বলিউড ‘ড্রিম গার্ল’ হেমা মালিনি

ড্রিমগার্ল বলে খ্যাত হেমা মালিনি বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘শোলে’-তে বাসন্তী চরিত্রে অভিনয়ে মুগ্ধ কেরেছেন। শুধু রুপালী পর্দাই নয়, ক্যামেরার পেছনে পরিচালনার দায়িত্বেও সফল হেমা মালিনি। বড় পর্দায় ঝড় তোলা হেমা একসময় প্রবেশ করেন রাজনীতির অঙ্গনে। ১৯৪৮ সালের ১৬ অক্টোবর হেমা মালিনি তামিলনাড়ুতে জন্মগ্রহণ করেন। তামিল ইয়েনঙ্গার এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম হওয়া এই মেয়েটিকে দেখে সকলেই মুগ্ধ হয়েছিলেন। কেউ হয়তো ভবিষ্যৎদ্বাণীও করেছিলেন, একদিন এই মেয়ে জগৎজোড়া খ্যাতি অর্জন করবে। বাবা-মায়ের সঙ্গে হেমার বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। বাবা-মায়ের উৎসাহেই সিনেমার জগতে আসা।

শুরু করেছিলেন তামিল ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে। বিশেষত ষাটের দশকে পুরুষশাসিত বলিউডপাড়ায় নিজের সতন্ত্র জায়গা করে নেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। ১৯৭৭ সালে বলিউডে ‘ড্রিম গার্ল’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে রূপালী পর্দায় তার আগমন ঘটে। সেই থেকেই তার নামের সঙ্গে ‘ড্রিম গার্ল’ শব্দটি জুড়ে দেওয়া হয়। আস্তে আস্তে হয়ে ওঠেন বক্স অফিসের তুরুপের তাস। এর মাধ্যমে তিনি বলিউডের সর্বাধিক উপার্জনকারি অভিনয়শিল্পী হিসেবে আত্নপ্রকাশ করেন। ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৭৫ সালে হেমা বলিউডের সর্বাধিক উপার্জনকারী অভিনয়শিল্পী ছিলেন। অভিনয়ে যথেষ্ট পারদর্শীতা এবং দর্শকপ্রিয়তা যে হেমার সেই হেমা বিদ্যায়তনে খুব বড় মেধার স্বীকৃতি পান নি। সেই দশম শ্রেণিপর্যন্তই লেখাপড়া করেছিলেন। অবশ্য তার আগ্রহই তো ছিল অভিনয় নিয়ে। অভিনয়ের ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললে হয়তো সাফল্য পেতেন। তার আর প্রয়োজন দেখা দেয়নি।

অবশ্য এত তারকাখ্যাতির সময়ে হেমার বাবা-মা কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়েন। তখন ধর্মেন্দ্রর সঙ্গে হেমার ভালো সম্পর্ক। ধর্মেন্দ্র বিবাহিত। এই বিবাহিত ব্যক্তির সঙ্গে মেয়ের সম্পর্কটি ভালো ঠেকেনি। তাই শ্যুটের সময় বাবা কিংবা মা সঙ্গে যেতেন। কিন্তু হেমার মনে হয়েছিল তিনি ধর্মেন্দ্রর দ্বিতীয় স্ত্রী হবেন। মেয়ের বিয়ে দিবেন কিভাবে? কার সঙ্গে দেবেন? ২০০৭ সালে প্রকাশিত তার লেখা বই “হেমা মালিনী: দ্য অথরাইজড বায়োগ্রাফি”-তে এই বিষয়টি উঠে এসেছে। তখন জিতেন্দ্রর সঙ্গে জুটি হিসেবে হেমা সফল। এই দুই জুটি মিলে কত ছবি করেছেন। কিন্তু হেমার প্রণয় চলে ধর্মেন্দ্রর সঙ্গে। পরিবার থেকে জিতেন্দ্রর সঙ্গে বিয়ের তোড়জোর চলছিল।

হেমা মালিনীর বাবা ধর্মেন্দ্রর সাথে তার বিয়ের বিপক্ষে ছিলেন এবং এই কারণে হেমা যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন বিয়ে করতে পারেননি। সে সময় সঞ্জীব কুমার তার ক্যারিয়ারের শীর্ষে ছিলেন এবং তিনি কেবল হেমাকে পছন্দ করতেন না, তার সঙ্গে থিতু হতেও চেয়েছিলেন। জিতেন্দ্র যখন বিয়ে করার জন্য পরিবারের চাপে ছিলেন, তখন তিনি এবং হেমার পরিবার তাদের দুজনকেই বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। অন্যদিকে হেমা ও জিতেন্দ্র একে অপরকে ভালো বন্ধু হিসেবে ভাবতেন। হেমা ও জিতেন্দ্রর বিয়ে ধর্মেন্দ্রই অনেকটা ফিল্মি ধাঁচে বন্ধ করেছিলেন। সেও সিনেমার গল্প হতে পারে।

ধর্মেন্দ্রকে বিয়ে করার জন্য হেমাকে তার ধর্ম পরিবর্তন করতে হয়েছিল, কারণ ধর্মেন্দ্র ইতিমধ্যেই বিবাহিত ছিলেন। হিন্দু বিবাহ আইনের কারণে তিনি প্রথম স্ত্রীকে তালাক না দিয়ে পুনরায় বিয়ে করতে পারেননি। আর ধর্মেন্দ্রর প্রথম স্ত্রী তাকে তালাক দিতে রাজি হননি। ২১ আগস্ট ১৯৭৯-এ, হেমা এবং ধর্মেন্দ্র উভয়েই ইসলাম গ্রহণ করেন। এবং তারপর তারা তাদের নাম পরিবর্তন করেন এবং ইসলামী রীতি অনুযায়ী বিয়ে করেন। তাদের মেয়ে এশা ও অহনা। এশাও অভিনয় করেন।

হেমার আগ্রহ বরাবরই শিল্পকলার দিকে বেশি। নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেন নাট্যবিহার কলাকেন্দ্র। বড় পর্দার পাশাপাশি ছোট পর্দাতেও অভিনয় করেন। অনেকে বলেন, হেমার সাফল্যের মূলমন্ত্র তার নাচে। প্রায় সব ধরনের নাচেই তিনি দক্ষতা দেখিয়েছেন। পশ্চিমা ঘরানার কিছু নাচও তিনি জানেন। রাজনীতিতেও একসময় নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। সেখানেও তিনি সুনামই অর্জন করেছেন। এ পর্যন্ত সর্বমোট ১১ বার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। এছাড়া ২০০০ সালেই তাকে পদ্মশ্রী সম্মাননা দেওয়া হয়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

3 × 2 =