বর্ষায় চুলের বাড়তি যত্ন

নীলাঞ্জনা নীলা

নারীর সৌন্দর্য তার চুলে। দীঘল কালো চুলে নারী যেন আরো অপরূপা হয়ে ওঠে। নানি দাদিদের গল্পে শোনা যায় চুলই ছিল নারীর পরিচয়! বড় লম্বা চুল ছিল তখন সৌখিনতার অংশ। তবে এখন স্টাইলের অংশ হিসেবে শুধু দীঘল কালো লম্বা চুল নয় বরং যোগ হয়েছে বিভিন্ন হেয়ারকাট ও হেয়ার কালার।

ফ্যাশন সচেতন নারীরা নিজের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে কালো চুলের উপর করে থাকে বিভিন্ন রঙের কালার ও মুখের গড়ন অনুযায়ী বেছে থাকে বিভিন্ন হেয়ারকাট। তবে চুলের হেয়ারকাট বা কালার যাই হোক না কেন চুলের চাই যত্ন। দীর্ঘদিন চুলের যত্ন না করলে চুলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। বর্ষাকালে আমাদের ত্বকে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয় সেই সাথে প্রভাব পড়ে চুলে ও মাথার চামড়ায়। সাধারণত বর্ষার সকালে সারাদিনের আবহাওয়া কেমন যাবে বোঝা কঠিন। সকালে ঝলমলে রোদ থাকলেও কিছুক্ষণ পরে আবার বৃষ্টি। আবার বৃষ্টির পর ভ্যাপসা গরম। এই রোদ এই বৃষ্টির ফলে আমাদের চুল ঘেমে যায়। এতে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। আবহাওয়া হয়ে যায় স্যাঁতস্যাতে, এর প্রভাব পড়ে চুলে। অন্যান্য সময়ের তুলনায় বর্ষাকালে চুলের একটু বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। জেনে নেওয়া যাক কেমন করে বর্ষায় নিবেন চুলের যত্ন।

ভালো করে পরিষ্কার

যেকোনো ঋতুতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিকল্প কিছুই হয় না। তাই চুল নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। চুল পরিষ্কার রাখার অন্যতম উপায় হচ্ছে ভালো করে শ্যাম্পু করা। হাতের কাছে যে শ্যাম্পু আছে, সে শ্যাম্পু ব্যবহার করার অভ্যাস না করে বরং আপনার চুলের জন্য উপযোগী এমন শ্যাম্পু বেছে নিয়ে তা দিয়ে সপ্তাহে তিন দিন গোসল করুন। শ্যাম্পু ভালো করে চুলের মধ্যে ম্যাসাজ করুন। এতে চুলের মধ্যে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাবে ও ভেতর থেকে ময়লা দূর হবে। অনেকের প্রতিদিন চুলে শ্যাম্পু করার অভ্যাস থাকে। কিন্তু প্রতিদিন চুলের শ্যাম্পু করলে চুলের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে চুল হয়ে উঠে আরও বেশি রুক্ষ। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন শ্যাম্পু করাই যথেষ্ট। বর্ষাকালে চুল বৃষ্টির পানি থেকে বাঁচাতে কিংবা ধুলাবালি থেকে বাঁচাতে মাথায় কাপড় ব্যবহার করতে পারেন। অনেকেই নিয়মিত শ্যাম্পু ব্যবহার করলেও কন্ডিশনার ব্যবহার করেন না। কিন্তু ভালো মানের একটি কন্ডিশনার আপনার চুলের রুক্ষতা কমিয়ে দিতে সাহায্য করবে। তাই শ্যাম্পুর পর অবশ্যই সপ্তাহে একদিন হলেও কন্ডিশনের ব্যবহার করুন। শ্যাম্পু বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সতর্ক না হলে উপকারের চেয়ে বরং ক্ষতি হবে। আপনার চুলের জন্য উপযোগী নয় এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করলে চুল পড়ার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। তাই কেনার আগে শ্যাম্পুতে কি ধরনের উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে এবং তা আপনার চুল ও ত্বকের জন্য উপযোগী কিনা তা দেখে বাছাই করে কিনতে হবে।

