সংশপ্তক হাসান
বাপ্পা-চাঁদনী
বাপ্পা মজুমদার ও চাঁদনী ২০০৮ সালে গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন। তাদের প্রেমটাকে ঠিক প্রেম বলা যায় না। বন্ধুত্ব বা তার চেয়ে বেশি কিছু ছিল এটি। কিন্ত বাপ্পার ভালো লেগেছিল চাঁদনীকে। দুজনের মধ্যে বেশ ভাবও জমে উঠেছিল। একসঙ্গে চটপটি ফুচকা আড্ডা খুনসুটি সবই হতো। সেইসঙ্গে রাত জেগে হতো কথাও। এমন যখন চলছিল তখন একদিন বাপ্পা শুনতে পান চাঁদনীর বাড়িতে ঘটক এসেছে। চাঁদনীর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এটা নিয়মিতই হয়। প্রায়ই তার বিয়ের খবর নিয়ে ঘটক আসেন তাদের বাড়িতে।
চাঁদনী বিষয়টি স্বাভাবিক ভাবে নিলেও বাপ্পার কাছে অস্বাভাবিক লাগছিল ব্যাপারটি। তার মনে হচ্ছিল, চাঁদনী বুঝি তার থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। মনে হতে থাকে চাঁদনী নামের মেয়েটি আড়ালে চলে গেলে অচল হয়ে যাবেন তিনি। বাপ্পা এক রাতে ফোন করে বিয়ের প্রস্তাব দেন তাকে। হঠাৎ এমন প্রস্তাবে কি বলবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না চাঁদনী। সম্বিত ফিরে পেলে তিনি জানান, এ বিষয়ে তার মা-বাবার সিদ্ধান্তই তার সিদ্ধান্ত। সেই অনুযায়ী আগান বাপ্পা। সেসময় চাঁদনীকে মুগ্ধ করেছিল বাপ্পার ভদ্রতা ও সৌজন্য। এক সাক্ষাৎকারে চাঁদনী বলেছিলেন, ২০০৮ সালে আমরা বিয়ে করি। বিয়ের আগে আমার মায়ের পা ধরে বাপ্পা মজুমদার তিন ঘণ্টা বসেছিলেন। মায়ের প্রতি যার এত সম্মান সেটা দেখে আমি মুগ্ধ হই। কারণ যে ছেলে মায়ের পা ধরে বসে থাকতে পারে, সে নিশ্চই তার স্ত্রীকে সম্মান করবেন, ভালোবাসবেন সেটাই স্বাভাবিক।
বাপ্পা-চাঁদনীর দাম্পত্যজীবন ভালোই চলছিল। প্রেম ভালোবাসার মিশেল ছিল সবকিছুতে। কিন্তু চিত্রনাট্য বদলে যেতে সময় লাগেনি। ফলস্বরূপ এক ছাদের নিচে লম্বা সময় কেটে যাওয়ার পর তাদের সম্পর্কে চিড় ধরে। বিচ্ছেদের খবর বাপ্পা-চাঁদনী দুজনেই নিজেদের সামাজিকমাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে ঘর ভাঙার খবর থাকলেও ছিল না ভাঙনের কারণ। অবশ্য এ প্রসঙ্গে বাপ্পা মজুমদার কখনও মুখ খোলেননি। তবে শোনা গেছে, সংসারে সুখ ছিল না তাদের। ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকত। আরও একটা কারণ ছিল তাদের সন্তান না থাকা। দীর্ঘ সময় কেটে যাওয়ার পরও ঘরে সন্তান না আসায় সংসার থেকে মন উঠে গিয়েছিল বাপ্পার। এই কারণগুলোর সঙ্গে চাঁদনীর বক্তব্যও মিলে যায়। বাপ্পার সঙ্গে তার বিচ্ছেদের কারণ বর্ণনার সময় তিনি বলেছিলেন, আমাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ ছিল। দাম্পত্য জীবনের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে যেত। আমি নাকি নেশাখোর, আমার বাচ্চা হয় না; এসব কথা বলে বেড়াত আশেপাশের লোকজন। এ সময় এসবের জন্য বাপ্পাকে দায়ী করে তিনি বলেন, স্বামী-স্ত্রীর কথা যদি অন্য কেউ জানে, তাহলে তেমন স্বামী চাই না।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছিলেন অভিনেত্রী ও উপস্থাপক তানিয়া হোসাইন। কেননা চাঁদনীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ ঘোষণার আগেই তানিয়ার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন বাপ্পা। এতে ধারনা করা যায়, সংসারে চাঁদনী থাকাকালীনই তানিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন বাপ্পা। বাপ্পা-তানিয়া এখন সুখী দম্পতি। তাদের ঘর আলো করে এসেছে এক কন্যা সন্তান। বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে স্ত্রী কন্যাসহ ক্যামেরাবন্দি হন বাপ্পা। তাতে বোঝা যায়, সুখেই দিন কাটাচ্ছেন বাপ্পা-তানিয়া।
