন মাত্রা মেট্রোরেল।

এরা সঠিক কথাই বলেছেন। কারণ মেট্রোরেল বইমেলা ছুঁয়ে যায়। মেট্রোরেলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন বইমেলার মেইন গেটে; বাংলা একাডেমির ঠিক সামনে। বিশ্বের আর কোথাও ঠিক এমন একটি সুবিধা আছে কি না আমার জানা নেই। তাই নিঃসন্দেহে মেট্রোরেলের এই সুবিধা বইমেলাকে নতুন মাত্রা দেবে। দূরদূরান্তের বিশেষ করে উত্তরা মিরপুরের মানুষ ঘরে ফেরার বিড়ম্বনায় এতকাল আগে ভাগে মেলা প্রাঙ্গণ ত্যাগ করে শাহবাগে বাস ধরবার প্রাণান্তর চেষ্টা করেছে। এবার সেইসব বাসযাত্রীরা ঘরে ফেরার ভোগান্তিমুক্ত। তারা মেলা থেকে বের হয়েই তিন মিনিটের মধ্যেই মেট্রো ধরে পৌঁছে যাবেন যে যার গন্তব্যে। তা নিয়ে এক কবির মন্তব্য, আহা! কি মজা। সত্যিই মজা। এ বিষয়ে দর্শনার্থীরসহ বইমেলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, মানুষের সুবিধার জন্য বইমেলা চলাকালীন সময়ে মেট্রো রাত পর্যন্ত চালু রাখা হোক। এতে করে যাতায়াত সুবিধা পাবেন সবাই। দূর-দূরান্ত থেকে আসতে যথেষ্ট ভোগান্তি পোহাতে হয়। মেট্রো সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চালু থাকলে মেলার দর্শনার্থীরা অনেকটাই ভোগান্তিমুক্ত হবে।

পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী মেলা

বাংলা একাডেমির অমর একুশে বইমেলা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী মেলা। এই মেলা হয় পুরো ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে অর্থাৎ ২৮ দিন। আর লিপইয়ার হলে অর্থাৎ চার বছর পর পর এই মেলা হয় ২৯ দিনের। এ বছর ২০২৪ সালের মেলা হবে ২৯ দিনের। সারা দুনিয়ায় সর্বত্র মেলা হয় ৭ থেকে ১০ দিনের। কোথাও কোথাও ১২ দিনের মেলাও হয়। আমার জানা মতে ফ্রাংকফুর্ট বইমেলা, লন্ডন বইমেলা, দিল্লি বইমেলা ও কলকাতা বইমেলা; এইগুলোর কোনোটিই ১০ দিনের বেশি সময় নিয়ে হয় না। একুশের বইমেলাও এক সময় ২১ দিনের মেলা ছিল। সেটাই ছিল দীর্ঘস্থায়ী মেলা। পরে এই সময়কে আরো দীর্ঘস্থায়ী করে ২৮/২৯ দিন করা হয়েছে। মেলার এই দীর্ঘস্থায়িত্ব নিয়ে ইতিমধ্যে কথা উঠতে শুরু করেছে। এই বিষয়ে প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত শেষের দুই সপ্তাহ বেচা বিক্রি হয়। আর শুরুর দুই সপ্তাহ ক্রেতা দর্শনার্থী এমনিতেই আসেন। ঘুরতে আসেন, সেলফি তুলতে আসেন। একটু বিনোদনের আশায় আসেন।

মেলায় কত দর্শক ক্রেতা আসেন

আমাদের দেশে বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখা হয় মেলা প্রাঙ্গণ লোকে লোকারণ্য। হাজার হাজার ক্রেতা দর্শকের উপচে পড়া ভিড়ে প্রকাশকদের চওড়া হাসি দেখা যায়। সবাই খুশি, কী প্রকাশক, কী শিল্পী কবি লেখক। সবাই। কিন্তু সত্যি কি তাই? খুব সম্ভবত না। তাছাড়া মেলার দর্শকের উপস্থিতির কোনো হিসাব নেই। এই যুগে এটা এক অবিশ্বাস্য ব্যাপার। তারপর গণমাধ্যমের উপচে পড়া ভিড়ের রিপোর্টে মনে হয় বুঝি মেলা মাঠ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। অনেকে আবার লিখেও ফেলেন, মেলা প্রাঙ্গণ আজ জনসমুদ্রের রূপ নিয়েছে। সংবাদপত্রে এ ধরনের রিপোর্ট দেখলে আমার মনে পড়ে সোনাভানের পুঁথির কথা।

