বন্ধ হয়ে গেল মহানগর নাট্যোৎসব

রাজধানীর মহিলা সমিতিতে ১৪ দিনব্যাপী ‘ঢাকা মহানগর নাট্য উৎসব’ আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকা মহানগর নাট্য পর্ষদ। ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়ার কথা ছিল এই উৎসব। শেষ মুহূর্তে নিরাপত্তাজনিত কারণে উৎসব স্থগিত করার কথা জানায় আয়োজকেরা। কিছু লোকের হুমকি এবং পুলিশি নিষেধাজ্ঞার কারণ দেখিয়ে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানায় তারা। তবে, গতকাল রোববার সকালে সংস্কৃতি উপদেষ্টা জানালেন ভিন্ন কথা। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি জানান, নাট্যকর্মীদের একটা অংশ এই উৎসবের বিরোধিতা করছে। তাই মহিলা সমিতি কর্তৃপক্ষ উৎসবের জন্য মিলনায়তন বরাদ্দ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।

ঢাকা মহানগর নাট্য পর্ষদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, উৎসবের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও উৎসব বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। গত শুক্রবার দুপুরে বাংলাদেশ মহিলা সমিতির একজন কর্মকর্তা আমাদের জানান, রমনা থানা থেকে ফোন করে নাট্যোৎসব বন্ধ করতে বলা হয়েছে। আমরা উৎসব কমিটির পক্ষ থেকে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করি। সন্ধ্যায় ওসি সাহেবের সঙ্গে তাঁর অফিসে সাক্ষাৎ করি এবং উৎসবের বিস্তারিত তথ্য অবহিত করি। ওসি সাহেব আমাদের আশ্বস্ত করেন। আমরা নিরাপত্তার সহযোগিতা চেয়ে একটি আবেদনপত্র জমা দিয়ে আসি। এর কিছুক্ষণ পর একটি মব থানায় ঢোকে, একরকম হুমকির স্বরে গালাগালসহ মহিলা সমিতির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে উৎসব বন্ধ করার জন্য চাপ দেয়। এমন পরিস্থিতিতে মহিলা সমিতি কর্তৃপক্ষ সার্বিক নিরাপত্তার কথা ভেবে রাতেই মৌখিকভাবে হল বরাদ্দ বাতিল করে। শুক্রবার রাতে মহিলা সমিতির মিলনায়তন থেকে কে বা কারা উৎসবের সাজসজ্জা খুলে নিয়ে যায় বলেও অভিযোগ করা হয় সেই বিজ্ঞপ্তিতে।

মহানগর নাট্য পর্ষদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত হতে পারেননি সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি জানিয়েছেন, পুলিশের পক্ষ থেকে উৎসব বন্ধের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। গতকাল রোববার সকালে ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘সরকার শিল্পকলার মাধ্যমে সারা দেশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছড়িয়ে দিতে উৎসাহ দিচ্ছে, শনিবারও শিল্পকলায় তিনটা প্রদর্শনী হলো। আজকেও (গতকাল) প্রাচ্যনাটের শো আছে শিল্পকলায়। তাহলে এখানে কেন পুলিশ উৎসব বন্ধ করতে বলবে? খোঁজ নিয়ে জানলাম, পুলিশ এ রকম কিছুই বলেনি। কালকে (শনিবার) রাতেই বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, তারা কাউকে উৎসব বন্ধ করতে বলেনি। বরং তারা নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত।’

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী জানান, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে অনুসন্ধান করা হয়েছে কারা এই উৎসব বন্ধের পেছনে কাজ করছে। কোনো মব নয়, নাট্য পর্ষদের ভেতরের কিছু মানুষই হল বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে বলে জানান তিনি। সংস্কৃতি উপদেষ্টা লিখেছেন, ‘নাট্যকর্মীদের একটা অংশ এই উৎসবের বিরোধিতা করে মহিলা সমিতি কর্তৃপক্ষের কাছে হল বরাদ্দ বাতিলের জন্য জোর দাবি জানিয়ে আসছে কিছুদিন ধরে। সংক্ষুব্ধ নাট্যকর্মীদের দাবি, এই উৎসবের আড়ালে জুলাই আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতা হত্যায় বিবৃতি দিয়ে উসকানি দেওয়া কিছু ব্যক্তি বা তাদের গোত্রীয় কিছু মানুষ সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।… তারা তো জানেই কারা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে। তাদের পরিচয় না লিখে মব বলে চালিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য কি একটা বিশেষ ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করা?’

এ বিষয়ে নাট্য পর্ষদের সদস্যসচিব কামাল আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, নাট্যকর্মীদের মধ্যে কে বা কারা উৎসবের বিরোধিতা করছে, তা তাঁর জানা নেই।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

18 + 2 =