বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্ন চ্যালেঞ্জের মুখে

সালেক সুফী

প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে হাওয়ায় উড়ছিল বাংলাদেশ। বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন্স ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১২৭ রানের বিশাল ব্যাবধানে হারার পর সেমি ফাইনাল খেলার স্বপ্ন অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে। নানা কারণে বিতর্কিত বাংলাদেশ শিবির এখনো এলোমেলো। কাল স্পিন সহায়ক চেন্নাই উইকেটে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী এবারের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকা দল নিউ জিল্যান্ড। মুখোমুখি ওডিআই মোকাবিলায় বাংলাদেশ স্বদেশে নিউ জিল্যান্ডকে কয়েকবার ধবল ধোলাই করলেও কিছুদিন আগে খর্ব শক্তির ব্ল্যাক ক্যাপস দলের কাছে সিরিজে হেরেছে।

তার মানে এই না যে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়ে ওদের হারাতে পারবে না। এবারের বিশ্বকাপে সেমি ফাইনাল দৌড়ে টিকে থাকতে হলে কাল ব্ল্যাক ক্যাপসদের হারাতেই হবে। পরের ম্যাচটি বাংলাদেশ খেলবে ১৯ অক্টোবর ব্যাঙ্গালুরুতে বর্তমানে উড়তে থাকা শক্তিশালী ভারতের বিরুদ্ধে। জয়ের আশা ক্ষীণ।  দুটি ম্যাচ হেরে গেলে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্ন আর হয়তো ডানা মেলবে না। বাংলাদেশের পক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান এবং অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জিতে সেমিফাইনালে যাবার স্বপ্ন কর্পূরের মতই উবে যাবে।

টপ লেস বটম লেস বাংলাদেশ ব্যাটিং কিভাবে সমন্বিত করা যাবে। তামিম ইকবালকে দেশে রেখে তরুণদের নিয়ে বিশ্বকাপে যাওয়া যে দুঃস্বপ্ন সেটি এখন হাড়ে হাড়ে অনুভব কোর্স বাংলাদেশ। দুটি ম্যাচের একটিতেও বাংলাদেশ টপ অর্ডার দাঁড়াতে পারেনি। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে একাদশ নির্বাচনে অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহকে বিশ্রাম দিয়ে দুর্বলতর ব্যাটিং ইউনিট নিয়ে খেলার দুঃসাহস করেছিল বাংলাদেশ। জানিনা কি ভেবে টস জয় করেও ইংল্যান্ড দলকে ব্যাটিং করতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।

ইংল্যান্ড প্রথম ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের কাছে বিশাল ব্যাবধানে হেরে তেতে ছিলো।  সুযোগ পেয়ে বাংলাদেশ বোলিংকে তুলোধুনো করে ৩৬৪/৯ বিশাল স্কোর করে ম্যাচ থেকে বাংলাদেশকে ছিটকে দিয়েছিলো। দুর্বল বাংলাদেশ ব্যাটিং এবারের বিশ্বকাপে হয়তো কোনো দলের বিরুদ্ধেই ৩০০+ রান করতে পারবে না।  আর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ব্যাটিং করতে নামার পর প্রথম ১০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় চলে গিয়েছিলো। সেখান থেকে সাধ্য মত চেষ্টা করেও উদ্ধার করতে পারেনি লিটন দাস ( ৭৬), মুশফিক ( ৫১), তৌহিদ হৃদয় (৩৯)। ২২৭ রানে অল আউট হয়ে ১২৭ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ।

চেন্নাইতে উইকেটে স্পিন ধরে।  দিন রাতের ম্যাচ। দিনের বেলায় বোলিং করলে সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। রাতে শিশির পড়লে স্পিনাররা সুবিধা করতে পাবে না। টস প্রকৃতির হাতে। আশা করি উইকেটের মেজাজ আর আবহাওয়ার পূর্বাভাস বিবেচনায় নিবে বাংলাদেশ। নিউ জিল্যান্ড ব্যাটসম্যানরা তুখোড় ফর্মে আছে। আবার এদিন ওদের তুখোড় ব্যাটসম্যান কেন উইলিয়ামসন দলে ফেরার সম্ভাবনা আছে।

বাংলাদেশ যেন কোনো অবস্থায় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে দলের বাইরে না রাখার ঝুঁকি না নেয়।  প্রয়োজনে লিটনের সঙ্গে শান্তকে দিয়ে ওপেনিং করানো যেতে পারে। জুনিয়র তামিম বোল্ট, সৌদি/হেনরিদের খেলার মত যোগ্যতা এখনো অর্জন করেনি। এই ম্যাচে টপ অর্ডার দাঁড়াতে না পারলে বিপদে পড়বে বাংলাদেশ। নিউ জিল্যান্ড হয়তো সান্টনারের সঙ্গে ইশ সোধিকেও খেলাতে পারে।

বাংলাদেশ তিন স্পিনার নিয়ে খেলার পাশাপাশি পেস আক্রমণ বিবেচনা করতে পারে। প্রয়োজনে দুইজন পেসার নিয়ে নাসুম, মেহেদী দুইজনকে দলে এনে স্পিন আক্রমণ সমৃদ্ধ করা যেতে পারে। তাসকিন কিন্তু ভালো করছে না। শরিফুল খরুচে। হাসান মাহমুদ বা তানজিম সাকিবকে খেলানোর বিষয়টি বিবেচনায় আনা যেতে পারে।

আবারো বলছি বাংলাদেশকে বিশ্বকাপ স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে নিউ জিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচটিতে সর্বশক্তি নিয়ে লড়াই করতে হবে। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

fifteen + eighteen =