বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বনেতাদের সঙ্গে জলবায়ু সম্মেলনে যোগদান

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে কোপ২৬ জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। পৃথিবী নামের এই গ্রহের ভাগ্য নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের পটভূমিতে এই শীর্ষ সম্মেলনকে “লাস্ট, বেস্ট হোপ” নামে অভিহিত করা হয়েছে। বিশ্বনেতারা গ্লাসগোতে পৌঁছালে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস তাদের শুভেচ্ছা জানান। কোপ২৬ সম্মেলনে প্রায় ১২০টি দেশের নেতাদের তারা স্বাগত জানান।

শেখ হাসিনা রোববার গ্লাসগোতে এসে পৌঁছেছেন, তিনি ৪৮টি দেশের ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন এবং গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডার হিসেবে ধনী দেশগুলোর কাছে জলবায়ু ঝুঁকিপূণ দেশগুলোর দাবির পক্ষে সমর্থন চেয়েছেন। সম্মেলন পুরোদমে শুরু হওয়ায় জলবায়ু বিপর্যয় এড়াতে উন্নত দেশগুলো চাপের মধ্যে রয়েছে, বরিস জনসন সম্মেলন উদ্বোধনের পরে বিকালের অধিবেশনে বিশ্বনেতারা তাদের নিজ নিজ জলবায়ু পরিকল্পনা নিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী উন্নত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য দ্রুত তাদের প্রতীক্ষিত জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) পরিকল্পনা পেশ করার দাবি জানান।সায়মা ওয়াজেদ হোসেন সিভিএফ’র থিম্যাটিক অ্যাম্বাসেডর হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন।

বিশ্লেষক এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলেছে, উন্নত দেশগুলোর নেতারা দুই সপ্তাহের আলোচনায় তাদের অবস্থান ঠিক করবেন যা এই গ্রহকে কার্বনমুক্ত করার পরিকল্পনার মাধ্যমে শেষ হতে পারে।

সিএনএন টিভি নেটওয়ার্ক-এর একজ বিশ্লেষক কপ২৬ বিশ্ব নেতাদের লোক-দেখানো বিবৃতির মাধ্যমে সমাপ্ত হতে পারে বলে মন্তব্য করে বলেছেন, বিজ্ঞান এর আশু প্রয়োজনীয়তার কথা বললেও তারা এটাকে সম্ভবত আরও দূরে ঠেলে দিতে পারেন।

সংস্থার অপর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ‘১৯৭৯ সালে প্রথম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের পর থেকে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মোকাবেলার জন্য বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সভা হয়েছে এবং অনেক জলবায়ু প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও তাপমাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ কোন নীতিগত পরির্তন হয়নি।’

জলবায়ু নেতারা এবং বিশেষজ্ঞরা এ ইভেন্টটিকে জলবায়ু সংকট মোকাবেলার বিশ্বের শেষ সেরা সুযোগ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।বিশ্বের তিন বৃহত্তম কার্বন নির্গমনকারী দেশ চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে অতিরিক্ত মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং কয়লা ও বন উজাড়ের মতো বিষয়ে তাদের প্রতিশ্রুতি আরও কঠোর করার জন্য চাপের সম্মুখীন হয়।বাংলাদেশ এবং নিম্নাঞ্চলীয় দ্বীপ দেশগুলোসহ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অন্য দেশগুলো সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলছে যে তারা ফ্রন্টলাইনে রয়েছে এবং ‘ভয়ঙ্কর’ প্রভাবের সম্মুখীন রয়েছে।

শি জেনহুয়া প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত হিসাবে বেইজিংয়ের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তিনি ২০০৭ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রধান জলবায়ু বৈঠকে চীনের প্রধান আলোচক হিসেবে কাজ করেন এবং ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি এগিয়ে নিতে সাহায্য করেছিলেন বলে মনে করা হয়।

