বলিউডের মিষ্টি মেয়ে টাবু

নীলাঞ্জনা নীলা

পুরো নাম তাবাসসুম ফাতেমা হাশমি হলেও সকলে মিষ্টি মেয়ে টাবু নামেই চেনে। অমায়িক হাসি এবং ন্যাচারাল অভিনয় দিয়ে বলিউডে তিনি রাজত্ব করছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। দর্শকদের গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার পাশাপাশি বলিউড পাড়ার অনেক সেলিব্রেটিদেরও প্রিয় অভিনেত্রী টাবু। বলা হয়, তার অভিনয়ের মধ্যে রয়েছে এমন সরলতা, এখনকার নায়িকাদের মধ্যে যা খুঁজে পাওয়া যায় না। অভিনেত্রী টাবু ছাড়া ব্যক্তি টাবুরও রয়েছে বেশ প্রশংসা। তার ব্যক্তিত্ব, চিন্তাধারা দিয়ে তিনি প্রশংসা কুড়িয়েছেন বরাবর। ভালোবাসা পেয়েছেন বলিউডসহ দুই বাংলাতেও। সফল এবং অসফল দু’রকমের সিনেমা নিয়েই কাটছে তার অভিনয়জীবন। বলিউডকে উপহার দিয়েছেন বেশ কিছু অসাধারণ সিনেমা, যা সারাজীবন মনে রাখবে দর্শক।

টাবু বরাবরই মিডিয়া এবং সাক্ষাৎকার থেকে দূরে থাকেন। অন্যান্য সেলিব্রিটিদের মতো তাকে খুব বেশি একটা সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে দেখা যায় না। কেন তিনি সাক্ষাৎকার দিতে চান না, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন সাক্ষাৎকারে করা প্রশ্ন তার পছন্দ হয় না। বেশিরভাগ সময় তাকে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা হয়। তিনি ক্যামেরার সামনে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। মিডিয়াতে কাজ করলেও তিনি বরাবর নিজেকে আড়ালে রাখতেই ভালোবাসেন। যতটুকু নিজেকে তুলে ধরা উচিত ঠিক ততটুকুই সকলের সামনে তিনি নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। এর বাইরে তিনি অতিরিক্ত প্রচার পছন্দ করেন না। তিনি যেহেতু সিনেমা নিয়ে কাজ করেন এবং সিনেমার মাধ্যমে পরিচিতি পেয়েছেন, তাই তিনি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন সাক্ষাৎকারে গিয়ে নিজের কাজ সম্পর্কে আলোচনা করতে। তার বাইরে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অতিরিক্ত প্রশ্ন করা তার কাছে অপ্রাসঙ্গিক মনে হয় বলেই তিনি সাক্ষাৎকার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন।

একটি সাক্ষাৎকারে তিনি তার ছোটবেলার কথা বলেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়, তিনি যখন খুব ছোট ছিলেন তখন তার বাবা-মা আলাদা হয়ে যান। তার বাবাকে তিনি খুব বেশি কাছে পাননি। ১৯৮৩ সালে তিনি প্রথম মুম্বাই শহরে আসেন এবং মাত্র ১৪ বছর বয়সে তার সিনেমায় যাত্রা শুরু হয়। খুব অল্প বয়সে কোন জগতে কাজ করলে তিনি ভালো করতে পারবেন তা তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন।

টাবুর সৌন্দর্য এবং ফ্যাশন সেন্স নিয়েও প্রশংসিত হয়েছেন বলিউড এবং দর্শকদের কাছে। ১৯৯৬ সালে টাবুর আটটি সিনেমা মুক্তি পায়, যার মধ্যে ‘সাজন চলে সাসুরাল’ এবং ‘জিত’ বাণিজ্যিক সফলতা পায়। তিনি বহু ব্যবসাসফল দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমায় অভিনয় করেন। তামিল সিনেমাতেও ছিল তার বিচরণ। সেখানেও তিনি বেশ প্রশংসিত হয়েছেন। তার বেশিরভাগ তামিল সিনেমা ব্যবসাসফল। অনুপম চোপড়া তাকে ‘শ্বাসরুদ্ধকরভাবে সংবেদনশীল’ বলে প্রশংসা করেন। অনেকে তাকে আবেদনময়ী নায়িকা হিসেবে জানেন। কিন্তু তার আবেদন অন্য নায়িকাদের মতো নয়, একটু ভিন্ন। সব কিছু মিলিয়ে তিনি ন্যাচারাল সুন্দরি।

তার অভিনীত ‘কালাপানি’ বেশ প্রশংসিত হয়েছিল। ‘কাধল দেশম’ সিনেমার মাধ্যমে তিনি তামিল সিনেমায় প্রবেশ করেন। ২০০০ সালে টাবুর ৫টি ছবি মুক্তি পেয়েছিল। প্রায় প্রতি বছরই তিনি বেশ কয়েকটি ব্যবসাসফল সিনেমা করেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে টাবুর সিনেমার সংখ্যার কমতে থাকে। তিনি খুব বেছে কাজ করা শুরু করেন। পর্দার বাইরের টাবু এবং অভিনেতা অজয়ের রসায়ন নিয়ে রয়েছে আলোচনা ও সমালোচনা। পর্দায় তাদের দুজনের জুটি বেশ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। বাস্তবে তারা একে অপরের বেশ ভালো বন্ধু। কলেজ জীবন থেকেই তাদের বন্ধুত্ব শুরু। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে এবং সিনেমার শুটিংয়ে তাদের খুনসুটি নজরে পড়ে।

