পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, আর কোনও বন্যপ্রাণীকে হারাতে চাই না। পাঠ্যবই এবং পাঠ্যবইয়ের বাইরে বন্যপ্রাণী ও এদের আবাস্থল সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে দেশব্যাপী ওয়াইল্ডলাইফ অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হয়েছে। নানা কারণে আমাদের পরিবেশ আজ সংকটাপন্ন। বন্য হাতির দল থেকে শুরু করে পাখি, এমনকি সাগরের তলদেশের প্রাণীরা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। গত একশ’ বছরে দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে ৩১ প্রজাতির বন্যপ্রাণী। বন্যপ্রাণীদের বিলুপ্তি ও বিপদাপন্ন হওয়ার ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে প্রকৃতির স্বাভাবিক ভারসাম্য, যা মানুষের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বন্যপ্রাণী ও বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করা এখন তাই কেবল দরকারি নয়, বরং অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তাই সকল পেশার মানুষের এগিয়ে আসার পাশাপাশি কিশোর-কিশোরীদেরও সচেতন করতে ওয়াইল্ডলাইফ অলিম্পিয়াড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
আজ বৃহস্পতিবার বন্যপ্রাণী ও বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্র রক্ষা এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে উদ্ধুদ্ধ করতে দেশ জুড়ে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘স্মার্ট তারুণ্য বাঁচাবে অরণ্য’ স্লোগানে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ওয়াইল্ডলাইফ অলিম্পিয়াডের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন এবং ‘ওয়াইল্ড লাইফ অলিম্পিয়াড-২০২৪’-এর লোগো, পোস্টার, বুকলেট এবং ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন।
অলিম্পিয়াডের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া উদ্বোধনের পাশাপাশি বন অধিদপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিতব্য প্রথম ওয়াইল্ডলাইফ অলিম্পিয়াড এর বিস্তারিত উল্লেখ করেন মন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা ও তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দেখানো পথ ধরে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কার্যক্রম বৃদ্ধির লক্ষ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বন অধিদপ্তর বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ কর্মসূচি পালন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পের অধীনে দেশের মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ওয়াইল্ডলাইফ বা বন্যপ্রাণী নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশব্যাপী ৬৪ জেলায় আজ থেকে আরম্ভ হতে যাচ্ছে ‘ওয়াইল্ডলাইফ অলিম্পিয়াড, ২০২৪’ এর রেজিস্ট্রেশন।
পরিবেশমন্ত্রী জানান, এ বছর সারাদেশে প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে ৬৪টি ভেন্যুতে জেলা পর্যায়ের অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হবে। দুইটি ক্যাটেগরিতে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির সকল মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক, কারিগরি, মাদ্রাসা বা সমমান পর্যায়ের যেকোন শিক্ষার্থী স্কুল/কলেজ ক্যাটেগরিতে এই অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে পারবে। জেলা পর্যায়ের বিজয়ীদের নিয়ে ঢাকায় আয়োজিত হবে জাতীয় পর্যায়ের অলিম্পিয়াড। বিজয়ীদের জন্য থাকবে লক্ষাধিক টাকার পুরস্কার। ৭ মার্চ, ২০২৪ তারিখ থেকে শুরু হয়ে আগামী ১০ মে, ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত www.bfdwlo.org এই ঠিকানায় গিয়ে শিক্ষার্থীরা নিবন্ধন করতে পারবে। জেলা পর্যায়ের অলিম্পিয়াড হবে ১০ মে থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত। জেলা পর্যায়ের সকল অংশগ্রহণকারী ই-সার্টিফিকেট পাবে। জেলা পর্যায়ের বিজয়ীরা টি-শার্ট, বিজয়ী সার্টিফিকেট ও মেডেল পাবে।
জাতীয় পর্বের বিজয়ীরা টি-শার্ট, বিজয়ী সার্টিফিকেট ও মেডেল পাবে। জাতীয় পর্বের প্রতি ক্যাটেগরির ১ম, ২য় ও ৩য় বিজয়ী পাবে যথাক্রমে ৫০ হাজার, ৩০ হাজার ও ২০ হাজার টাকা। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ ও উন্নয়ন) ড. ফাহমিদা খানম, বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী, টেকসই বন ও জীবিকা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক গোবিন্দ রায় প্রমুখ।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বায়ুদূষণ রোধে ঢাকার আশেপাশের ইটভাটা ভাঙ্গা কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। বন সংরক্ষণের পাশাপাশি বন সম্প্রসারণ করার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সকলের সহযোগিতা চাই।