অন্যদিকে চাঁদনী এখনও একা। অভিনয়েও দেখা যায় না তাকে। লম্বা সময় পর গত বছর একটি টিভি নাটকে কাজ করেছেন তিনি। সেসময় বিয়ে প্রসঙ্গে বলেছিলেন, জীবন থেমে থাকে না। ভেবেচিন্তে পথ চলতে চাই। বিয়ে তো অবশ্যই করব। যদি কেউ আমার জীবনে আসে, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আলোচনা করব। সবকিছু ব্যাটে-বলে মিলে গেলে যেকোনো দিন বিয়ের ঘোষণা দেব।
দেবাশীষ-তানিয়া
উপস্থাপিকা ও অভিনেত্রী তানিয়া হোসাইনের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করলে চলে আসে দুটি নাম। উপস্থাপক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা দেবাশীষ বিশ্বাস ও সংগীতশিল্পী বাপ্পা মজুমদার। শুরুতে তানিয়ার হাত ধরেছিলেন দেবাশীষ। তাদের মধ্যে ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। কিন্তু বন্ধুত্বে সীমাবদ্ধ থাকেনি তানিয়া-দেবাশীষের সম্পর্ক। ধীরে ধীরে তা রূপ নেয় ভালোবাসায়। তবে সম্পর্ক চলাকালীন নিজেদের বন্ধু বলেই পরিচয় দিতেন তারা। অবশেষে আড়াই বছর প্রেম করার পর গাঁটছড়া বাঁধেন তারা। দিনটি ছিল ২০১০ সালের ৩০ মার্চ। সেইসঙ্গে পরিষ্কার হয় তাদের সম্পর্কের বিষয়টি। কিন্তু এই জুটির সংসার এক বসন্তও টেকেনি। তবে সংসার ভাঙার কারণ কখনও স্পষ্ট করেননি দেবাশীষ ও তানিয়া। দুজনেই জানিয়েছিলেন, মতের অমিলের কারণেই দুজনের পথ দুদিকে বেঁকে গেছে তাদের।
তবে শোনা যায়, ইসলাম ধর্মের অনুসারী হওয়ায় তানিয়াকে কখনও মেনে নেয়নি দেবাশীষের পরিবার। ফাটলটা এখান থেকেই ধরেছিল যা পরে রূপ নেয় বিচ্ছেদে। তানিয়ার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর খুব বেশিদিন একা থাকেননি দেবাশীষ। ২০১২ সালে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো গাঁটছড়া বাঁধেন। অন্যদিকে তানিয়া একাকী পথ চলছিলেন। এ কথা শুনে মনে হতে পারে দেবাশীষের হাত ছেড়ে মানসিকভাবে হয়তো ভেঙে পড়েছিলেন এ তারকা। কিন্তু বিষয়টি মোটেও সেরকম নয়। কেননা প্রায় এক দশকের এই একাকী জীবনে তিনি একাধিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন বলে জানা যায়। তবে এ প্রসঙ্গে তানিয়া কখনও কিছু বলেননি।
অবশেষে তানিয়া ঘর বাঁধেন বাপ্পার সঙ্গে। ২০১৮ সালের ১৬ মে দুই পরিবারের উপস্থিতিতে বাগদান হয় তাদের। আংটি বদল হয় তানিয়ার মায়ের বাসায়। সেসময় এ বিয়ে নিয়ে বাপ্পা বলেছিলেন, তানিয়া আমার বন্ধু। দারুণ একজন বন্ধু। তানিয়াকে আমার ভালো লাগে। এর সূত্র ধরেই আমার ভাবনা তানিয়াকে জানাই, তানিয়াও তার ভাবনা আমাকে জানায়। আমরা পরিবারের সান্নিধ্য ছাড়া চলতে চাই না। দুই পরিবারের সিদ্ধান্তে একান্তই পারিবারিক ভাবে আমাদের বাগদান হয়।
সেসময় বাপ্পা ও তানিয়ার বিয়ের সংবাদ কানে পৌঁছায় দেবাশীষের। তবে এতে তার প্রতিক্রিয়া আগ্রাসী ছিল না। ইতিবাচক ভাবেই দেখেছিলেন বিষয়টি। বাপ্পা-তানিয়াকে শুভ কামনা জানান তিনি। নিজেও যৌথ জীবনে সুখী আছেন বলে জানিয়েছিলেন এ নির্মাতা-উপস্থাপক।
দেবাশীষ বলেন, বাপ্পা মজুমদার ও তানিয়ার আগেও বিয়ে হয়েছিল। তাদের বিয়েটা সুখের হয়নি। আমি এখন যথেষ্ট সুখে আছি, ভালো আছি। আমিও চেয়েছিলাম তানিয়া সুখী হোক, ভালো থাকুক। তানিয়া যাকে বিয়ে করেছেন তিনি বাপ্পা মজুমদার দাদা। তার মতো ভালো মিউজিশিয়ান খুব কমই আছে। তিনি একজন ভালো মানুষও। আমি বলবো, তানিয়া একজন ভালো জীবনসঙ্গী পেয়েছে। বাপ্পা মজুমদার দাদার জন্য অনেক শুভ কামনা রইল।
তবে চাঁদনীর প্রতিক্রিয়াটা ছিল একটু অন্যরকম। তিনি অনেকটা শ্লেষের সঙ্গেই তাদের নিয়ে কথা বলেছিলেন। প্রাক্তনের বিয়ের সংবাদ শুনে এ তারকা তখন বলেছিলেন, দুটি দুখী মানুষ একসাথে হয়েছে। দোয়া করি তারা সুখে থাক।
লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: দাম্পত্য