সালেক সুফী
অবশেষে বোলিং, ব্যাটিং, ফিল্ডিংয়ে নিজেদের জাত ছিনিয়ে কাঙ্ক্ষিত জয় পেলো বাংলাদেশ। শারজায় অনুষ্ঠিত বাঁচা-মরার দ্বিতীয় ওডিআই ম্যাচটি আজ ৬৮ রানে জয় করে সিরিজে ১-১ সমতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। টস জয়ী আজ প্রথমে ব্যাটিং করে ২৫২/৭ কম্পিটিটিভ স্কোর করেছিল। শারজা উইকেটে এই স্কোর তাড়া করে ম্যাচ জয় সহজ নয়। তদুপুরি পরিবর্তিত বাংলাদেশ তুখোড় বোলিং ফিল্ডিং করে আফগানিস্তান ইনিংস ১৮৪ রানে গুটিয়ে দিয়ে যোগ্যতর দল হিসাবে ৬৮ রানে ম্যাচ জিতে নেয়। তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচটিতে উজ্জীবিত হয়ে খেলবে বাংলাদেশ। শেয়ানে শেয়ানে লড়াই হবে শেষ ম্যাচটিতে। উভয় দলের সমান সুযোগ থাকবে ম্যাচ জিতে নেওয়ার।
আজ শান্তর টস জয় বাংলাদেশের ভাগ্য ফেরায়। পরাজয়ের বৃত্তে থাকা বাংলাদেশের অতি প্রয়োজন ছিল টপ অর্ডারের ভালো সূচনা। তানজিদ তামিম ১৭ বলে ২২ রান করে ভালো শুরু করেছিল। একটু রয়েশয়ে খেললে হয়ত ইনিংসটা বড় করতে পারতো। আমি অস্থির থাকা সৌম্যকে বাহবা দিবো। ৪৯ বলে ৩৫ করার পথে কাল বল বাছ বিচার করে খেলেছে।
কালকের খেলার সেরা খেলোয়াড় বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল শান্তর (৭৬) সঙ্গে ৭১ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি বাংলাদেশ ইনিংসের ভিত গড়ে দেয়। সৌম্য আউট হবার পর ভয় ছিল প্রথম ম্যাচের মতো আবারো মড়ক লাগে কি না। কিন্তু অধিনায়ক শান্তর সঙ্গে জুটি বেঁধে সহ অধিনায়ক মেহেদী মিরাজ (২২) বিচক্ষণতার সঙ্গে খেলে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৫৩ রান জুড়ে দিলে বাংলাদেশ স্কোর কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়।
এরপরেও কিন্তু ১৫২-১৮৪ মাত্র ৩২ রান যোগ করতে ৪ উইকেট ঝরে গিয়েছিল। এই মুহূর্তে অভিষিক্ত জাকের আলী অনিক (৩৭*), নাসুম আহমেদের (২৫) সঙ্গে মিলে ৭ম উইকেট জুটিতে দ্রুত ৪৬ রান জুড়ে দলের স্কোর সন্তোষজনক পর্যায়ে নিয়ে যায়। ২৫২/৭ শেষ করে বাংলাদেশ কিন্তু কাল শক্ত অবস্থান নিয়েছিল। এই স্কোর তাড়া করে শারজায় ম্যাচ জয় সচরাচর হয় না।
তদুপুরি তাসকিন শুরুতেই আফগানিস্তানের মারকুটে ব্যাটসম্যান রামানুল্লাহ গুরবাজকে ফিরিয়ে দিয়ে কাজটি কঠিন করে দেয়। ভালো ব্যাটিং করছিলো তরুণ সাদিকুল্লাহ অতল (৩৯) এবং পরিণত রহমাত শাহ (৫২)। কালকের ম্যাচে সংযোজিত নাসুম আক্রমণে এসেই প্রথম বলে অতলকে ফেরালে ছেদ পড়ে আফগানিস্তান রানের গতিতে। নাসুমের বলে মেহেদী মিরাজ দারুন ক্যাচ লুফে নিলে টাইগার বাহিনী রক্তের স্বাদ পায়।
জয়ের নেশায় উজ্জীবিত হয়ে ওঠে দল। আহমাদুল্লাহ ওমরজাইকে নাসুম শূন্য হাতে ফেরালেও গুলবাদিন নাইব (২৬) এবং হাসমাতুল্লাহ শাহিদী ( ১৭) কিছুক্ষণ রাহমাত শাহর সঙ্গে সঙ্গ দিয়েছিল। দ্বিতীয় স্পেলে এসে মুস্তাফিজ, শরিফুল দুই জনকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর ভালো খেলতে থাকা রাহমাত শাহ (৫২) ভুল বোঝাবুঝির কারণে দুৰ্ভাগ্যজনক ভাবে রান আউট হয়। পিছিয়ে পড়ে আফগানিস্তান।
বাংলাদেশ দল দুর্দান্ত ফিল্ডিং করে আফগানিস্তানের কাজ কঠিন থেকে কঠিনতর করে দেয়। ১১৯ রানে ৫ উইকেট হারানো আফগানিস্তান দলের পক্ষে আর সম্ভব হয়নি রানের গতি বজায় রাখা। এই পর্যায়ে বাংলাদেশ বোলারদের উইকেট উপযোগী পেস স্পিন বোলিং এবং তুখোড় ফিল্ডিং ইনিংস ১৮৪ রানে গুটিয়ে দেয়। ২৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে নাসুম দলে দাপটের সঙ্গে ফিরে আসে। মুস্তাফিজ এবং মিরাজ ২ টি করে উইকেট নিলে বাংলাদেশ ৬৮ রানের বিশাল জয়ে সিরিজে ১-১ সমতা অর্জন করে।
বলতেই হবে বাংলাদেশ গত কিছুদিন যাবৎ নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী খেলতে না পেরে ব্যার্থতার বৃত্তবন্দী হয়ে পড়েছিল। একটি জয় দারুন প্রয়োজন ছিল নিজেদের নতুন করে চেনার জন্য। কে জানে হয়তো একটি জয় দলকে পাল্টে দিবে। কিন্তু উল্লসিত হওয়ার কারণ নেই। বাংলাদেশকে ভালো খেলেই ভালো খেলার ধারাবাহিকতা অর্জন করতে হবে। সাফল্যের কোনো সংক্ষিপ্ত পথ নেই। আফগানিস্তান কিন্তু শেষ ম্যাচে দারুণভাবে ফিরে আসতে পারে। টাইগার বাহিনীকে অভিনন্দন দারুন জয়ের জন্য।