বাংলাদেশ ভারত টেস্ট দৈরথ সকালের সূর্য দেখে যে দিন চেনা গেলো না

সালেক সুফী

টেস্ট ক্রিকেট তার চিরায়ত সনাতন রমণীয় লাস্যময়ী রূপেই ধরা দিয়েছিলো কাল চেন্নাই স্টেডিয়ামে। টস হেরে ব্যাটিং করতে শুরু করে ভারতের বিশ্বসেরা ব্যাটিং টপ অর্ডার বদলে যাওয়া নতুন বাংলাদেশের তুখোড় পেস আক্রমণের মুখে ৩৯ রানেই রোহিত, গিল, কোহলিকে হারিয়ে কোনঠাসা হয়ে পড়েছিল। তরুণ হাসান মাহমুদের গতির সঙ্গে সুইং বিষ মাখা নিখুঁত লেংথ লাইনের অগ্নিগোলা ভারতের ব্যাটিং দুর্গে আঘাত হেনে ভারত শিবিরে ইঁদুর মাঝে বেড়াল ছেড়ে দিয়েছিলো। স্কোর বোর্ডে রোহিত, শুভমান আর কোহলির পাশে লেখা ৬,০,৬ দুটি ক্যাচ না ফস্কালে রাহুল, প্যান্টকে দ্রুত ফেরানো যেত। রিশাভ পান্টকে ৩৯ রানে হাসান মাহমুদ ফেরানোর আগেই চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৬২ রান যোগ হলো। টপ অর্ডারের একমাত্র লড়াই করা ব্যাটসম্যান যশবি জায়েসওয়ালকে নাহিদ রানা ৫৬ রানে বিদায় করার পর রাহুলকে দ্রুত ফেরায় মেহিদি মিরাজ। ১৪৪ রানে ৫ উইকেট।  জুটি বাঁধলো ভারতের দুই স্পিনিং অল রাউন্ডার রবিচন্দ্র অশ্বিন এবং রবীন্দ্র জাদেজা। ভারতের এই বিশ্বসেরা স্পিনার জুটি ব্যাট হাতে না হলেও বল নিয়ে অনেক টেস্ট জিতিয়েছে ঘরে বাইরে। কাল দলের বিপন্ন মুহূর্তে প্রতিরোধের দুর্ভেদ্য দেয়াল তুলে ধরে দিন শেষে অবিচ্ছিন্ন থেকে ১৯৫ রান যোগ করলো। অনিশ্চয়তার নড় বোরড় অবস্থান ১১৪/৬ থেকে দিনশেষে ৩৩৯/৬ স্বস্তিদায়ক অবস্থানে ভারত। অশ্বিন অপরাজিত ১০২ এবং জাদেজা অজেয় ৮৬ রানে। দ্বিতীয় দিন সকালের সেশনে দ্রুত কিছু উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশ ভারতকে ৪০০ রানের নিচে সীমিত করতে না পারলে হয়তো ম্যাচ থেকে ছিটকে যাবে। বাংলাদেশের অবশ্য প্রয়োজন জুটি দ্রুত ভেঙে দিয়ে ভারত ব্যাটিং লেজ উন্মুক্ত করা। দিনে খেলা বিবেচনায় হাসান মাহমুদ না রাবি অশ্বিনকে নায়কের আসনে বসাবেন সেটি ভক্ত অনুরাগীদের উপর ছেড়ে দিলাম। তবে ভারতের দুর্গম দুর্গে রয়েল টাইগারদের হুঙ্কার কাল ক্রিকেট বিশ্বে আলোড়ন তুলেছে বলা যেতেই পারে। সকালের রাজা বিকেলে ফকির টেস্ট ক্রিকেটে এই কথা পড়েছি নেভিল কার্ডাস বা শঙ্করী  প্রসাদের ক্রিকেট লেখনীতে। প্রথম সেশনে উজ্বল ছিল বাংলাদেশ।  শেষ সেশনে ভারতকে আলোকিত করেছে অশ্বিন – জাদেজা। সেশন সেশন পাল্টে যাওয়া এই খেলাটি নিয়েই শ্রদ্ধেয় বদরুল হুদা চৌধুরী লিখেছেন  তবু ক্রিকেট ভালোবাসি।

কাল টস জয়ী বাংলাদেশ পেসি, বাউন্সি উইকেটে অনুকূল পরিস্থিতি ব্যবহার করে ভারত বাটিংয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছিলো। রোহিত, গিল, কোহলিকে যে বল তিনটিতে হাসান মাহমুদ ফিরিয়েছে সেগুলো দীর্ঘদিন মানসপটে লেখা হয়ে থাকবে। দুই দুইটি ক্যাচ না ফস্কালে কিন্তু কাল প্রথম সেশন আরো উজ্জ্বল হত বাংলাদেশের। হয় নি সেটি।  এটাই টেস্ট ক্রিকেট। ক্ষনে ক্ষনে রূপ পাল্টানো গৌরব উজ্জ্বল অনিশ্চয়তা। তরুণ জশোয়াল ৫৬ রান করে ব্যাটিং ধস সামাল দিয়েছিলো শুরুতে রিশাভ প্যান্টকে (৩৯) সাথী করে। এর পর একসময় স্কোর দাঁড়িয়েছিল ১৪৪/৬। বাংলাদেশ বোলিং মাঝ পথে খেই হারিয়েছিল কিছুটা। ভারত বাটটিংয়ের শেষ ভরসা অশ্বিন (১০২*) রবীন্দ্র জাদেজা (৮৬*) অবিচ্ছিন্ন ৭ম উইকেট জুটিতে ১৯৫ রান যোগ করে বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছুড়ে ফেলেছে বলবো না। কিন্তু ভারতকে কোনঠাসা অবস্থান থেকে উদ্ধার করেছে বলতেই হবে। যেন ঘাম দিয়ে জ্বর সেরেছে ভারতের। খেলার এখনো দীর্ঘ পথ বাকি, বাংলাদেশ ম্যাচে টিকে থাকতে হলে অবস্যই ভারত ইনিংস ৪০০ সীমিত রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে যে কোনো ভারত উইকেটে চতুর্থ ইনিংসে অশ্বিন, জাদেজাকে মোকাবিলা করা সহজ নয়।

তবে বাংলাদেশের বোলারদের উজ্জ্বল ভূমিকাকে কৃতিত্ব দিতেই হবে ভারত শিবিরে কাঁপুনি তোলার জন্য। ৫৮/৪ নিয়ে তরুণ হাসান মাহমুদ প্রমান করলো  জ্বলে ওঠা বাংলাদেশ পেস বোলিং হটাৎ জ্বলা বিদ্যুৎ ঝলক ছিল না। রোহিত, কোহলি, গিলকে রীতিমত বোকা বানিয়ে কাল ফিরিয়েছে মাহমুদ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

fourteen + three =