বনেদি অ্যাশেজ সিরিজের অপেক্ষায় ক্রিকেট বিশ্ব

এই নভেম্বর মাসেই পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পার্থে শুরু হচ্ছে বিশ্ব ক্রিকেটের দুই বনেদি দল অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মধ্যে ঐতিহাসিক অ্যাশেজ সিরিজ। সময়, পরিস্থিতি এবং প্রেক্ষাপট পাল্টে এখন ভারত, নিউ জিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হয়ে উঠলেও অ্যাশেজের গুরুত্ব বা আকর্ষণ একটুও ম্লান হয়নি। বিশ্বজুড়ে ক্রিকেট প্রেমীদের কাছে অ্যাশেজ উন্মাদনা এখনো সমানভাবে বিরাজ করে।

সবাই জানে বিশ্ব ক্রিকেটে সব ফরম্যাটে অস্ট্রেলিয়া দীর্ঘদিন ধরে সবচেয়ে ধারাবাহিক একটি দল। আর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়া সব সময় এক তুখোড় প্রতিদ্বন্দ্বী। ১৯৭০, ১৯৮০ দশকে সর্বজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা নিকট অতীতে ভারত ছাড়া অন্য কোন দল টেস্ট ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারেনি। ইংল্যান্ড মাঝে মাঝে শক্তি সামর্থের পরিচয় দিলেও অস্ট্রেলিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে আদৌ ধারাবাহিক হতে পারেনি।

মাঝে কিছুদিন নিউ জিল্যান্ড কিংবদন্তি ব্রেন্ডন ম্যাকুলাম কোচ হয়ে অধিনায়ক বেন স্টোকস সম্মিলনে টেস্ট ক্রিকেটেও ‘বাজবল’ সংস্কৃতি সৃষ্টি করে আলোড়ন তুলেছিল। কিন্তু কিছু মেধাবী ক্রিকেটার অবসর নেওয়ায় এবং প্রতিপক্ষ দলগুলো কাউন্টার কৌশল গ্রহণ করায় বাজবল ক্রিকেটে ভাটা পড়েছে। সব কিছুর শেষেও বলতে হবে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েই অস্ট্রেলিয়ায় আসছে ইংল্যান্ড দল। ইংরেজ সিংহ ( থ্রি লায়ন্স ) আর কাঙ্গারুজদের মল্লযুদ্ধে আকর্ষণের কমতি থাকবে না।

অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট অধিনায়ক তুখোড় ফাস্ট বোলার পাট কামিন্স ইনজুরি শেষে রিহ্যাব করছে। পার্থে শুরু হওয়া প্রথম টেস্টে রাখা হয়নি কামিন্সকে। বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার কামিন্স পার্থের দ্রুত গতির বাউন্সি উইকেটে না খেলা ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের কিছুটা স্বস্তির কারণ হতে পারে। কিন্তু দলে থাকা মিচেল স্টার্ক, জস হেজেলউড, স্কট বোলান্ড অস্ট্রেলিয়ান কন্ডিশনে ভীতিকর যে কোন দলের বিরুদ্ধে।

আছে ব্যাক আপ বোলার হিসাবে ক্যামেরুন গ্রিন, ওয়েবস্টার। আছে নির্ভরযোগ্য নাথান লায়ন। অস্ট্রেলিয়ান বোলিং আক্রমণকে সামাল দিতে ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের ঘাম ঝরাতে হবে। অস্ট্রেলিয়ার মূল সমস্যা টপ অর্ডার ব্যাটিং। ডেভিড ওয়ার্নার অবসর নেওয়ার পর স্থায়িত্ব নেই ওপেনারদের নিয়ে। তরুণ শাম কনস্টাসকে ওপেনার হিসাবে উসমান খাজার সঙ্গী ভাবা হলেও নির্বাচন করা হয়েছে জেক ওয়েদারলান্ডকে।

