সালেক সুফী
এমসিজিতে ক্রিকেটের দুই বিশ্ব মোড়ল অস্ট্রেলিয়া ভারতের মধ্যে অনুষ্ঠিত চলমান টেস্ট সিরিজের গুরুত্বপূর্ণ চতুর্থ টেস্ট চতুর্থ দিন শেষে দারুন জমে উঠেছে। ব্যাট বলের লড়াই তুঙ্গে। প্রথম ইনিংসে ১০৫ রানে এগিয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়া চতুর্থ দিন শেষে ২২৮/৯ করে ৩৩৪ রানে এগিয়ে আছে। কাল সোমবার ম্যাচের শেষ দিন। এই টেস্টে এখন ভারত অথবা অস্ট্রেলিয়ার জয় এবং অমীমাংসিত হিসাবে শেষ সম্ভাবনা আছে। কিন্তু আসন্ন আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল খেলার যোগ্যতা নিশ্চিত করতে উভয় দল চাইবে টেস্ট জয় করতে। চার দিনে ৩ লক্ষ দর্শক মাঠে উপস্থিত হয়ে ব্যাট বলের তীব্র লড়াই দেখেছে। কাল স্টেডিয়ামে ধারণ ক্ষমতার দর্শক সমাগম হবে নিশ্চিত করে বলা যায়।
অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে সংগ্রহীত ৪৭৪ রানের জবাবে তৃতীয় দিনশেষে নীতিশ কুমার রেড্ডি (১০৫*) এবং ওয়াশিংটন সুন্দরের রূপকথার জুটিকে পুঁজি করে ভারত সংগ্রহ করে ছিল ৩৫৮/৯। আজ সকালে ভারতের ইনিংস শেষ হয় ৩৬৯ রানে। অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে থাকে ১০৫ রানে।
অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় ভারত। প্রথম ইনিংসে মেধাবী তরুণ স্যাম কনস্টাস বিশ্ব সেরা জাসপ্রিত বুমরাকে বিষয়টি করে কিছু অতি মানবীয় স্টোকস খেলে আলোড়ন তুলেছিল। এবার কিন্তু বুমরা সহজেই কনস্টাসের উইকেট তুলে নেয়। উইকেটে নড়বড়ে আস্থাহীন থাকা উসমান খোয়াজাও বেশি কিছু করতে পারেনি। লড়াই করছিলো মার্নাস লেবুচ্যাং। স্টিভ স্মিথের সামনে এই ইনিংসে ১০,০০০ টেস্ট রান অর্জনকারী এলিট ক্লাবে ঢুকে পড়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু সিরাজ স্মিথকে স্বল্প রানে (১৩) ফিরিয়ে দেয়ার পর নতুন স্পেলে বল করতে এসে ঝড় তোলে বুমরা। সেই ঝড়ে পতঙ্গের মত উড়ে যায় ট্রাভিস হেড, মিচেল মার্শ আর আলেক্স কারী। ৮০ থেকে ৯১ মাত্র ১১ রানের ব্যাবধানে অস্ট্রেলিয়া বাটটিংয়ের মেরুদন্ড ভেঙ্গে পড়ার পর ঘুরে দাঁড়ায় মার্নাস লাবুচ্যাং আর সাহসী অধিনায়ক পাট কামিন্স। ওদের যোগাযোগে ৭ম উইকেট জুটিতে ৫৭ রান যোগ হওয়ায় অস্ট্রেলিয়া বাটিংয়ের ধস থেমে যায়। সিরাজ মার্নাস লাবুচ্যাংকে ৭০ রানে ফেরানোর পর লেজের সারির বাটসমেনদের সঙ্গী করে লড়াই জারি রাখে। কিন্তু দলীয় ১৭৩ রানে ৪১ রান করা কামিন্সকে জাদেজা ফেরালে ম্যাচ ভারতের দিকে ঝুকে পরে। ভারতের লিড তখন ২৭৮। বিশ্বাস করুন বা নাই করুন দলের বিপর্যয় মুহূর্তে নাথান লায়নের সঙ্গে বীরের মত লড়াই করে শেষ ব্যাটসম্যান স্কট বোলান্ড। অজেয় শেষ উইকেট জুটিতে দিনশেষ যোগ হয় অমূল্য ৫৫ রান। লায়ন ৪১ রান আর বোলান্ড ৬৫ বল খেলে ১০ রানে অপরাজিত থাকে। ৯/২২৮ রানে দিন শেষ করা অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে ৩৩৩ রানে। এমসিজিতে শেষ দিনে অস্ট্রেলিয়ার শেষ উইকেট তুলে নিয়ে টেস্ট জয় করতে হলে ভারতকে নতুন মাইল ফলক অর্জন করতে হবে। ভারত হেরে গেলে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল খেলার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে। খেলা অমীমাংসিত ভাবে শেষ হলেও ভারতের জন্য মঙ্গল হবে না। কাল অবশ্য দুটি দল চাইবে ম্যাচ জিতে নিতে। শেষ দিনের ক্রিকেট রোমঞ্চ দেখতে নিঃসন্দেহে এমসিজিতে ভিড় জমাবে ৯০,০০০ ক্রিকেট ভক্ত, নানা ডিভাইস দিয়ে খেলা দেখবে কোটি ক্রিকেট অনুরাগী। খেলার ফলাফল যাই হোক এবারের বক্সিং ডে টেস্ট নিতিন কুমার রেড্ডি, স্টিভ স্মিথ, মার্নাস লাবুচ্যাং, স্যাম কনস্টেস আর জাসপ্রিত বুবরার কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবে দীর্ঘদিন। ভারত কিংবদন্তি বিরাট কোহলী ম্যাচের প্রথম দিন নবীন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানকে আঘাত করে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট সমাজে “ক্লাউন কলি” অভিধায় নিন্দিত হয়েছে।
স্মরণীয় এই টেস্ট ম্যাচে টেলিভশন আম্পায়ার হিসাবে সংযুক্ত আছে আছে বাংলাদেশের কৃতি আম্পায়ার শারফদৌলা সৈকত।