বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে কিছু প্রশ্ন

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে আত্মপ্রকাশের দুই যুগ পরেও বাংলাদেশ ক্রিকেট কেন একটি নির্দিষ্ট গন্ডিতে খাবি খাচ্ছে সেটি নিরুপন করতে কাউকে আলবার্ট আইনস্টাইন হতে হবে না। ক্রিকেট ঘনিষ্ট এবং সংশ্লিষ্ট সবাই জানে কোথায় গলদ, কোথায় বিচ্যুতি, কোথায় সংস্কার প্রয়োজন? কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো যখনি কাউকে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে শুধু মুখে বড় বড় বুলি। “লংকায় যেয়ে রাবন হয়ে যাচ্ছে”। কেন বাংলাদেশ দুই যুগ পরেও আইসিসি র‍্যাংকিংয়ে সব ফরম্যাটে তলানিতে থাকবে? কেন আজ পর্যন্ত কোন ফরম্যাটে সাফল্যের ধারাবাহিকতা সৃষ্টি করা গেলো না? বাংলাদেশ ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার পেছনে যোগ্যতার চেয়ে দূতিয়ালী বড় ভুমিকা পালন করেছে সবার জানা।  কিন্তু ২০০০ সালে টেস্ট স্বীকৃতি আর তার আগে ওডিআই খেলার স্বীকৃতি পাওয়া বাংলাদেশ আজও একটি ধারাবাহিক সাফল্য পাবার মত টেস্ট দল বা সাদা বলের ক্রিকেট দল গড়তে বার্থ হলো। ব্যার্থতার সিংহভাগ দায় বিসিবিকেই নিতে হবে। ইদানিং বাংলাদেশ ক্রিকেট কিংবদন্তি টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম সেন্সুরিংয়ান অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে দ্যুতি ছড়ানো আমিনুল ইসলাম বুলবুল সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে ক্রিকেট সংগঠনে কিছু মৌলিক পরিবর্তনের সূচনা করেছেন। জানিনা নানা কারণে বিতর্কিত বর্তমান বিসিবির মাধ্যমে বুলবুলের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার কতটুকু বাস্তবায়ন সম্ভব। ঢাকা কেন্দ্রিক দেশের ক্রিকেট অবকাঠামোর খোল নলচে পাল্টে ফেলে ক্রিকেটকে দেশের প্রতিটি বিভাগ, জেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে না পারলে প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশ হাবুডুবু খেতেই থাকবে বলা বাহুল্য।

আমাদের আসে পাশের দেশ ভারত, শ্রীলংকা এমনকি পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেট অবকাঠামো থেকেও বাংলাদেশ অনেক কিছুই শিক্ষার আছে। এই যে যুদ্ধ সংঘাত বিপর্যস্ত আফগানিস্তান কিভাবে বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গনে সাড়া ফেলছে কিভাবে এগিয়ে যাচ্ছে নেপাল, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড।  ইউএই, যুক্তরাষ্ট্র,ওমানের মত দলগুলো অন্য কেউ না হোক আইসিসিতে সম্পৃক্ত থাকার কারণে বুলবুল জানে। বাংলাদেশকে ক্রিকেট সংস্কৃতির প্রাথমিক পাঠ নিতে হবে। খেলোয়াড়, সংগঠক, টীম ম্যানেজমেন্ট, সাংবাদিক, দর্শক সবার দৃষ্টি ভঙ্গির আমূল পরিবর্তন করতে হবে। স্বীকার করতে হবে ক্রিকেটে বাংলাদেশের কিছু সাফল্য প্রাকৃতিক কারণে সৃষ্ট কিছু আন্তর্জাতিক মানের অসাধারণ ক্রিকেটারদের ব্যাক্তিগত এবং সমিষ্টিগত অবদানের ফসল.ধারাবাহিক সাফল্যের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো যেমন তৃণমূল পর্যায়ে উন্নত খেলার মাঠ, অনুশীলন সুবিধা, আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন প্রশিক্ষণ সুবিধা, ভালো মানের টুর্নামেন্ট, বয়সভিত্তিক ক্রিকেট প্রতিযোগিতা এগুলো অনুপস্থিত থাকায় বাংলাদেশ ক্রিকেটে ক্রমাগত পিছিয়ে যাচ্ছে। এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো কতটা চ্যালেঞ্জিং হয়ত বুলবুল অনুধাবন করছে।

বাংলাদেশ দল এখন শ্রীলংকা সফরে। দুই টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট শ্রীলংকার সঙ্গে চোখে চোখ রেখে শেয়ানে শেয়ানে লড়াই করলো। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্ট শোচনীয়ভাবে হেরে গেলো। সেই পরাজয়ের কি চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়েছে? দল নির্বাচন, একাদশ নির্বাচন কি যথাযথ ছিল? দায় শুধু খেলোয়াড়দের দিবো না? টিম ম্যানেজমেন্ট বা নির্বাচক মণ্ডলীকে দায় বদ্ধ করার সুযোগ রয়েছে।

তিন ম্যাচ ওডিআই সিরিজের প্রথম ম্যাচ সুবিধা জনক অবস্থায় থেকেও ব্যাটিং ধস নামায় হেরে যাওয়া অথবা তৃতীয় ম্যাচে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ব্যাট হাতে গুটিয়ে যাওয়ার দায় দায়িত্ব কিভাবে নির্ধারিত হবে? বাংলাদেশের ঘাটতি রয়েছে মানসম্পন্ন খেলোয়াড় গড়ে তোলার প্রক্রিয়ায়, স্কোয়াড নির্বাচনে, অনুশীলন প্রক্রিয়ায় এবং সর্বোপরি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের পথ নকশা তৈরী করে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায়। এক কথায় সর্বস্তরে পেশাদারি অবয়ব সৃষ্টিতে।

দেখুন স্কোয়াডে সাদা বল ক্রিকেটে দারুন ফর্মে থাকা শেখ মোহাম্মদ নাঈমকে একটি ম্যাচ খেলার সুযোগ দেয়া হলো না, সাইড বেঞ্চে বসে থাকলো রিশাদ হোসেন, দুর্দান্ত ফর্মে থাকা নুরুল হাসান সোহান, মোসাদ্দেক আর মাহিদুল অঙ্কনকে স্কোয়াডেই রাখা হলো না। গাজী আশরাফ লিপুও চলেছে গতানুগতিক ভাবে।

বিসিবির বর্তমান সভাপতি বিগত সময়ের বিতর্কিত পরিচালকদের সঙ্গী করে কিভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেটে দৃশ্যমান উন্নয়ন করেন দেখার অপেক্ষায় রইলাম।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

three × five =