বাঁচা মরার ম্যাচে জিতে এগিয়ে যাবার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখলো বাংলাদেশ

 

আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচটি ছিল বাংলাদেশের বাঁচা মরার লড়াই। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে ৮ রানে জিতে বাংলাদেশ টুর্নামেন্টে বেঁচে থাকার ক্ষীণ আশা জিইয়ে রেখেছে। গ্রুপ পর্যায়ের শেষ ম্যাচে শ্রীলংকা আফগানিস্তানকে হারিয়ে দিলেই শুধুমাত্র বাংলাদেশ গ্রুপ অফ ফোরে যেতে পারবে।

মঙ্গলবারের ওই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ৪ পরিবর্তন এবং ৪ ফ্রন্ট লাইন বোলার নিয়ে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়েছিল বাংলাদেশ। টস ভাগ্য সহায় থাকায় ধীর গতির উইকেটে প্রথম ব্যাটিং করে উদ্বোধনী জুটিতে তানজিদ তামিম এবং সাইফ হাসানের উদ্যমী ব্যাটিং বাংলাদেশ ইনিংসকে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করিয়ে ছিল।

উভয় ব্যাটসম্যান পজিটিভ মানসিকতা নিয়ে খেলায় ৬.৩ ওভারে সংগ‍ৃহীত হয়েছিল ৬৩ রান। কিন্তু খ্যাতিমান লেগ স্পিনার আফগান অধিনায়ক রাশিদ খান এসে ভালো খেলতে থাকা সাইফ হাসানকে (৩০) ফিরিয়ে দেয়ার পর পথ হারায় বাংলাদেশ। ৬-১৬ ওভার গুলোতে আফগানিস্তানের বিচিত্র এবং মানসম্পন্ন স্পিনাররা ধীর গতির উইকেট কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ ইনিংসের লাগাম টেনে ধরে।

ব্যর্থ হয় লিটন (১১ বলে ৯ রান করে), তানজিদ তামিমের ঝাড়ো গতির ইনিংস শেষ হয় ৩১ বলে ৫২ রানে। রাশিদ খান (২/২৬)  এবং নূর আহমেদ (২/২৪) বাংলাদেশ ইনিংসকে স্থবির করে দেয়। মিডল অর্ডারে তাওহীদ হৃদয়, জাকের আলী আর শামীম হোসেন নিজেদের মেলে ধরতে ব্যর্থ হয়।

১০-১৫ ওভার উইকেটের সহায়তা পেয়ে আফগান বোলাররা বাংলাদেশ ইনিংস নিয়ন্ত্রিত করে। বিশেষত তাওহীদ হৃদয় (২০ বলে ২৬) এবং শামীম হোসেন (১১ বলে ১১) রান করে ছন্দহীন হয়ে পড়ে বাংলাদেশ ইনিংস। এই পর্যায়ে জাকের আলী অথবা নুরুল সোহান উইকেটে এসেও ইনিংসে গতি সঞ্চার করতে পারেনি। তবুও ধীর গতির উইকেটে ১৫৪/৫ মন্দের ভালো ছিল।

প্রাণবন্ত সূচনার পর বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিং করলে ১৭০-১৮০ হতে পারতো। অবশ্যি রাশিদ খান এবং নূর আহমেদের বুদ্ধিদীপ্ত স্পিন বোলিংয়ের প্রশংসা করতেই হবে। শেষ দিকে ফজল হক ফারুকী এবং আজমাতুল্লাহ ওমারজাই গতির তারতম্য ঘটিয়ে জাকের আলী আর সোহানকে উইকেটে বেঁধে রাখে।

আফগান ইনিংসের শুরুতে মোক্ষম আঘাত হানে এই ম্যাচে প্রথম সুযোগ পাওয়া নাসুম আহমেদ। ইনিংসের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই শূন্য ফিরে যায় সাদিকুল্লাহ অতল। নাসুম এরপর ইব্রাহিম জাদরানকেও একই ভাবে ফিরিয়ে দিলে ৫ম ওভারে ১৮ রানে ২ উইকেট হারিয়ে অনেকটা থমকে যায় আফগান বাহিনী।

বাংলাদেশ এই ম্যাচে ২ পেসার এবং দুই স্পিনার নিয়ে খেলায় এই পর্যায়ে রামানুল্লাহ গুরবাজ এবং গুলবদন নায়েব ইনিংস মেরামতের সুযোগ পায়। টুর্নামেন্ট জুড়ে ভালো বোলিং করা তানজিম হাসান সাকিবকে কেন বিশ্রাম দেয়ার ঝুঁকি নিলো বাংলাদেশ বোধগম্য হয়নি।

দুই খণ্ডকালীন স্পিনার সাইফ হাসান এবং শামীম হোসেন নিজেদের মধ্যে করা ৪ ওভারে ৫৫ রান বিলিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে শংকায় ফেলে দেয়। যাহোক তাসকিন (২/৩৪), মুস্তাফিজ (৩/২৮) এবং রিশাদ হোসেন (২/১৮) নিজেদের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করায় আফগানিস্তান জমাতুল্লাহ ওমরজাই (৩০), রাশিদ খান (২০) বীরত্ব সত্ত্বেও ১৪৬ রানে আফগান ইনিংস সীমিত রেখে ৮ রানে ম্যাচ জয় করে বাংলাদেশ।

আফগান ইনিংসে বাংলাদেশ কয়েকটি ক্যাচ না ফস্কালে বা রান আউট মিস না করলে আরো বড় জয় পেতে পারতো। তার ফলে নেট রান রেটে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতো বাংলাদেশ। কালকের ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট ছিল অবশ্যই বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটির ব্যাটিং এবং নাসুম আহমেদের শুরুতেই দুটি উইকেট তুলে নেয়া।

আফগানিস্তান কিন্তু এই পরাজয়ে সরাসরি উত্তরণের সুযোগ হারালো। উভয় দলকে এখন অপেক্ষা করতে হবে শ্রীলংকা আফগানিস্তান ম্যাচের উপর। একমাত্র শ্রীলংকা ম্যাচটি জিতলেই বাংলাদেশ গ্রূপ অফ ফোরে যেতে পারবে। আশায় আশায় থাকবে বাংলাদেশের ১৭ কোটি ক্রিকেট প্রেমীরা দেশে আর প্রবাসে।

ফিরে তাকালে দেখবো ৪ ফ্রন্ট লাইন বো লার নিয়ে খেলার ঝুঁকি নেয়া উচিত হয়নি। পারভেজ ইমনকে বিশ্রাম না দিয়ে তাওহীদ রিদয়কে খেলানো যুক্তি খাজে পাইনি। হৃদয়ের শ্লথ গতির ব্যাটিং বাংলাদেশ ইনিংসকে স্থবির করে দেয়।

নুরুল সোহান এবং জাকের আলী বুদ্ধিদীপ্ত আফগান বোলিং মোকাবেলায় ব্যর্থ ছিল। সৌভাগ্য বাংলাদেশের চার বোলার সবাই নিজেদের সেরা বোলিং করে দলের জয় নিশ্চিত করেছে। এখন ভাগ্যটা আশা নিরাশার দোলক দোলায় দুলছে। আশা করি বাংলাদেশ গ্রূপ অফ ফোরে সুযোগ পেলে একাদশ নির্বাচনে আরো বিচক্ষণতার পরিচয় দিবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

15 − fourteen =