বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ওডিআই: যোগ্যতর দল জয়ী হয়েছে

সালেক সুফী

দুয়ারে করা নাড়ছে এশিয়া কাপ। বিশ্বকাপ ক্রিকেটও দূরে নয়। এমন সময় বিশ্বকাপ জয়ে স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য ঘুম ভাঙানিয়া সংকেত দিয়ে গেলো বাংলাদেশ-আফগানিস্তান সিরিজের প্রথম ম্যাচ। চট্টগ্রামের সাগরিকায় অবস্থিত জহুর আহমেদ চৌধুরী ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃষ্টিবিঘ্নিত কালকের ম্যাচে ডিআরএস পদ্ধতিতে ১৭ রানে পরাজিত বাংলাদেশের অহমিকায় দারুন ঘষা দিয়ে গেলো ম্যাচটি।

ক্রিকেটের বিশ্ব মঞ্চে সেরা দল হতে বাংলাদেশের আরো কত পথ পাড়ি দিতে হবে তারই যেন প্রদর্শনী ছিল কালকের আইস ক্রিম অনুপ্রাণিত ওয়াল্টন সিরিজের প্রথম খেলাটি। উইকেটে সবুজ ঘাসের আস্তরণ ছিল, আকাশে মেঘ ছিল। কিছুদিন আগে দুই দলের মুখোমুখি একমাত্র টেস্ট ম্যাচে কর্পূরের মতো উবে যাওয়া আফগান দল আর কালকের ম্যাচ খেলা আফগান দলের মাঝে যোজন যোজন ব্যাবধান হয়তো বিবেচনায় ছিল না হাতুরাসিংহের শিষ্যদের।

আর তাই টস হেরে ব্যাটিং করা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের অনেক উন্নত প্রস্তুতির আফগান দলের উঁচু মানের বোলিং মোকাবিলায় আনাড়ি মনে হয়েছে। কয়েক দফা বৃষ্টি বিঘ্নিত ৪৩ ওভারে সীমিত খেলায় বাংলাদেশ তরুণ তুর্কি তাওহীদ হৃদয়ের ৫১ রানে ভর করে ১৬৯/৯ করেছিল। জবাবে অনেক পরিশীলিত ব্যাটিং করে আবারো বৃষ্টি সংকুচিত ২১.৪ ওভারে ৮৩/২ করে সফরকারী দল।

ডাকওয়ার্থ এবং লুইস আবিষ্কৃত ফর্মুলায় আফগানিস্তান ১৭ রানে জয়ী হয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ এগিয়ে যায়। নিরপেক্ষ বিশ্লেষক বলবে দুই দলের বোলিং ব্যবধান এতো ব্যাপক যে ৮ এবং ১১ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য দুটি ম্যাচে জয়সহ সিরিজ জয় করতে বাংলাদেশকে অনেক বেগ পেতে হবে। অথচ নিজেদের প্রিয় ফরম্যাটে দেশের মাটিতে প্রায় অজেয় হয়ে ওঠা বাংলাদেশকে নিয়ে অনেকেই এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন।

জানি টাইগার অধিনায়ক ১০০% ম্যাচ ফিট নয়। দলে বিকল্প আছে। দুইটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট সামনে রেখে সিরিজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবু কেন তামিমকে নিয়ে ঝুঁকি নিলো বাংলাদেশ। স্বীকার করি কাল অসমতল উইকেটে শুরুতে বল ওঠা-নামা করেছে। কিন্তু ফজল ফারুকীর বলে বার বার পরাজিত হয়ে তামিমের আউট হবার ধরনটি দেখে আনাড়ি মনে হয়েছে।

উইকেটে এসেই মুজিবের বলে আউট হতে যেয়ে বেঁচে যাওয়া ইদানিং তুখোড় ব্যাটিং করা নাজমুল শান্ত নবীর বলে আত্মবিসর্জন বা মুজিবের লং হপ লিটনের লোপ্পা ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে আশায় ধারণা হতেই পারে বাংলাদেশ যেন সাম্প্রতিক কাঁচা মরিচ সংকটে ভালো প্রস্তুতি নেয়নি। ১২ ওভারে ৭২/৩ বাংলাদেশ কিন্তু খারাপ অবস্থানে ছিল না। পরিস্থিতি অনুযায়ী দেখে শুনে খেলছিল সাকিব-হৃদয় জুটি।