লাখে লাখে সৈন্য মরে

কাতারে কাতার

গুনিয়া শুমার করে

দুই তিন হাজার।

আজকের এই যুগে, একবিংশ শতাব্দীতে এটা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অবশ্যই মেলার দর্শনার্থীদের প্রকৃত সংখ্যা জানা দরকার। তাছাড়া পরিসংখ্যান বলে একটা কথা আছে। মনে রাখতে হবে পরিসংখ্যানের উপরই পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হয়। তাই একুশের বইমেলায় টিকিটের ব্যবস্থা করা উচিত। টিকিটের ব্যবস্থা হলে কত টিকেট বিক্রি হলো তা থেকে জানা যাবে মেলায় প্রতিদিন, কোন দিন কত দর্শক হলো। আর ২৮/২৯ দিনেই বা সর্বমোট কত দর্শক মেলায় গিয়েছেন তা জানা যাবে। এ নিয়ে আগেও কম-বেশি কথা হয়েছে। কিন্তু কেন যেন বিষয়টি সবসময়ই বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ এড়িয়ে যান। মনে হয় দায়িত্ব নিতে চান না। কিন্তু না, দায়িত্বে থাকলে দায়িত্ব নিতে হবে। মনে রাখতে হবে দায়িত্ব এড়ানো কার্যত দায়িত্বহীনতা। যা বাংলা একাডেমির কাছে আমাদের কাম্য নয়।

বইমেলা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা

বইমেলায় দর্শনার্থীর কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু নিঃসন্দেহে ক্রেতার ঘাটতি আছে। এছাড়াও আরো একটি বিষয় আছে তা হলো, এই মেলা উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তের মেলা থেকে এখন নিম্নবিত্তের মেলায় পরিণত হয়েছে। উচ্চবিত্ত এখন আর আগের মতো রিকশা, বাসে বা ট্যাক্সিতে চলাচল করে না। উচ্চবিত্ত এখন প্রাইভেট কারে চলাচল করে। কিন্তু মেলায় কার পার্কিংয়ের উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই। ফলে উচ্চবিত্ত এই মেলা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। অন্যদিকে মধ্যবিত্তের হাতে টানাটানি। আর নিম্নবিত্ত স্রেফ দর্শক। এই অবস্থা কিন্তু এই মেলার জন্য একটি অশনিসংকেত। এর থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে হবে।

এ বিষয়ে একটি বিষয় চিন্তা করা যেতে পারে তা হলো বিভিন্ন স্কুল থেকে ছাত্র-শিক্ষকদের মেলায় আনার ব্যবস্থা করা এবং স্কুলের পক্ষ থেকে মেলায় আগত শিক্ষার্থীদের পছন্দ মতো অন্তত একটি বই কিনে দেওয়া। এতে করে মেলার সাথে স্কুল শিক্ষার্থীদের পরিচয় ঘটবে। তারা একটা নয়াসংস্কৃতির বন্ধনে যুক্ত হবে। এজন্য প্রয়োজনে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব অর্থে প্রতিদিন কয়েকটি বাসের ব্যবস্থা করতে পারে। কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিআরটিসি’র সহায়তা নিতে পারে। বাংলা একাডেমি এ ধরনের উদ্যোগ নিলে ঢাকা শহরের নিকটবর্তী অঞ্চলে বিভিন্ন স্কুল আগ্রহী হয়ে উঠবে। আপাতত দৃষ্টিতে এটা কোনো প্রস্তাবই নয় মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এর থেকে উত্তম প্রস্তাব আর কি হতে পারে?