বিবিসির একজন ভাষ্যকার বলেন, ‘চীন যা করে তা আমাদের সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি বিশ্বের কার্বন ডাই অক্সাইডের সবচেয়ে বড় উৎস, দেশটি বিশ্বব্যাপী নির্গমনের প্রায় ২৮ শতাংশের জন্য দায়ী।’

দায়িত্ব গ্রহণের পর জো বাইডেন পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্যারিস চুক্তি থেকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বাতিল করেন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

বিবিসি’র ভাষ্যকার পর্যবেক্ষণ করেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম নির্গমনকারী, তাই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’

বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম কার্বন নিঃসরণকারী হওয়া সত্ত্বেও ভারত তার নেট-জিরো-বর্ষ ঘোষণা করেনি বা প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছরে কার্বন-হ্রাস উচ্চাকাক্সক্ষাসহ একটি আপডেট জলবায়ু পরিকল্পনা (এনডিসি) জাতিসংঘের কাছে জমা দেয়নি। বিবিসি ভাষ্যকার বলেন, ‘অনেকেই আশা করছেন প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র) মোদি গ্লাসগোতে সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দিতে প্রস্তুত হবেন।’

মার্কিন জলবায়ু দূত জন কেরি এর আগে বলেছিলেন যে গ্লাসগো শীর্ষ সম্মেলন ‘জলবায়ু সংকটের সবচেয়ে খারাপ পরিণতি এড়াতে আমাদের যা করতে হবে তা করার জন্য বিশ্বের একত্রিত হওয়ার শেষ সেরা সুযোগ।’

প্রিন্স চার্লস সপ্তাহান্তে বলেন, ‘বেশ আক্ষরিক অর্থেই এটি শেষ সুযোগ। আমাদের এখন সুন্দর শব্দগুলোকে আরও সুন্দরতর কর্মে রূপান্তর করতে হবে।’

কপ২৬ সভাপতি অলোক শর্মা রবিবার বলেছেন যে জলবায়ু লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সম্মেলনটি ‘আমাদের শেষ সেরা আশা’। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রয়োজনীয় সমাধানগুচ্ছ গড়ে তোলার জন্য আমাদেরকে দ্রুত এগোতে হবে। এবং সেই কাজটি আজ থেকে শুরু হতে হবে- এবং আমরা একসঙ্গে সফল বা ব্যর্থ হবো।’

সম্মেলনের এক মাসেরও কম সময় আগে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘আমি যথেষ্ট জোর দিয়ে বলতে পারি না যে ‘সময় ফুরিয়ে আসছে’।শীর্ষ সম্মেলনের শুরুতে তিনি বলেন ‘জীবাশ্ম জ্বালানির প্রতি আমাদের আসক্তি মানবতাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা নিজেরা নিজেদের কবর খুঁড়ছি।’কপ২৬-এর লক্ষ্য হল ২১০০ সালের মধ্যে উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা সবচেয়ে খারাপ ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখা। কিন্তু বিশ্ব বর্তমানে ২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের পথে রয়েছে, জাতিসংঘ বলেছে এর ফলে ‘জলবায়ু বিপর্যয়’ নেমে আসবে।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশ্বকে একত্রিত করার প্রয়াসে আজ গ্লাসগোতে স্কটিশ ইভেন্ট ক্যাম্পাসে (এসইসি) ২৬তম জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন বা কপ২৬ শুরু হয়েছে। ক্রমবর্ধমান  বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ১.৫-এ নামিয়ে আনার লক্ষ্যে ১৯০টিরও বেশি দেশ দ্বারা প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার ছয় বছর পর কপ২৬ উপস্থিত হয়েছে। জাতিসংঘের মতে, বর্তমানে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁতে চলেছে।বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন যে প্যারিসে স্থিরীকৃত লক্ষ্য অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে নির্গমনকে অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে।আগামী ১২ নভেম্বর কপ২৬ সমাপ্ত হবে।

বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

nine − 3 =