সালেক সুফী
এমসিজিতে অনুষ্ঠিত নানা ঘটনায় স্মরণীয় বর্ডার গাভাস্কার টেস্ট সিরিজর গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ১৮৪ রানের বিশাল ব্যাবধানে হেরে আইসিসি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নশিপ চলতি পর্বে ভারতের ফাইনাল খেলার সম্ভাবনা অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। শেষ দিনে ম্যাচটির ভাগ্যে তিনটি সম্ভাবনা (অস্ট্রেলিয়া ,ভারত দুই দলের জয় অথবা ড্র ) থাকা অবস্থায় শেষ সেশনে নাটকীয় ভাবে ৭ উইকেট তুলে নিয়ে জয় ছিনিয়ে নেয় অস্ট্রেলিয়া। ৫ টেস্ট ম্যাচ সিরিজের চতুর্থ টেস্ট শেষে অস্ট্রেলিয়া ২-১ এগিয়ে আছে. সিডনিতে অনুষ্ঠিতব্য শেষ ম্যাচ জিতে নিলে অস্ট্রেলিয়া বর্ডার গাভাস্কার ট্রফি জিতে নিবে। তবে এমসিজি টেস্ট জয়ে এবারের আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের পথে ভারতকে টপকে অস্ট্রেলিয়ার খেলার সম্ভাবনা অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেছে। কালকের ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণে ভারতের প্রতিভান ব্যাটসম্যান যশোভি জয়সোয়ালের আউট ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট ছিল. মাঠের আম্পায়ার আউট বিষয়ে নিশ্চিত না থাকায় সিদ্ধান্ত তৃতীয় আম্পায়ার বাংলাদেশের শরফদৌলা সৈকতের কাছে যায়. আইসিসি এলিট প্যানেল ভুক্ত আম্পায়ার রিপ্লেতে বল জয়সোয়ালের ব্যাট এবং গ্লাভস ছুঁয়ে যাওয়ার সুস্পষ্ট নিদর্শন দেখে আউটের সাহসী সিদ্ধান্ত দেয়। যদিও স্নিকোতে বিষয়টি ধরা পরে নি. সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাটসম্যান উষ্মা প্রকাশ করলেও ধারাভাষ্যকাররা সবাই বাংলাদেশ আম্পায়ারের সাহসী সিদ্ধান্তের ভূয়সী প্রসংশা করে. খ্যাতনামা প্রাক্তন আম্পায়ার সাইমন টাফেল কারিগরি ব্যাখ্যা দিয়ে সৈকতের সিদ্ধান্ত জোরালোভাবে সমর্থন করে. এই বিষয়ে সোশ্যাল মাদ্ধমে তোলা বিতর্কের কোন যৌক্তিক কারণ আমি দেখি না. আম্পায়ার ব্যাটসম্যানের ব্যাট বা হারের গ্লাভসে বল লাগা বিষয়ে নিশ্চিত হয়েই টেকনোলজির সহায়তা নেয়া জরুরি মনে করে নি. তাই বাংলাদেশের আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে ভারত হেরেছে ভারতীয় কট্টর সমর্থকদের এই যুক্তি ছেলেমি বলে বাতিল করা যায়.
পার্থে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্ট দাপটের সঙ্গে জিতে ভারত দারুন শুরু করেছিল। এডিলেড ওভালে অনুষ্ঠিত দিন রাতের পিঙ্ক বল টেস্ট অস্ট্রেলিয়া জিতে সিরিজে সমতা আনে। ব্রিসবেনে গ্যাবায় অস্ট্রেলিয়া সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও বৃষ্টি বাধার কারণে টেস্ট অমিমাংসিত থাকে। এমসিজির ঐতিহাসিক বক্সিং ডে টেস্ট শুরু থেকেই ভারত বোলিং অস্ত্র জাসপ্রিত বুমরার বিরুদ্ধে অভিষিক্ত অস্ট্রেলিয়ান তরুণ স্যাম কনস্টাসের বীরোচিত বাটিংয়ের কারণে জমে উঠে, অস্ট্রেলিয়া স্টিভ স্মিথের ৩৪ ম শতরানের সুবাদে প্রথম ইনিংসে ৪৭৪ রান করে সুবিধা জনক অবস্থানে চলে যায়. ভারত একপর্যায়ে কোনঠাসা হয়ে ফলো ওন করার উপক্রম হলে নবীন নীতিশ কুমার রেড্ডির বীরোচিত শত রান এবং ওয়াশিংটন সুন্দরের সঙ্গে সংগ্রামী জুটির কারণে ৩৬৯ রান করে ম্যাচে ফিরে। অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে জাসপ্রিত বুমরা (৫/৫৭) দারুন বোলিং পুঁজি করে একসময় ম্যাচ জয়ের পরিস্থিতি সৃষ্টি করলেও শেষ দিকে নাথান লায়ন (৪১) এবং পাট কামিন্সের দৃঢ়তায় শেষ দিনে ৩৪০ রান করে ম্যাচ জয়ের টার্গেট পায়। ৭৪০০০ গ্যালারি উপচে পড়া দর্শক টেস্ট ম্যাচটির প্রতিটি রোমাঞ্চকর মুহূর্ত দারুন উপভোগ করলেও অস্ট্রেলিয়ার তুখোড় বোলিং আর আগ্রাসী ফিল্ডিংয়ের সামনে ভারত কোনঠাসা হয়ে পরে. শেষ দিনের প্রথম সেশনে ২৪.১ ওভারে ভারত রোহিত শর্মা , কে এল রাহুল আর বিরাট কোহলির উইকেট হারিয়ে মাত্র ৩৩ রান সংগ্রহ করার সঙ্গে সঙ্গে ম্যাচ জয়ের সম্ভাবনা উবে যায়. দ্বিতীয় সেশনে জয়সোয়াল এবং ঋষভ প্যান্ট প্রতিরোধ গড়ে ম্যাচ ড্র করার সম্ভাবনা জাগালেও তৃতীয় এবং শেষ সেশনে অস্ট্রেলিয়া ৪৩ রানে ৭ উইকেট তুলে নিলে ১৫৫ রানে ভারতের ইনিংস গুটিয়ে যায়. এই সেশনে ট্রাভিস হেডের বলে প্যান্টের আউট হয়ে যাওয়া এবং কামিন্সের বলে ৮৪ রান করা জয়সোয়ালের উইকেট রক্ষকের হাতে ধরা পড়া ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে. স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যোগ্যতর দল অস্ট্রেলিয়া ভালো ক্রিকেট খেলে টেস্ট জিতেছে। সাহসী আম্পয়ারিং করার জন্য বাংলাদেশের কৃতি আম্পায়ার শরফদৌলা সৈকত বাহবা পেতেই পারে.
বর্ডার গাভাসকর ট্রফি জিততে হলে অস্ট্রেলিয়াকে সিডনি টেস্ট জয় অথবা ড্র করতে হবে.টেস্ট জয় করলে শুদু ট্রফি জয় নয় আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল খেলাও নিশ্চিত হবে অস্ট্রেলিয়ার।