বই পড়ার অভ্যাস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারের বইমেলায় উদ্বোধনী ভাষণে বই পড়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন, বই পড়ার অভ্যাস সবার থাকা প্রয়োজন। মা-বাবা যদি ছোটবেলা থেকে শেখায় তাহলে অভ্যাসটা হবে। একেবারে খাঁটি কথা।

‘বই কিনুন, বই পড়ুন। বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না। বই পৃথিবীর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বন্ধু। পড়িলে বই আলোকিত হই, না পড়িলে অন্ধকারে রই। বই হতে পারে উপকারের উপকরণ। প্রিয়জনকে বই উপহার দিন।’ এসব শুনে আসছি সেই কতকাল ধরে। কিন্তু কেন যেন এগুলো কথার কথা হিসেবেই রয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারপরও বলতে হবে। আর তাই প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, মা-বাবা যদি ছোটবেলা থেকে শেখায় তাহলে অভ্যাসটা গড়ে উঠবে। তাই প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে সাধুবাদ জানাই। অভিনন্দন জানাই। জানাই ধন্যবাদ। সেই সঙ্গে কৃতজ্ঞতা। কারণ এটা বারবার বলতে হবে। যশোর অঞ্চলে একটা কথা চালু আছে ‘খাতি খাতি ভালো লাগবে’। এক্ষেত্রেও তাই। হাল ছাড়লে চলবে না, বলতে বলতে এক সময় শুনবে। সৈয়দ মুজতবা আলীর সুন্দরীর কথায়, ‘বই, ও তো ওর একটা আছে’। এই যখন আমাদের অবস্থা তখন বলতে হবে। আরো বলতে হবে। সেই সাথে অবশ্য কিছু করণীয় আছে। সে করণীয় হচ্ছে, স্কুল-কলেজসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পুরস্কার হিসেবে ঘটি-বাটি, গ্লাস-জগ, মগ দেওয়া চলছে তা বন্ধ করতে হবে। নির্দেশ দিয়ে বন্ধ করে এগুলোর পরিবর্তে বই দিতে হবে উপহার হিসেবে।

এ বিষয়ে সম্প্রতি আনিসুল হক তার এক লেখায় লিখেছেন ক্রেস্ট নয়, পুরস্কার হিসেবে বই দিন। তিনি লিখেছেন সবসময় বই পড়া হয় না। কিন্তু ঘরে থাকলে কোনো না কোনো সময় তা পড়া হয়। এমনকি কখনো কখনো তা অনেকেই গোগ্রাসে গেলে। এভাবে আমাদের আগামী প্রজন্ম শিশুদের বইমুখী করতে হবে। আর বইমুখী করতে আরও বেশি বেশি বইমেলার আয়োজন করতে হবে। সেই বার্তা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছেন, বইমেলাকে উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যাবেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে আবারো ধন্যবাদ জানাই।

ঘুমের দাওয়াই

‘বই হচ্ছে ঘুমের দাওয়াই’, এই মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘অনেকের ঘুম না আসলে ঘুমের ওষুধ খান। ঘুমের ওষুধের দরকারটা কি? শুধু বই পড়লে, বই একটু হাতে নিলে ঘুম চলে আসবে। কঠিন প্রবন্ধ পড়লে ঘুমটা তাড়াতাড়ি আসবে। বেশি মজার বই পড়লে কিন্তু ঘুম চলে যাবে। এজন্য বেছে নিতে হবে এমন একটা বই যেটা পড়লে তাড়াতাড়ি ঘুম চলে আসবে। তাহলে দেখবেন আরামে ঘুমাবেন। আমি প্রায়ই এটা করি।’

ইতিপূর্বে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির পর প্রধানমন্ত্রী পেঁয়াজ ছাড়া রান্না ও বেগুনের মূল্য বৃদ্ধির পর বেগুনের পরিবর্তে কুমড়া দিয়ে বেগুনি ভাজার কথা বলে বেশ আলোচনায় আসেন। অনেকেই এ নিয়ে নানান কথা বলেন। এবার তিনি ওষুধ ছাড়া ঘুমের দাওয়াই বাতলে দিয়ে রীতিমতো চমক সৃষ্টি করেছেন। শুধু চমক নয় তিনি এবার সমালোচকদের মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী এবার রীতিমতো মোক্ষম অস্ত্র প্রয়োগ করেছেন। যা বইমেলার জন্য একটা বাড়তি পাওনা।

