জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থের আলোকে প্রকাশিত গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’কে ইতিহাসের এক ‘অসাধারণ দলিল’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। শনিবার অমর একুশে বইমেলায় গ্রাফিক নভেল মুজিবের শেষ দুই খণ্ডের (নবম ও দশম) মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
জাফর ইকবাল বলেন, “‘মুজিব’ গ্রাফিক নভেল বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে খুবই অসাধরণ একটি দলিল হয়েছে; এটি শুধু ছোট বাচ্চারা পড়বে তাই নয়, বড় মানুষরা এটা তাদের বাসায় সাজিয়ে রাখতে পারবে।”
আওয়ামী লীগের গবেষণা উইং ‘সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন’ (সিআরআই) প্রকাশিত এ গ্রাফিক নভেলকে একটি বড় ‘পরিকল্পনা’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, “ছোট বাচ্চারা বড় বই পড়তে শেখেনি, কিন্তু ওদের ছবি দেখতে অনেক ভালো লাগে।
“আমি যখন ছোট ছিলাম, আমারও কমিক পড়তে অনেক ভালো লাগত। আমি মনে করি, এখন বাচ্চারা কমিক পড়তে খুবই পছন্দ করে। কাজেই তাদেরকে টার্গেট করে এই মুজিব কমিকটা প্ল্যান করা হয়েছে। এটা একটা বড় প্ল্যান।”
শনিবার বইমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সিআরআইয়ের স্টলের সামনে শেষ দুই পর্বের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে ছিলেন লেখক আনিসুল হক, গ্রাফিক নভেলের শিল্পী সৈয়দ রাশাদ ইমাম তন্ময়, কাহিনী বিন্যাস ও সংলাপ লেখক সিদ্দিক আহমেদসহ সহযোগী শিল্পীরা।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়ে গ্রাফিক নভেল হলেও বাংলাদেশে এটিই ছিল এ ধরনের প্রথম উদ্যোগ। ২০১৫ সালের ১৭ মার্চ গ্রাফিক নভেল মুজিবের প্রথম পর্ব প্রকাশিত হয়। এরপর সিআরআই’র উদ্যোগে এর বিভিন্ন পর্ব প্রকাশিত হয়েছে। এবছর ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়েছে নবম ও দশম খণ্ড, যার মাধ্যমে শেষ হল এ ধারাবাহিক প্রকাশনার।
জাতির পিতার লেখক সত্তার কথা স্মরণ করে সাবেক অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, “বঙ্গবন্ধুর লেখা বইগুলো অসাধারণ। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমরা অনেক কিছু বলি, কিন্তু তিনি যে কত বড় লেখক ছিলেন, সেটা নিয়ে কেউ বলে না। তিনি কিন্তু অসাধারণ একজন লেখক ছিলেন। আমি সবাইকে বলব, সবাই তার বইগুলো পড়বেন।”
গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’ এর প্রকাশক সিআরআইয়ের ট্রাস্টি ও বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক এবং আরেক ট্রাস্টি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
গ্রাফিক নভেলের নবম খণ্ডে আওয়ামী লীগ গঠনের বিভিন্ন ধাপ, পাকিস্তানের পাঞ্জাবে গিয়ে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সাক্ষাৎ এবং সেখানকার বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তার পরিচয়ের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। এই খণ্ডের নাম রাখা হয়েছে ‘মিশন পাঞ্জাব’।
আর দশম খণ্ডের শিরোনাম ‘মুক্তির পাথে’। এই খণ্ডে কারাগারে থাকা শেখ মুজিবের অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়া, সেখানে গোপনে ভাষা আন্দোলনের জন্য সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন, জেলে অনশন, শরীর ভেঙে পড়া, ঢাকার বাইরে স্থানান্তর, জেল থেকে মুক্তি, প্রাদেশিক নির্বাচনে বিজয় এবং ছয় দফাসহ বিভিন্ন ঘটনা স্থান পেয়েছে।
পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর লাহোরে পৌঁছানো, ফেরার সময় দিল্লি, কলকাতা হয়ে বেনাপোল দিয়ে খুলনা, ছদ্মবেশে থেকে জাহাজ চড়ে টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছানোর ঘটনা এই খণ্ডে এসেছে।
বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী প্রকাশের পর শিশু-কিশোর ও তরুণদের কাছে তার ঘটনাবহুল জীবন নতুন রূপে তুলে ধরার জন্য বইটিকে গ্রাফিক নভেলের রূপ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বিডিনিউজ