কিন্তু আফগান পেসার ওমারজাইয়ের বলে সাকিবের কভার ড্রাইভ বর্ষীয়ান আফগান অল রাউন্ডার মোহাম্মদ নবী অসামান্য দক্ষতায় রুখে নিলে আতঙ্ক সৃষ্টি হয় বাংলাদেশ শিবিরে। উঁচু নিচু হতে থাকা এই উইকেটে বিশ্ব সেরা লেগ স্পিনার রাশিদ খান অথবা বিস্ময় স্পিনার মুজিবকে খেলতে যে চ্যালেঞ্জ সেটির বিপরীতে বাংলাদেশের লেট মিডল অর্ডারে মেধার ঘাটতি কাল প্রমাণ হলো আবারো।

কি করলেন মুশফিক উইকেটে স্থিতু না হয়ে রাশিদকে উড়িয়ে মারার প্রচেষ্টায়? আফিফ বা মেহেদী মিরাজ যেভাবে আউট হয়েছে তার কি জবাব আছে ওদের কাছে। রাশিদ, মুজিব, ফজল ফারুকী সবাই কাল নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছে নিকুঠিভাবে। বাংলাদেশের একমাত্র তরুণ তৌহিদ হৃদয় ছাড়া অন্য কেউ পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনি।

বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ৪৩ ওভারে সীমিত ম্যাচে ১৬৯/৯ ডাকওয়ার্থ লুইস হিসাবে ১৬৪ দাঁড়ায়। আফগান দলের পক্ষে ফজল ফারুকী (৩/২৪) , রশিদ খান (২/২১) এবং মুজিব (২/২৩) ছিল নিজেদের মূর্তিতে সক্রিয়। হয়তো বাংলাদেশ বলবে কাল দিনটা বাংলাদেশের অনুকূলে ছিল না।

কিন্তু দেখুন সীমিত লক্ষ্য সামনে রেখে আফগান দল কিন্তু তাড়াহুড়ো করেনি। গুরবাজ-জাদরান জুটি দেখে শুনে প্রথম উইকেট জুটিতে ৫৪ রান জুড়ে দিয়েছে। সচরাচর মারকুটে গুরবাজ কিন্তু ছটফট করেনি যেটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে করেছে একাধিক ব্যাটসম্যান। বৃষ্টি আবারো বিঘ্ন ঘটালেও প্রকৃতি কিন্তু যোগ্যতর আফগান দলকে বঞ্চিত করেনি। শেষ পর্যায়ে বৃষ্টি এসে খেলার অকাল পরিসমাপ্তি ঘটানোর সময় ৮৩/২ অবস্থানে থাকা আফগান দলে ১৭ রানের ব্যাবধানে জয় পেয়েছে।

বাকি দুটি ম্যাচ ৮ এবং ১০ জুলাই। কাকে খেলার কৌশল নিবে বাংলাদেশ। রশিদ, মুজিব, ফারুকী না নবীকে? একমাত্র কাল অভিষিক্ত মোহাম্মদ সেলিম ছাড়া অন্য সবাই কতটা প্রস্তুত সেটি কাল দেখা গেছে।  যেভাবে তাওহীদ হৃদয় ব্যাটিং করলো অন্যরা কেন পারলো না? আত্মজিজ্ঞাসা ছাড়া বিকল্প দেখি না।

এই আফগানিস্তান দলের বিরুদ্ধে ভারতের ধর্মশালায় ৭ অক্টোবর ২০২৩ বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন শুরু হবে। বাংলাদেশ হয়তো মনে রাখেনি এই দল এবং টেস্ট খেলা আফগান দল কিন্তু সম্পূর্ণ দুটি আলাদা দল। আশা করি কালকের ম্যাচটি দুঃস্বপ্নের মত ভুলে যেয়ে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। কালকের খেলায় অভিজ্ঞ মাহমুদ রিয়াদকে দারুন ভাবে মিস করেছে বাংলাদেশ। ম্যান সময়ত বোলিংয়ের বিরুদ্ধে চাপের মুখে রিয়াদের বিকল্প এখনো তৈরি হয়নি বলতেই হবে।

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

nineteen + sixteen =