রেকর্ড বার উদ্বোধন

১লা ফেব্রুয়ারি শীতের বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ এর উদ্বোধন করেন তার উদ্বোধনী বক্তব্যের পর ফিতা কেটে। এতে তাঁর মেলা উদ্বোধনের একটা রেকর্ড তৈরি হয়েছে। কারণ এটা তাঁর বাংলা একাডেমির ২১তম মেলা উদ্বোধন। বিষয়টা তাঁর দৃষ্টি এড়ায়নি। সম্ভবত তাই তিনি বলেছেন, আগামী দিন আন্তর্জাতিক সাহিত্যিক নিয়ে এসে মেলা আরও বর্ণাঢ্য করা হবে। এর অর্থ আগামী দিনে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কোনো ব্যক্তি এই মেলার সূচনা করবেন। এটাই হওয়া উচিত। বছরের পর বছর প্রধানমন্ত্রীর মেলা উদ্বোধনের মধ্যে নতুনত্ব থাকে না। দুনিয়ার দেশে দেশে এ ধরনের মেলা বিশ্বনন্দিত শিল্পী কবি সাহিত্যিক উদ্বোধন করেন এবং উদ্বোধনী মঞ্চে উপস্থিত হয়ে মেলার জৌলুস বৃদ্ধি করেন। এ বিষয়ে বাংলা একাডেমি না বুঝলেও খোদ প্রধানমন্ত্রী বুঝেছেন। অতএব আশা করি আগামীতে আমাদের বইমেলার উদ্বোধনী মঞ্চে কোনো না কোনো বিশ্বখ্যাত কবি সাহিত্যিক থাকবেন।

নতুন বই

বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও রাজনৈতিক সাহিত্যের বিপুল সংখ্যক বই আসার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ইতিমধ্যে চলে এসেছে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ‘লেলিন কেন জরুরি’। মনজুরুল হকের ‘পুঁজিবাদী দুর্গে কামান দাগ’। এটি চ্যাং চং জিয়াও-এর অনুবাদ। এছাড়াও তার মৌলিক বই ‘সমাজতান্ত্রিক আদর্শের পুনরক্ষণ’ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে মাহবুব আলমের ‘ইউক্রেন যুদ্ধ: আমেরিকা ও মুসলিম বিশ্ব’। বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, মেলার দ্বিতীয় দিনে ৩১টি নতুন বই এসেছে। এর মধ্যে ৪টি রচনাবলী, একটি প্রবন্ধ তিনটি ইতিহাস সম্পর্কিত, একটি জীবনীগ্রন্থ, দুটি উপন্যাস, ১০টি শিশুতোষ গল্প ও ১১টি কবিতার বই রয়েছে। ১০টি কবিতার বইয়ের মধ্যে রয়েছে রফিক হাসানের কাব্যগ্রন্থ ‘কালের কালিমা’।

দু’একদিনের মধ্যে আরও যেসব বই আসবে সেগুলো হচ্ছে লুৎফর রহমান রিটনের ‘খরগোশটা গিটার বাজায়’। আমিরুল ইসলামের ছড়ার বই ‘যা দেখি তাই ছড়া হয়ে যায়’। সারওয়ারুল ইসলামের ‘পাঁচ কিশোর উপন্যাস’। রোমেন রায়হানের ‘বাঘ বলছে খাব খাব’। নাজিয়া জারিমের ‘পাখিদের পাঠশালা’। সুমন্ত আসলামের ‘পাঁচ দুষ্টু ছেলে’। ফারজানা তান্নির ‘একদিন সাগর পাড়ে’, ইশতিয়াক আহমেদের কিশোর থ্রিলার ‘হাফপ্যান্ট’ ইত্যাদি।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: প্রচ্ছদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

7 − three =