বাংলাদেশ এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে গেলো

সালেক সুফী

যদিও সূক্ষাতিসূক্ষ গাণিতিক হিসেবে এখনো সম্ভাবনা আছে তবে বাস্তবতার নিরিখে বলা যায় এশিয়া কাপ ২০২৩ থেকে বাংলাদেশ ছিটকে পড়েছে। বাংলাদেশ একাদশ নির্বাচনে কালও ভুল করেছে। টপ অর্ডার এবং লেট্ অর্ডারে বিকল্প থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যর্থদের উপরেই ভরসা রেখেছে। লিটন, সাকিবের মত শীর্ষ ব্যাটসম্যানরা দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারেনি।

কাল কঠিন উইকেটে প্রথম বোলিং করার সুযোগ পেয়েও শ্রীলংকাকে স্বল্প স্কোরে বেঁধে ফেলতে পারেনি কয়েকটি ক্যাচ ফেলে দিয়ে। তার পরেও ২৫৮ রান তাড়া করে ম্যাচ জয় করার সুযোগ ছিল। উইকেটে স্থিতু হয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছে মুশফিক, মিরাজ এবং নাঈম। লিটন, সাকিব নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি। একমাত্র তৌহিদ হৃদয় (৮২) ছাড়া ব্যাট হাতে কাউকেই সফল বলা যাবে না।

ফলশ্রুতিতে ২৩৬ রানে অল আউট হয়ে ২১ রানে হেরে গাছে। এই টিম শেষ ম্যাচে ধরেনিলাম প্রতাপশালী ভারতকে হারিয়ে দিলো। তাহলেও কিন্তু বাংলাদেশের কোনো লাভ হবে বলে মনে হয় না। অন্যদিকে শিরোপাধারী শ্রীলংকা আরো একটি ফাইনাল খেলার সম্ভাবনা সুদৃঢ় করলো। ক্রমাগত ১৩ ওডিআই জিতে অস্ট্রেলিয়ার পর দ্বিতীয় দল হিসেবে ক্রমাগত ওডিআই ম্যাচ জেতার মাইল ফলক অর্জন করলো।

অনেকেই কলম্বোর ম্যাচগুলো বৃষ্টির কবলে পড়বে বলে শঙ্কায় ছিল। খেলা চলাকালে একবার আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখা দিয়েছিলো। আসি আসি করেও আসেনি  বর্ষণ। উইকেট কিন্তু ধীর গতির এবং সহজ ছিল না। টস জয় করে সাকিব বোলিং করে ভুল করেনি। তাসকিন, শরিফুল, হাসান মাহমুদ সঠিক লাইন-লেংথ বজায় রেখে শুরুতে চেপে ধরেছিলো শ্রীলংকাকে।  দিমুথ করুণারত্নেকে হাসান মাহমুদ ফেরানোর পর নিশাঙ্কা এবং মেন্ডিসের ক্যাচ মুশফিক এবং শামীম পাটোয়ারী ফেলে না দিলে হয়তো শ্রীলংকাকে ২০০ রানের নিচে বেঁধে রাখা যেত।

তারপরেও বাংলাদেশের পেসার এবং স্পিনাররা ভালো বোলিং করে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলো শ্রীলংকান ব্যাটসম্যানদের।  শুধু কালকের ম্যাচ সেরা সাদীরা সামারাবিক্রমা (৯৩) রানের দুরন্ত ইনিংস খেলে শ্রীলংকার স্কোর ২৫৭/৯ নিয়ে যায়। সাকিব হয়তো শরিফুল এবং হাসান মাহমুদের ১০ ওভার কোটা বোলিং করানোর হিসাবটি একটু ভুল করে ফেলে।

উইকেটে রান করা সহজ ছিল না। তাবু পরিকল্পনা করে ব্যাটিং করলে জয় অসম্ভব ছিল না। মেহেদীকে কাল আবারো ওপেনিং করতে পাঠিয়ে জুয়া খেলা হলো। ওপেনিং পার্টনারশীপ ৫৫ রান করার পর নাঈম অথবা মেহেদী মিরাজ একজন একপ্রান্ত আটকে রেখে খেললে দল উপকৃত হত।  হয়নি সেটি।  বরাবরের মতো উইকেটে স্থিতু হয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছে নাঈম।

মেহেদী যেটুকু করার করেছে। শ্রীলংকান অধিনায়ক উইকেট বুজতে পেরে নিজেই বোলিং করে মিরাজ ,নাঈমকে সাজঘরে ফেরত পাঠানোর পর লিটন, সাকিব  দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারেনি। তৌহিদ হৃদয় (৮২) এবং মুশফিক (২৯) ৫ম উইকেট জুটিতে ৭২ রানের জুটি গড়লেও অসময়ে আউট হয়ে যায় মুশফিক। লেট্ মিডল অর্ডারে শামীম পাটোয়ারী আর শেষ দিকে নাইন, টেন এবং জ্যাক ব্যর্থ হবে জানাই ছিল।

বাংলাদেশের বিকল্প ছিল আফিফকে খেলানো। কোন ভরসায় শামীম পাটোয়ারীকে আফিফের থেকে শ্রেয় মনে হয়েছে সেটি টিম ম্যানেজমেন্ট বলতে পারে। আবারো ভুলের মাসুল দিয়ে পরাজয় মেনে নিলো বাংলাদেশ। ২৩৬ রানে অল আউট হয়ে ২১ রানে হেরেছে বাংলাদেশ।

শূন্য হাতে আরো একবার এশিয়া কাপ থেকে ফিরে আসার দুয়ার খুলে গাছে।  এমনিতেই বিতর্কিত স্কোয়াড নির্বাচন আবার সেখান থেকেও ভুল একাদশ নির্বাচন। তাই মনে করি দলটির পরিণতির জন্য সার্বিক অব্যবস্থাপনাই দায়ী।

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

18 − 11 =