তবে স্বস্তির সংবাদ পুরোনো ফর্মে ফিরেছে মারনাস লেবুচাঙ। অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম বিশ্ব সেরা ব্যাটসম্যান স্টিভ স্মিথ প্রস্তুত হয়ে আছে। দলে মিডল অর্ডারে বিকল্প আছে ব্যাটিং অল রাউন্ডার ক্যামেরুন গ্রিন আর বু ওয়েবস্টার। পরিস্থিতি এমন হতে পারে দুইজন প্রথম একাদশে থাকতে পারে। দেখতে হবে অস্ট্রেলিয়া ভালো ব্যাটিং করে নিয়মিত ৩৫০-৪০০ রান করতে পারে কিনা। সেটি নিয়মিত হলে আসেজ সিরিজ একপেশে হয়ে গেলে অবাক হবো না।

অস্ট্রেলিয়া স্কোয়াড প্রথম অ্যাশেজ টেস্ট: স্টিভেন স্মিথ (অধিনায়ক), উসমান খাজা, মারনাস লাবুশেন, ট্রাভিস হেড, জেক ওয়েদারাল্ড, ক্যামেরন গ্রিন, বিউ ওয়েবস্টার, অ্যালেক্স ক্যারি (উইকেটকিপার), জশ ইংলিস (উইকেটকিপার), জশ হ্যাজলউড, মিচেল স্টার্ক, স্কট বোল্যান্ড, নাথান লায়ন, ব্রেন্ডন ডগেট ও শন অ্যাবট।

ইংল্যান্ড দল কিংবদন্তি পেস জুটি জেমস অ্যান্ডার্সন আর স্টুয়ার্ট ব্রড যুগ পেরিয়ে এসেছে। অস্ট্রেলিয়ার উইকেটে ইংল্যান্ড সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করবে জোফরা আর্চার, মার্ক উড কিভাবে নিজেদের মানিয়ে নেয় তার উপর। পার্থ টেস্টর পর ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত হবে দিবারাত্রির পিঙ্ক বল টেস্ট। এই দুই টেস্টে উইকেট থাকবে জীবন্ত এখানে তুখোড় অস্ট্রেলিয়ান বোলিং মোকাবেলায় জাক ক্রলি, বেন ডাকেট, জো রুট, ওলি পোপ, হ্যারি ব্রুকের উপর নির্ভর করবে ইংল্যান্ড প্রথম দুই টেস্ট হেরে সিরিজে  পিছিয়ে পড়বে কিনা।

এডিলেড, মেলবোর্ন এবং সিডনি উইকেট অপেক্ষাকৃত কম পেসি বাউন্সি বিধায় ইংলিশদের মানিয়ে নেওয়া অপেক্ষাকৃত সহজতর হতে পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে প্রতিটি আসেজ সিরিজ নতুন নায়ক সৃষ্টি করে। অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ড উভয় দলের কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড়দের অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে শেষ আসেজ। ক্রিকেট জীবনের সায়াহ্নে ওরা জ্বলে উঠলে সিরিজ অনেক প্রাণবন্ত হবে।

ইংল্যান্ড স্কোয়াড: বেন স্টোকস (অধিনায়ক), জোফরা আর্চার, গাস আটকিন্সন, শোয়াইব বাশির, জেকব বেথেল, হ্যারি ব্রুক, ব্রাইডন কার্স, জাক ক্রলি, বেন ডাকেট, উইল জ্যাক্স, ওলি পপ, ম্যাথিউ পটস, জো বুট, জেমি স্মিথ, জোশ টোঙ, মার্ক উড।

অস্ট্রেলিয়ান হিসাবে আমি চাইবো আমাদের ক্যাঙ্গারু বাহিনী যেন দাপটের সঙ্গে আসেজ ধরে রাখে আর আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চলতি পর্বে শীর্ষস্থান ধরে রাখে। কিন্তু ক্রিকেট নিয়ে নিশ্চিত কিছু বলা সুবিবেচকের কাজ না। এই ধরনের বনেদি ক্রিকেটের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ক্রিকেট মেধা এবং দক্ষতার সঙ্গে লাগসই কৌশল এবং মানসিক শক্তি প্রভাব ফেলে। তবু মনে হচ্ছে ৫-০ না হলেও ৪-১ ব্যাবধানে জয়ী হবে ক্যাঙ্গারু বাহিনী।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

seven − six =