খুশকি দূর করতে

বর্ষাকালে আবহাওয়া ভেজা থাকার কারণে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বেড়ে যায়। মাথার চামড়ায় ছত্রাক সংক্রমণের ফলেই দেখা দেয় খুশকি। অতিরিক্ত খুশকির কারণে মাথায় চুলকানি হতে পারে ও চুল ঝরে যেতে পারে। চুলে খুশকি প্রবণতা কমানোর জন্য চুল নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। অতিরিক্ত খুশকি দেখা দিলে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। অনেক সময় চুলে এতো বেশি খুশকি হয় যে মাথার চুল উঠে এসে টাক হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়া ঘরোয়া নানা রকম পদ্ধতির অনুসরণ করেও মাথার খুশকি কিছুটা কমানো সম্ভব। চুলের খুশকি দূর করার জন্য নিয়মিত খাঁটি নারিকেল তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। রাতে ঘুমানোর আগে নারিকেল তেল ভালো করে ম্যাসাজ করে চুলের প্রতিটি অংশ লাগিয়ে সকালে শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে। নারিকেল তেলে লেবুর রস মিশিয়েও চুলে ব্যবহার করা যেতে পারে। খুশকি দূর করতে টক দই মাথায় ম্যাসাজ করুন। টক দইয়ে থাকে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল যা খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া মাথায় ব্যবহার করতে পারেন পেঁয়াজের রস। নিয়মিত পেঁয়াজের রস মাথায় ব্যবহার করলে খুশকির প্রবণতা অনেক অংশে কমে আসে। মেথি, রিঠা এসবও খুশকি দূর করে। তবে খুশকি দূর করতে খেয়াল রাখতে হবে চুল যাতে দীর্ঘ সময় ঘামে ভিজে না থাকে। ভেজা স্থানেই খুশকি হওয়া সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই চুল সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও শুকনা রাখার চেষ্টা করতে হবে।

উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে

সবাই চায় উজ্জ্বল ঝলমলে চুল। কিন্তু বর্ষাকালে সাধারণত চুল তার নিজস্ব উজ্জ্বলতা হারিয়ে হয়ে উঠে মলিন এবং দেখা যায় দিনের শুরু থেকে চুল নেতিয়ে থাকে। প্রাণহীন এবং সজীবতা হারানো  চুল দেখতে কারোরই ভালো লাগে না। উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে নিয়মিত তেল ব্যবহার করতে হবে এবং ডাবের পানি দিয়ে চুল ধুলে হারানো উজ্জ্বলতা ফিরে আসে। ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ডিম চুলের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে নিয়ে আসতে সাহায্য করে। ডিমের সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে তা চুলে ব্যবহার করা যেতে পারে। পাকা কলা চটকে নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করলে চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া চুলে ব্যবহার করতে পারেন অ্যালোভেরা। কিন্তু সরাসরি অ্যালোভেরা গাছ থেকে ছিঁড়ে ব্যবহার না করে তার সাথে লেবুর রস কিংবা তেল মিশিয়ে ব্যবহার করা উচিত।

ভালো মানের পণ্য ব্যবহার

বিভিন্ন ব্র্যান্ড চুলের জন্য শ্যাম্পু, তেল, হেয়ার মাস্ক ইত্যাদি তৈরি করে থাকে। কিন্তু আমরা অনেক সময় না বুঝে যেকোনো ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট ব্যবহার করি। যা আমাদের চুলের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে। প্রোডাক্টের উপাদান যদি চুলের জন্য উপযোগী না হয় তাহলে তা উপকারের থেকে বেশি ক্ষতি করবে। তাই হেয়ার কেয়ার করার জন্য বাছাই করা প্রোডাক্টটি অবশ্যই যাতে আপনার চুলের জন্য উপযোগী হয় এবং ভালো ব্র্যান্ডের হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

সঠিক চিরুনি ব্যবহার

চুলের নানাভাবে যত্ন করলেও সবচেয়ে বেশি অবহেলা করা হয় চুল আঁচড়ানোর সময়। যেনতেন একটি চিরুনি দিয়ে আমরা চুল আঁচড়ে ফেলি। কিন্তু খারাপ মানের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানোর ফলে আমাদের চুলে অনেক ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি চুল গোড়া থেকে ঝরে যেতে পারে। তাই নিয়মিত চুল আঁচড়ানোর জন্য একটি ভালো মানের চিরুনি বাছাই করে নিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন চুলের জন্য সবচেয়ে উপকারী চিরুনি হচ্ছে কাঠের তৈরি চিরুনি। কাঠের চিরুনি ব্যবহার করলে মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। ফলে চুলের ফলিকলে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায়। এ ছাড়াও মাথার ত্বক থেকে যে সেবাম বের হয়, তা মাথার ত্বকের সর্বত্র পৌঁছে দেওয়া সহজ হয় কাঠের চিরুনি ব্যবহারে।

বাড়তি সতর্কতা

চুলের যত্নে অবশ্যই বাড়তি কিছু দিয়ে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন চুল যদি রঙ করা থাকে তাহলে চুলে পারপেল শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া হেয়ার ড্রায়ার কিংবা স্ট্রেটনার ব্যবহার করলে চুলে অবশ্যই হিট প্রটেক্টর ব্যবহার করে নিতে হবে। অনেকেই নিয়মিত চুল আঁচড়ায় না ফলে চুলে জট হয়ে চুল ঝরে যাওয়া সম্ভবনা থাকে। তাই প্রতিদিন চুল আঁচড়াতে হবে। কিন্তু ভেজা চুল আঁচড়ানো যাবে না। কারণ ভেজা অবস্থায় চুলের গোড়া নরম থাকে, ফলে চুল আঁচড়ালে চুল পড়ে যাবে।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: আরশী

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

20 − 4 =