বরিশাল-কুমিল্লা ফাইনাল: তামিমের কাছে হেরে বিদায় সাকিবের

বিপিএলের পয়েন্টে টেবিলের শীর্ষে থাকায় দুটি কোয়ালিফায়ারে খেলার সুযোগ পায় রংপুর রাইডার্স। কিন্তু দুটি সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি সাকিব আল হাসানরা। উল্টো হারই সঙ্গী হয়েছে তাঁদের। প্রথম কোয়ালিফায়ারে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের কাছে ৬ উইকেটের হার দেখার পর আজ দ্বিতীয়টিতেও হেরেছেন তাঁরা।

ফরচুন বরিশালের কাছেও একই উইকেটের হার দেখেছে রংপুর। ৯ বল হাতে রেখে বরিশালের ৬ উইকেটের জয়ে ফাইনালে ওঠার আশা শেষ হয় রংপুরের। তামিম ইকবালদের কাছে হেরে যাওয়ায় পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলা সাকিবদের তাই ফাইনালে দর্শক হয়েই থাকতে হচ্ছে। আগামী শুক্রবার ফাইনালে তামিমের দলের প্রতিপক্ষ লিটন দাসের কুমিল্লা।

মিরপুরে ১৫০ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো করেছিলেন বরিশালের দুই ওপেনার তামিম ও মেহেদী হাসান মিরাজ। দুজনে মিলিয়ে ২১ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন। তবে ২ রানের ব্যবধানে দুজনকে আউট করে ম্যাচ জমিয়ে তোলার চেষ্টা করেন রংপুরের পেসার আবু হায়দার রনি। পরে অবশ্য রনির চেষ্টাকে সফল হতে দেননি তৃতীয় উইকেটে ৪৭ রানের জুটি গড়া সৌম্য সরকার ও মুশফিকুর রহিম।

২২ রান করে সৌম্য ফিরলেও জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন মুশফিক। ৩ রানের জন্য সৌম্যের সঙ্গে ফিফটির জুটি গড়তে না পারলেও কাইল মায়ার্সের সঙ্গে পেরেছেন। চতুর্থ উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটারের সঙ্গে কাঁটায় কাঁটায় ৫০ রানের জুটি গড়ে দলের জয়ের কাজটা সেরে রাখেন মুশফিক। মায়ার্সের ৩ ছক্কা ও ১ চারে ১৫ বলে ২৮ রানের ঝোড়ো ইনিংসটি সমাপ্তি হয় হাসান মাহমুদ ও রনি তালুকদারের দুর্দান্ত যুগলবন্দীতে। ফজলহক ফারুকির বলে মিড উইকেটে পুল করেছিলেন মায়ার্স। ক্যাচ ধরে যখন বাউন্ডারির বাইরে চলে যাচ্ছিলেন হাসান ঠিক তখনই মাঠের ভেতরে থাকা রনির উদ্দেশে বল ছুড়ে দেন তিনি। ক্যাচটি তালুবন্দী করতে ভুল করেননি রংপুরের ওপেনার।

দলীয় নৈপুণ্যে মায়ার্সকে আউট করলেও মাঠের লড়াইয়ে ঠিকই পরাজয় দেখেছেন হাসান-রনিরা। ৪৭ রানের দারুণ এক ইনিংসে বরিশালের জয় নিশ্চিত করেছেন মুশফিক। দলের জয়ের বাকি ৩১ রান ডেভিড মিলারকে সঙ্গী করে নিয়েছেন বাংলাদেশের উইকেটরক্ষক ব্যাটার। মুশফিক ৩৮ বলের অপরাজিত ইনিংসটি সাজিয়েছেন ৬ চার ও ১ ছক্কায়। আর ছক্কা মেরে জয় নিশ্চিত করা মিলার ১৮ বলে ২২ রানে অপরাজিত থাকেন।

এর আগে ধাক্কায় দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারের শুরুটা হয়েছিল রংপুরের। একের পর এক উইকেট হারিয়ে অল্প রানে অলআউট হওয়ার শঙ্কায় ছিল তারা। তবে শেষ দিকে ৫৯ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলে দলকে লড়াই করার মতো পুঁজি এনে দিয়েছিলেন শামীম হোসেন পাটোয়ারি। তাঁর ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে ফরচুন বরিশালকে ১৫০ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল রংপুর।

মিরপুরে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ১৮ রানে ৩ উইকেট হারায় রংপুর শুরুর তিন ব্যাটারের কেউই দুই অঙ্কের ঘর স্পর্শ করতে পারেননি। চারে নেমে শুরুর ধাক্কা সামলানোর চেষ্টার করেছিলেন প্রথম কোয়ালিফায়ারে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা জিমি নিশাম। কুমিল্লার বিপক্ষে অপরাজিত ৯৭ রান করা কিউই ব্যাটার আজ অবশ্য খুব বেশি করতে পারেননি। ব্যক্তিগত ২৮ রানে আউট হন জেমস ফুলারের বলে মুশফিকুর রহিমকে ক্যাচ দিয়ে।

নিশাম যখন আউট হন তখন রংপুরের দলীয় রান ৫ উইকেটে ৪৮। এতে শঙ্কা জাগে ১০০ রান তারা করতে পারবে কি না। সেই শঙ্কা পরে দূর করেছেন বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলা শামীম। অষ্টম ব্যাটার হিসেবে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৪ বলে অপরাজিত ৫৯ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছেন তিনি। ইনিংসটি সাজিয়েছেন সমান ৫ চার ও ছক্কায়। তাঁর ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের ঝড়টা গেছে ওবেদ ম্যাককয়ের ওপর দিয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসারের করা ইনিংসের ১৯তম ওভারটিতে তিন ছক্কা ও দুই চারে ২৬ রান নেন বাঁহাতি ব্যাটার।

শামীমকে দুর্দান্ত ইনিংসটি খেলার পথে অষ্টম উইকেটে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন আবু হায়দার রনি। বাঁহাতি পেসারের ৯ বলে ১২ রান খুব বেশি না হলেও ৩১ বলে অবিচ্ছেদ ৭২ রানের জুটি তাঁর পিচে থাকার কারণেই। প্রতিপক্ষকে ১৫০ রানের লক্ষ্যে দিতে কিছুটা অবদান রেখেছেন মোহাম্মদ নবী (১২), নুরুল হাসান সোহানও (১৪)। তবে দলের পরাজয়ে তাঁদের অবদান কোনো কাজে আসেনি রংপুরের। ২৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বরিশালের সেরা বোলার জেমস ফুলার।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

five × two =