সালেক সুফী
হয়তো আজ দিন শেষে গল্পটা ভিন্নভাবে লিখতে হবে। হয়তো টেস্ট ম্যাচটি বাংলাদেশের মুঠো গলে বেরিয়ে যাবে। কিন্তু চারিদিকে চা বাগানঘেরা মনোরম সিলেট জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের বোলিং সহায়ক উইকেটে সফরকারী শ্রীলংকান দলের সঙ্গে প্রথম দুই দিন চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছে অভিজ্ঞতায় যোজন যোজন ব্যাবধানে পিছিয়ে থাকা নবীন বাংলাদেশ দল। অস্ট্রেলিয়ান কিউরেটর দেখিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশও ইচ্ছা থাকলে সবুজ ঘাসের আস্তরনে পেসি বাউন্সি স্পোর্টিং উইকেট করা সম্ভব।
আর বাংলাদেশের কথাই যদি বলেন নানা কারণে সাকিব, তামিম, এবাদত ,তাসকিন নেই। টেস্ট ফরমেট থেকে অবসরে নীরব ঘাতক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিক শেষ মুহূর্তে দল থেকে ছিটকে গেছে। এমনি এক দল নিয়ে অভিজ্ঞতায় অনেক এগিয়ে থাকা শ্রীলংকা দলের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দিনশেষে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে আছে বাংলাদেশ। অতিথি দলের আঞ্জেলো ম্যাথিউস, দীনেশ চান্দিমাল এবং করুনারত্নে মিলে যত টেস্ট খেলেছে গোটা বাংলাদেশ দল মিলে সেটি খেলেনি। আজ যখন তৃতীয় সকালে খেলা শুরু হবে বাংলাদেশের সুযোগ থাকবে চট জলদি উইকেট তুলে নিয়ে জয়ের নিশানা দৃষ্টির মাঝে রাখার। তরুণ দল বাজি ধরা বোকামি হবে। তবু এযাবৎ যতটুকু খেলেছে বাংলাদেশ আশান্বিত হবার অনেক কারণ আছে।
অজুহাত দিবো না এমন প্রাঞ্জল উইকেটে দেশে খেলা হয় না। তবুও টসে জিতে বোলিং করে প্রথম সেশনে খালেদ, শরিফুল আর তরুণ তুর্কি নাহিদ রানার আগুনে বোলিং দিয়ে চেপে ধরেছিলো বাংলাদেশ। ৫৭ রানে ৫ উইকেট হারানো শ্রীলংকা ধুঁকছিল। শরিফুলের বলে শূন্য রানে কামিন্দু মেন্ডিজের ক্যাচটি জয়ের হাত না ফস্কালে কে জানে হয়তো স্বল্পরানে গুটিয়ে যেত অতিথি দল। হয়নি সেটি। দ্বিতীয় সেশনে বলের শাইন চলে গেলে এবং উইকেট কিছুটা সহজ হয়ে এলে অতিথি দলের অধিনায়ক ধনঞ্জয়া এবং কামিন্দু প্রতি আক্রমণ করে বাংলাদেশ বোলিংকে এলোমেলো করে দেয়। উভয়ে শত রান ১০২ করে।
তৃতীয় সেশনে স্নায়ুর চাপ কাটিয়ে দুরন্ত দুর্বার রূপে আবির্ভুত হয় নবীন নাহিদ রানা। অতিথি দলের শত রান করা দুই ব্যাটসম্যান সহ তিন জন উড়ে যায় নাহিদের ছোড়া অগ্নিগোলায়। ২০২ রান করা ষষ্ট উইকেটের অবসান ঘটলে ২৫৯ থেকে ২৮০ মাত্র ২২ রানে ৫ উইকেট হারায় শ্রীলংকা। অবশ্য প্রথম দিনশেষে ৩২ রান তুলতেই বাংলাদেশের টপ অর্ডারের তিন জন সাজঘরে ফিরে আসে। বলতে পারি দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশ ব্যাটিং আদৌ যুৎসই হয় নি। একমাত্র নৈশ প্রহরী তাইজুল (৪৭) ছাড়া মিডল অর্ডারে কেউ নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটি খেলতে পারেনি। শেষ দিকে হার না মানা বেপরোয়া মনোভাব নিয়ে খালেদ এবং শরিফুল দ্রুত অষ্টম উইকেট জুটিতে ৪০ রান যোগ করে ১৮৮ রানে পৌঁছাতে পারে বাংলাদেশ। ব্যাবধান ৯২ রানের।
মুষড়ে পড়েনি বাংলাদেশ। বিশেষ করে নিজের প্রথম টেস্টে দুর্ধর্ষ রূপে আবির্ভুত নাহিদ রানা চমৎকার বোলিং করে। খালেদ এবং শরিফুল চাপে রাখে শ্রীলংকা দলকে। একই সঙ্গে তাইজুল এবং মিরাজ একটি করে উইকেট তুলে নিলে দিনশেষে অতিথি দলের স্কোর দাঁড়ায় ১১৯ রানে ৫ উইকেট। সর্বসাকুল্যে ২১১ রানে এগিয়ে ওরা। বলা যায় এখনো ধরা ছোয়ার বাইরে যায়নি।
আজ তৃতীয় সকালে বৃষ্টি বাধা হয়ে না দাঁড়ালে বাংলাদেশের সামনে সুযোগ থাকবে দ্রুত উইকেট তুলে নিয়ে লিড ২৫০ সীমিত রাখতে। কিন্তু এর পর কঠিন উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের নিজেদের সেরা দক্ষতা উপহার দিতে হবে। আমাদের আশা হারের আগে যেন না হেরে যায় বাংলাদেশ।স্মরণে রাখতে হবে এই ধররে স্পোর্টিং উইকেটে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার সুযোগ হয় না। দেশের বাইরে টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের লড়াকু দল হিসাবে খেলতে হলে ঘরোয়া ক্রিকেট ভেনুতে এমন উইকেটে নিয়মিত খেলতে হবে। সাবাস তরুণ নবীন দল প্রজন্ম রূপান্তর সময়ে সাহসী ক্রিকেট নিয়ে এগিয়ে যায়। সাফল্য ধরা দিবে অবধারিত।