বদল এল চলচ্চিত্র অনুদানের নীতিমালায়

প্রতিবছর সিনেমা নির্মাণের জন্য অনুদান দেওয়া হলেও নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয় না বেশির ভাগ সিনেমার কাজ। নির্মাতারা অভিযোগ করেন, সিনেমা নির্মাণের জন্য যে সময় বেঁধে দেয় সরকার, তা যথেষ্ট নয়। সে কারণে সময়মতো সিনেমা মুক্তি দিতে পারেন না তাঁরা। এত দিনে নির্মাতাদের সেই সমস্যার একটা সমাধান হলো। এখন থেকে অনুদানের সিনেমা বানানোর জন্য দ্বিগুণ সময় পাবেন নির্মাতারা। সময়, চেক প্রদান, মুক্তির নিয়মসহ অনুদানের চলচ্চিত্র নির্মাণে আরও বেশ কিছু নিয়মে বদল এনেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।

৬ মার্চ ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদান প্রদান নীতিমালা, ২০২৫’ এবং ‘স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদান প্রদান নীতিমালা, ২০২৫’ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতি অর্থবছরে সর্বোচ্চ ১২টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রকে অনুদান দেওয়ার জন্য বিবেচনা করা হবে। এর আগের নীতিমালায় এ সংখ্যা ছিল ১০। এ ছাড়া স্বল্পদৈর্ঘ্যের ক্ষেত্রে এখন থেকে প্রতিবছর ১০টির পরিবর্তে অনুদানের জন্য বিবেচিত হবে ২০টি চলচ্চিত্র।

আগের নীতিমালা অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধের সিনেমাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হলেও নতুন নীতিমালায় উপেক্ষিত এই বিভাগ। নতুন নীতিমালায় প্রস্তাবিত শাখায় আছে অনুদান প্রদানের ক্ষেত্রে কমপক্ষে প্রামাণ্যচিত্র একটি, শিশুতোষ ন্যূনতম একটি; রাজনৈতিক ইতিহাস তথা আবহমান বাংলার সকল রাজনৈতিক অভ্যুত্থান, আন্দোলন ও বিপ্লব; যা এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের নিয়ামকসংক্রান্ত কমপক্ষে একটি এবং সাংস্কৃতিক ইতিহাস তথা বাংলার ঐতিহ্য, মিথ ও ফোকলোর-সংক্রান্ত কমপক্ষে একটি চলচ্চিত্র অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

নতুন নীতিমালায় বেড়েছে লেখক ও চিত্রনাট্যকারদের সম্মানী। গল্প লেখককে ২ লাখ এবং চিত্রনাট্যকারকে ৩ লাখ টাকা উৎসাহ পুরস্কার দেওয়া হবে। আগে গল্প লেখক ও চিত্রনাট্যকারকে দেওয়া হতো ৫০ হাজার টাকা করে। পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য—দুই বিভাগেই নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে নির্মাতা/পরিচালকের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা। প্রস্তাবকারী পরিচালককে পূর্ব নির্মিত কমপক্ষে একটি চলচ্চিত্র অথবা নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক বা একাধিক চলচ্চিত্রে তাঁর ভূমিকা থাকতে হবে।

আগের নীতিমালায় পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে সময় বেঁধে দেওয়া হতো ৯ মাস। এখন অনুদানের প্রথম চেক পাওয়ার পর পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে এ সময় বেড়েছে ১৮ মাস। সময় বেড়েছে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রেও। স্বল্পদৈর্ঘ্য নির্মাণে ১২ মাস এবং প্রামাণ্যচিত্রের জন্য ২৪ মাস সময় পাবেন নির্মাতারা। তবে যৌক্তিক বিবেচনায় পূর্ণদৈর্ঘ্যের ক্ষেত্রে ছয় মাস ও স্বল্পদৈর্ঘ্যের ক্ষেত্রে তিন মাস করে সর্বোচ্চ দুবার সময় বাড়ানো যাবে।

পরিবর্তন এসেছে অর্থ প্রদানের নিয়মেও। এখন প্রথম কিস্তি হিসেবে দেওয়া হবে অনুদানের ২০ শতাংশ। এই অর্থ প্রাপ্তির দুই মাসের মধ্যে শুটিং শিডিউল, প্রোডাকশন প্ল্যান, লোকেশন ব্যবহারের অনুমতি, শিল্পীদের সঙ্গে চুক্তিপত্র সম্পাদনসহ প্রয়োজনীয় দলিলাদি জমা দিতে হবে। চলচ্চিত্র বাছাই ও তত্ত্বাবধান কমিটি সন্তুষ্ট হলে দেওয়া হবে অনুদানের ৫০ শতাংশ অর্থ। অনুদানের সিনেমার পারিশ্রমিক নিয়ে অনেক শিল্পী অভিযোগ করেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে নতুন নীতিমালা অনুযায়ী চিত্রায়িত অংশের কমপক্ষে ৫০ শতাংশ রাফকাট এবং শিল্পীদের সম্মানী প্রাপ্তির প্রমাণপত্র দেখানোর পর মিলবে আরও ২০ শতাংশ অর্থ। সিনেমা মুক্তির পর মিলবে বাকি ১০ শতাংশ অর্থ।

অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের চিত্রায়ণ, এডিটিং, ডাবিং ইত্যাদি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন এবং এর অধীন প্রতিষ্ঠানে সম্পন্ন করা যাবে। এ ক্ষেত্রে বিএফডিসি সার্ভিস চার্জের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে প্রযোজক/নির্মাতা/আবেদনকারীর কোনো সমিতির সদস্য হওয়া বাধ্যতামূলক নয় বলে নতুন নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

সিনেমা মুক্তির ক্ষেত্রেও এসেছে নতুন নিয়ম। কমপক্ষে দেশের পাঁচটি হলে অথবা কমপক্ষে ১০টি জেলা তথ্য কমপ্লেক্স/শিল্পকলা একাডেমি/পাবলিক অডিটরিয়াম/ওটিটি প্ল্যাটফর্মে প্রদর্শন করতে হবে। এ ছাড়া অনুদানের সিনেমা হলে মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যান্য চলচ্চিত্রের চেয়ে অগ্রাধিকার পাবে। এ ক্ষেত্রে সরকার সিনেমা হলের মালিককে কর রেয়াতসহ অন্যান্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করবে।

নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চলচ্চিত্র জমা দিতে না পারলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে সরকার। নির্মীয়মাণ বা মুক্তিপ্রাপ্ত কোনো সিনেমার চিত্রনাট্য জমা দেওয়া যাবে না। অনুদান পাওয়া কোনো চলচ্চিত্র যদি মৌলিক নয় বলে প্রমাণিত হয় অথবা নির্মাতা চুক্তি ভঙ্গ করেন, তাহলে অনুদানের টাকা সুদসহ ফেরত দিতে হবে।

এরই মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য চলচ্চিত্রে অনুদানের জন্য চিত্রনাট্য আহ্বান করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। অনুদান পেতে আগ্রহীদের চলচ্চিত্রের গল্প, চিত্রনাট্য, অভিনয়শিল্পীদের নামসহ পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ আগামী ৭ এপ্রিল বিকেল ৪টার মধ্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

1 × five =