সালেক সুফী
অনবদ্ধ মুশফিকুর রহিমের জাদুগরি ১৯১ রানের মহিমান্বিত ইনিংসের সঙ্গে সাদমান (৯৩), মেহেদী মিরাজ (৭৭), লিটন দাস (৫৬), মোমিনুল হক (৫০) রান যোগ হয়ে ৫৬৫ রান পাহাড়ে কাল উঠেছে বাংলাদেশ। অনেক মাইল ফলকের পদচিহ্ন একে দিয়ে চতুর্থ দিনশেষে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে ৯৪ রানে এগিয়ে বাংলাদেশ। ম্যাচ রক্ষার লড়াইয়ে দিনশেষে পাকিস্তান করেছে ১/২৩। ম্যাচ থেকে বাংলাদেশের পরাজয়ের সম্ভাবনা উবে গাছে। প্রাণহীন ব্যাটিং উইকেটে পরিণতি অমীমাংসিত থাকা। অতিনাটকীয় কিছু হলে বাংলাদেশের জয়। প্রথম ইনিংসে পাকিস্তান ৪৪৮/৬ ইনিংস ঘোষণা করেছিল।
বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে সচরাচর এমন দ্যুতিময় দিন কম এসেছে। বহুদিনের খরা কাটিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের মাটিতে শত রান করলো বাংলাদেশের লিটল মাস্টার মুশফিকুর রহিম। হতে পারতো ওর নিজের চতুর্থ ডাবল সেঞ্চুরি। সাথে চার চারটি অর্ধশত। দুটি শত রানের পার্টনারশিপ। হোক না প্রাণহীন উইকেট। পাকিস্তানের ছিল চার চার জন দুরন্ত গতির উঁচু মানের পেস বলার।
যে কোনো বিবেচনায় আলোকোজ্জ্বল ব্যাটিং। বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে একটি রোদেলা দিন হয়ে থাকবে বহুদিন। স্মরণে রাখতে হবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৩ টেস্ট খেলে একটিতেও জয় পায়নি বাংলাদেশ। হেরেছে ১২টি। খুলনায় অনুষ্ঠিত একটি মাত্র টেস্ট ড্র হয়েছিল। এবার জয় আসবে নিশ্চিত নয়। তবে এই টেস্টের অর্জন বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাস যোগাবে দারুনভাবে।
কাল ম্যাচের চতুর্থ দিনের সকালে দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান মুশফিক (৫৫) এবং লিটন (৫২) যখন ব্যাটিং শুরু করে তখনও বাংলাদেশ ৫ উইকেট হাতে নিয়ে ১৩২ রান পিছিয়ে ছিল। ৫৬ রান করে লিটন ফিরে যাবার পর চার উইকেট হাতে নিয়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে ছিল ১১৬ রানে। এর পর মুশফিক মিরাজ যেভাবে বুক চেতিয়ে লড়াকু ক্রিকেট খেলেছে তাকে রূপকথা বলাই ভালো। ওদের দৃঢ়তা, ধৈর্য্য এবং খেলার মাধুর্য বর্ণনা করতে নেভিল কার্ডাস বা শংকরীপ্রসাদকে প্রয়োজন।
পাকিস্তানী বোলারদের হতাশ করে এই জুটি একেকটি মাইল ফলক পেরিয়ে সপ্তম উইকেট জুটিতে ১৯৬ রান যোগ করে। ম্যাচটি পাকিস্তানের হাত গলে নিশ্চিতভাবে বেরিয়ে যায়। একটি প্রথম সারির স্পিনার না থাকার অভাব দারুনভাবে অনুভব করে পাকিস্তান।
৩৪১ মিনিট ব্যাটিং করে ২২টি চার এবং ১ টি ছয়ে সাজানো মুশফিকের মহাকব্যিক ইনিংসটি দুই শতক থেকে মাত্র ৯ রানের দুরত্বে ১৯১ শেষ হয়। মেহেদী হাসান মিরাজ অনবদ্য খেলে মূল্যবান ৭৭ রান যোগ করে। আজ যদি প্রথম সেশনে জলদি কয়েকটি উইকেট তুলে নিতে পারে বাংলাদেশ তাহলে ম্যাচ বাঁচাতে লড়াই করতে হবে পাকিস্তানকে। ম্যাচটি অমীমাংসিত থাকলেও মাথা উঁচু রেখেই টেস্ট শেষ করবে বাংলাদেশ। পরিবর্তিত নতুন বাংলাদেশ যেন বসন্ত বাতাসে উড়ছে।