গত বছর টাবু ৫৩ বছরে পা দিয়েছেন। কিন্তু জীবনের এতোগুলো বছর কাটিয়ে দিয়েছেন একাই। বিয়ে কিংবা সংসার কোনো কিছুতেই নিজেকে আবদ্ধ করেননি তিনি। কেন টাবু বিয়ে করেননি এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় হাজার বার। এছাড়া তার প্রেমের জীবন নিয়েও রয়েছে নানা ধরনের গুঞ্জন। কিন্তু টাবু সেইসব প্রশ্নের জবাব হাসতে হাসতে উড়িয়ে দেন। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আলোচনা করা তার পছন্দের নয়। তিনি মনে করেন সেলিব্রেটি হলেও কিছু বিষয় একান্তই তার, যা জানার অধিকার কারও নেই।

বাণিজ্যিক সিনেমা থেকে শুরু করে সব ধরনের সিনেমাতে তিনি অভিনয় করেছেন। মিষ্টি মেয়ের চরিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি পুলিশ অফিসার, গোয়েন্দা, উকিল, পাইলট এমন কোনো চরিত্র নেই যেখানে তাকে দেখা যায়নি। তিনি অভিজ্ঞতা অর্জন করতে ভালোবাসেন এবং চরিত্রের প্রয়োজনে বারবার নিজেকে বদলে ফেলতে পছন্দ করেন। তাই তিনি সব ধরনের চরিত্রের চ্যালেঞ্জ নিতে চান। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, একসময় বলিউড পরিচালকরা নায়িকাদের বিভিন্ন ধরনের চরিত্র দিতে চাইতো না। কিন্তু এখন তাদেরও চিন্তা-ভাবনার পরিবর্তন হয়েছে এবং নায়িকাদের ভিন্নধর্মী চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ দিচ্ছেন। একাধারে একই চরিত্রে অভিনয় করলে নিজের অভিনয় দক্ষতা সম্পর্কে জানা যায় না। বরং বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করার মাধ্যমে নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায় বলে জানান টাবু। ভিন্নধর্মী চরিত্রে অভিনয় করা একটি চ্যালেঞ্জ। তিনি সবসময় সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন বলেই আজকে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছেন। নায়িকা মানেই শুধু সরলতা, মিষ্টি মেয়ে, ভালো মেয়ে সে ধারণা ভেঙে দিয়েছেন।

অভিনয় জগতে আসার পর তাকে বিভিন্ন ধরনের কথা শুনতে হয়েছে। বৈচিত্র্যময় অভিনয় করার জন্য তাকে অনেকে বলেছে এতো চরিত্রে অভিনয় না করতে। কিন্তু তিনি কখনও কারো কথা কানে নেননি। তিনি নিজেকে একটি নিয়মের মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলতে চান না। বরং বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান। সেজন্য তিনি বাণিজ্যিক সিনেমা ছাড়াও বিভিন্ন ব্যতিক্রমী সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন। শুধু হিন্দি ভাষা নয় বিভিন্ন ভাষার সিনেমায় অভিনয় করতে দেখা গেছে তাকে।

অভিনয় যাত্রা শুরুর পরে তার মাথায় ছিল সব ধরনের কাজ করতে হবে। বাণিজ্যিক কাজও করতে চান, ব্যতিক্রমধর্মী অভিনয় করতে চান, ভালো মেয়ে হতে চান, খারাপ মেয়েও হতে চান। সব ধরনের কাজই তিনি করতে আগ্রহী ছিলেন। ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুই ধরনের চরিত্রে কাজ করতে তিনি আগ্রহী। সিনেমা করে অনেক পয়সা আয় করতে হবে, এটি কখনোই তার ধ্যান-ধারণা ছিল না। নিজেকে একজন প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী হিসেবে তৈরি করাই লক্ষ্য ছিল।

১৯৯৭ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় নিয়ে বাস্তবধর্মী গল্পে অভিনয় করেন। কমেডি সিনেমাতেও তাকে অভিনয় করতে দেখা যায়। দীর্ঘদিন অভিনয় জগতে কাজ করে তিনি নিজের মধ্যে এখন বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করেন। এ সময় এসে তিনি কাজের পরিমাণের থেকে কাজের মানের দিকে বেশি নজর রাখেন। মিডিয়াতে কাজ করার আগে ছোটবেলা থেকেই টাবু বেশ চুপচাপ ধরনের মেয়ে হিসেবে সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু মিডিয়াতে মানুষের সঙ্গে কাজ করতে হয়, তাই কমিউনিকেশন এবং কথা বলাটা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি ধীরে ধীরে মানুষের সঙ্গে মেশার অভ্যাস করেছেন।

লেখটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: সেলিব্রেটি

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

twenty − 15 =