সালেক সুফী
আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বর্তমান পর্বের ফাইনালিস্ট নির্ধারণের গুরুত্বপূর্ণ বর্ডার -গাভাস্কার টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টে পার্থে অপ্রত্যাশিতভাবে ২৯৫ রানের বিশাল ব্যাবধানে পরাজিত হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার এডিলেড ওভালে দিবারাত্রির গোলাপী বল টেস্টার দ্বিতীয় দিন শেষে দারুন ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে অস্ট্রেলিয়া কোনঠাসা করে ফেলেছে ভারতকে। ভারতের প্রথম ইনিংসের ১৮০ রানের জবাবে অস্ট্রেলিয়া ট্রাভিস হেডের মারকুটে ১৪০ রানের সুবাদে করেছিল ৩৩৭। ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট হারিয়ে করেছে ১২৮. এখনো পিছিয়ে ২৯ রানে। অবস্থাদৃষ্টে অনুমান করতে অসুবিধা নেই যে একমাত্র দৈব দুর্ঘটনা ছাড়া এই টেস্ট পরাজয় এড়ানোর কোনো বিকল্প এখন নেই ভারতের। অনেকটা নিশ্চিত করেই বলা যায় ৫ টেস্টের সিরিজ হয় আজ খেলা শেষেই ১-১ সমতায় পৌঁছাবে। অবশিষ্ট থাকবে ব্রিসবেন ,মেলবোর্ন ,সিডনির তিনটি টেস্ট।
সত্যি বলতে কি কেউ কখনো ভাবে নি পার্থের গতিময় বাউন্সি উইকেটে একচেটিয়া প্রাধান্য বিস্তার করে ভারত অস্ট্রেলিয়াকে চমকে দিবে। অস্ট্রেলিয়া কখনো ভারতের বিরুদ্ধে পার্থে টেস্ট হারেনি। এবারে প্রথাগতভাবে সিরিজের প্রথম টেস্ট ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত না করে পার্থে করা হয়। হয়তো পরিকল্পনা ছিল পেসি বাউন্সি উইকেটে কম স্বস্তি পাওয়া ভারতকে কোনঠাসা করা. কিন্তু সেটাই বুমেরাং হয় অস্ট্রেলিয়ার জন্য। নিজেদের পাতা ফাঁদে ধরা পরে তরুণ যশবি জশোয়াল আর মাস্টার ক্রাফ্টসমান বিরাট কোহলির অনবদ্দ ব্যাটিং আর জাসপ্রিত বুমরার গতির কাছে আত্মসম্পর্পন করে দীর্ঘদিন টেস্ট না খেলে মরচে ধরা অস্ট্রেলিয়া। ২৯৫ রানের বিশাল ব্যাবধানে হেরে নড়ে ছোড়ে বসে অস্ট্রেলিয়া।
পার্থ থেকে এডিলেড। পশ্চিম থেকে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া। লাল বল থেকে গোলাপী বল। পাল্টে যায় প্রেক্ষাপট। দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় ক্যাঙ্গারু প্রতীকের অস্ট্রেলিয়া। মিচেল স্টার্ক (৬/৪৮) , পাট কামিন্স (২/৪১) আর স্কট বল্যান্ডের ( ২/৫৪) গতির সামনে দাঁড়াতেই পারে নি ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং। ১৮০ রানে সাঙ্গ হয় প্রথম ইনিংস। বলবো না অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানরাও খুব স্বস্তিতে ব্যাটিং করেছে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ানদের সহজে হার না মানা মানসিকতার কারণেই সংগ্রাম করে ঘুরে দাঁড়ায় মারনাস লেবুচাঙ (৬৪) আর আগের টেস্টে অভিষিক্ত নাথান ম্যাককুইনি (৩৯) . পরিচিত ভৈরবী ছন্দে ব্যাটিং করে ট্রাভিস হেড (১৪১ বলে ১৪০) ভারতকে ব্যাক ফুটে ঠেলে দেয়। ১৭ চার আর ৪ ছয়ে সাজানো হেডের আক্রমণাত্মক টেস্ট ইনিংস অস্ট্রেলিয়াকে শুধু ১৫৭ রানে এগিয়েই দেয় নি. ভারতের মনোবল চূর্ণ করে দেয়। দ্বিতীয় ইনিংসে আবারো অস্ট্রেলিয়ন বোলারদের গতির মুখে ১২৮ রান করতেই প্যাভিলিয়নে ফিরে যায় জাসোয়াল ,রাহুল, গিল। কোহলী ,রোহিত। এখনো পিছিয়ে ২৯ রানে। উইকেটে লেট্ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের সঙ্গী করে খেলছে ঋষভ প্যান্ট। হয়ত আজ কিছু লিড পাবে ভারত। কিন্তু বর্তমান অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে টেস্ট পরাজয় রক্ষা করা কল্পনার অতীত। বলা যায় নিশ্চিত জয়ের পথে আছে অস্ট্রেলিয়া। যদি তাই হয় সিরিজে ফিরবে সমতা। ব্রিসবেন ,মেলবোর্ন , সিডনি টেস্ট দারুন জমে উঠবে। পার্থের পর ,এডিলেড ওভালেও দর্শক উপস্থিতির নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। জানি মরণ পন লড়াই করবে ভারত। অস্ট্রেলিয়া কিন্তু রক্তের স্বাদ পাওয়া আহত বাঘের মত। জয়ের গন্ধ পেলে জয় ছাড়া তৃপ্ত হয়না। দারুন উপভোগ্য সিরিজ দেখার জন্য মুখিয়ে আছে বিশ্ব ক্রিকেট সমাজ।
জানিনা মারকুটে পান্ট আজ ঘুরে দাঁড়িয়ে ভারতকে লড়াই করার পুঁজি এনে দিতে পারবে কিনা? বাড়তি বাউন্সের এই উইকেটে গোলাপী বল নিয়ে স্টার্ক ,কামিন্স ,বোলান্ড কিন্তু সহজ পাচ্চো নয়।