বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড প্রথম ওয়ানডে পরিত্যক্ত, বিশ্বকাপের টিকিট পেল দক্ষিণ আফ্রিকা

বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়ে গেছে বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার প্রথম ওয়ানডে। এ ম্যাচটি পরিত্যক্ত হওয়ায় অষ্টম দল হিসেবে আগামী ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার টিকিট পেল দক্ষিণ আফ্রিকা।

বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ডের তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটি বিশ্বকাপ সুপার লিগের অংশ। প্রথম ওয়ানডে পরিত্যক্ত হওয়ায় পয়েন্ট ভাগাভাগি করলো বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড। ৫টি করে পয়েন্ট পেল দু’দল। সুপার লিগে ২২ ম্যাচে ১৩৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থস্থানে থেকে আগেই বিশ্বকাপে সরাসরি খেলা নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ।

২২ ম্যাচে ৭৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ১১তমস্থানে আছে আয়ারল্যান্ড। ২১ ম্যাচে ৯৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের অষ্টম স্থানে দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশের বিপক্ষে শেষ দুই ম্যাচ জিতলেও আয়ারল্যান্ডের পয়েন্ট হবে ৯৩। সেক্ষেত্রে প্রোটিয়াদের টপকাতে পারবে না আইরিশরা। তাই সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার টিকিট পেল দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে বিশ্বকাপের টিকিট পেতে হলে বাছাই পর্বে খেলতে হবে আয়ারল্যান্ডকে।

ইংল্যান্ডের চেমসফোর্ডের কাউন্টি গ্রাউন্ডে গতকাল  টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতে ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ইনিংসের চতুর্থ বলে আয়ারল্যান্ড পেসার জশ লিটলের দারুণ ডেলিভারিতে লেগ বিফোর আউট হন বাংলাদেশের ওপেনার লিটন দাস। রিভিউ না নিয়ে ৬৭তম ওয়ানডেতে দশমবারের মত শূন্যতে বিদায় নেন লিটন।

লিটন ফেরার পর ২টি চার আদায় করে নিলেও চতুর্থ ওভারে থামতে হয় বাংলাদেশের আরেক ওপেনার ও অধিনায়ক তামিম ইকবালকে। মার্ক অ্যাডায়ারের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ১৪ রান করা তামিম।

১৫ রানে দুই ওপেনারকে হারানোয় চাপে পড়ে বাংলাদেশ। দলকে চাপমুক্ত করতে তৃতীয় উইকেটে বড় জুটির আভাস দিয়েও ৩৭ রানে বেশি তুলতে পারেননি শান্ত ও সাকিব আল হাসান। আক্রমনাত্মক ব্যাটিং করা সাকিবকে বোল্ড করেন পেসার গ্রাহাম হুম। ৪টি চারে ২১ বলে ২০ রান করেন সাকিব।

দলীয় ৫২ রানে সাকিবের বিদায়ের পর জুটি গড়ার চেষ্টায় ক্রিজে শান্তর সঙ্গী হন হৃদয়। আইরিশ বোলারদের দারুণভাবে সামলে ২১তম ওভারে দলের রান ১শতে নেন শান্ত ও হৃদয়। জুটিতে হাফ-সেঞ্চুরি হবার পরই পেসার কার্টিস ক্যাম্পারের বলে অ্যাডায়ারকে ক্যাচ দেন শান্ত। হাফ-সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে ৭টি চারে ৬৬ বলে ৪৪ রান করে আউট হন তিনি।

উইকেটে সেট হয়েও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি হৃদয়। হুমের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ৩১ বলে ২৭ রান করা হৃদয়। ২৭তম ওভারে ১২২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় বড় জুটির প্রত্যাশা ছিলো টাইগারদের। সেটি পূরণ করেন মুশফিকু রহিম ও মিরাজ। দ্রুত রান তুলে ৪২ বলে জুটিতে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তারা।

মুশফিক-মিরাজের জুটি বড় হবার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান স্পিনার জর্জ ডকরেল। স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে স্টিফেন ডোহেনিকে ক্যাচ দেন ৪টি চারে ৩৪ বলে ২৭ রান করা মিরাজ। মুশফিকের সাথে ষষ্ঠ উইকেটে ৬৬ বলে ৬৫ রান যোগ করেন তিনি।

মিরাজ ফেরার পর ২৪৬ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৪৪তম হাফ-সেঞ্চুরি পুর্ন করেন বার্থ ডে বয় মুশফিক। ১৯ রানে জীবন পেয়ে ৬৩ বল খেলে ৫টি চারে অর্ধশতক পান তিনি। মুশফিকের হাফ-সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের রান ২শ পার করে। শেষ পর্যন্ত লিটলের বলে আপার কাট শটে ৬১ রানে আউট হন মুশি। ৭০ বলের ইনিংসে ৬টি চার মারেন  নির্ভরযোগ্য  এ ব্যাটার।

শেষ দিকে তাইজুল ইসলামের ১৪ ও শরিফুল ইসলামের ১৫ বলে ১৬ রানে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৪৬ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের লিটল ৬১ রানে ৩ উইকেট নেন। অ্যাডায়ার-হুম ২টি করে শিকার করেন।

২৪৭ রানের টার্গেটে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়ে চতুর্থ ওভারে প্রথম উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড। দলীয় ২২ রানে চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলে পল স্টার্লিংকে বিদায় দেন পেসার শরিফুল। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১০ বলে ১৫ রান করে পয়েন্টে মিরাজকে ক্যাচ দেন স্টার্লিং। পরের ওভারে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় উইকেট এনে দেন আরেক পেসার হাসান। ইনসুইং ডেলিভারিতে আয়ারল্যান্ড অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বলবির্নিকে ৫ রানে বোল্ড করেন হাসান। ২৭ রানে ২ উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড।

দলকে চাপমুক্ত করতে আরেক ওপেনার স্টিফেন ডোহানির সাথে জুটি বাঁধেন হ্যারি টেক্টর। দলের রান ৫০ পার করেন তারা। তাইজুলের করা ১৪তম ওভারে ডোহানি ও টেক্টরকে বিদায়ের সুযোগ হারায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় বলে টেক্টরের ক্যাচ মিস করেন  তাইজুল। শেষ ডেলিভারিতে ডোহনিকে রান আউট করতে পারেননি মিরাজ। জীবন পেয়ে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ডোহানি। ১৬তম ওভারে  নিজেই ক্যাচ নিয়ে ডোহানিকে ১৭ রানে থামান তাইজুল।

১৭তম ওভারের তৃতীয় ডেলিভারির পর বৃষ্টির কারনে খেলা বন্ধ হয়। এসময় ৩ উইকেটে ৬৫ রান ছিলো আয়ারল্যান্ডের। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পরবর্তীতে আর খেলা শুরু সম্ভব হয়নি। এতে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। কারন ওয়ানডে ম্যাচের ফল হবার জন্য দুই ইনিংসে অন্তত ২০ ওভার খেলা হওয়া বাধ্যতামূলক। সেখানে বাংলাদেশ পুরো ৫০ ওভার খেললেও, আয়ারল্যান্ড খেলেছে ১৭ দশমিক ৩ ওভার।

টেক্টর ২১ ও টাকার ২ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের শরিফুল, হাসান ও তাইজুল ১টি করে উইকেট নেন। আগামী ১২ মে একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে।

বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

3 − one =