বাবাকে নিয়ে চঞ্চল চৌধুরী আবেগঘন পোস্ট

গত ১৩ দিন ধরে হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী বাবা রাধা গোবিন্দ চৌধুরী। বয়স তার ৯০ ছুঁইছুঁই। সেরিব্র্যাল অ্যাটাক হয়েছে তার। দিচ্ছেন না কোনো সাড়া। বাবার জন্য কাঁদছেন চঞ্চল। অসুস্থ বাবাকে নিয়ে কাতর চঞ্চলের আর্তনাদ ভারি করে তুলেছে সামাজিকমাধ্যম।

রোববার ফেসবুকে চঞ্চল চৌধুরীর লেখেন, ‘অভিনয় আর জীবন কখন যে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে, বুঝতে পারিনি… ‘কারাগার’ ২ চলে এসেছে হইচই-তে। যারা দেখেছেন, তারা ভেবেছেন আমি হয়তো অভিনয় করেছি… ওটা সত্যি অভিনয় ছিল না… আমার মায়ের জন্য আমার যতটা আবেগ, যতটা কষ্ট, যতটা ভালোবাসা…‘কারাগার’২ তে আপনারা সেটাই দেখেছেন।

দিব্য’র অভিনয়ও আমার কাছে অভিনয় মনে হয়নি। আমার চোখের জলের সঙ্গে দিব্য’র চোখের জল মিশে গিয়ে অন্য এক আবেগের জন্ম দিয়েছে ‘কারাগার’২ তে…,  দিব্য’র সঙ্গে আমি এক ফ্রেমে দাড়াইওনি। তাহলে একই আবেগে কিভাবে দুজন ভাসলাম চোখের জলে, দর্শকদের চোখও কিভাবে ভিজে গেল- এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই…।

ঠিক আরেকটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে ফিরছি সন্ধ্যা থেকে…। অনেকেই জানেন আমার বাবা প্রচণ্ড অসুস্থ। আজ ১৩ দিন বাবা আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। শেষ সময়ে অপেক্ষারত আমরা সবাই…। আমার অচেতন বাবার মনের কথাগুলো দিব্য কিভাবে লিখে ফেলল।

আজ সন্ধ্যায় খুশী যখন হাসপাতালে বসে দিব্য’র লেখাটি পড়ে শোনাচ্ছিল, আমরা কেউই চোখের জল আটকে রাখতে পারিনি। মনে হচ্ছিল এটাই আমাদের বাবার কথা। দিব্য’র লেখাটি এই অসময়ে আমাদের একটা পথ দেখিয়ে দিল। সত্যিই…আমাদের সকল সন্তান যদি দিব্য’র মত আবেগটুকু নিজের বুকে ধারন করে বড় হতো, সেটাই হতো আমাদের সবচেয়ে বড় প্রশান্তি…। অনেক ভালোবাসা দিব্য…।’

নাট্যকার বৃন্দাবন দাস ও অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি দম্পতির ছেলে দিব্য চঞ্চল চৌধুরীর বাবাকে ঘিরে যে কবিতা লিখেছেন তা তুলে ধরা হলো:

মাস্টার

দিব্য জ্যোতি

বাবা,

তোরা খেয়েছিস তো?

তোরা সব খেয়ে নে।

আমার যাবার সময় হয়ে এসেছে,

তোরা এবার আমায় যেতে দে।

প্রতিবার উৎসবে যখন তোমরা বাড়ি থেকে ফিরে যেতে,

আমি অশ্রুজলে বাঁধ সেধে তোমাদের যেতে দিতাম,

তোমরাও সেইরূপ আমায় এই জীবন – উৎসব থেকে এবার মুক্তি দাও।

আমি পদ্মার বিস্তীর্ণ চর চষে চলা মানুষ!

মাঘ কুয়াশার চাদর আলিঙ্গন করে দৃঢ় পায়ে দাঁড়িয়ে ছাত্র পড়ানো মাস্টার।

আমি আর এই কৃত্রিম যন্ত্রে নিশ্বাস নিতে পারছি না।

তোরা মন খারাপ করিস না বাবা,

তোরা আমার শক্তি, আমার চিন্ময়ীর যত্ন নিস।।

আমাকে তোরা মনের কোনে একটা ছোট কামরায় জায়গা দিস।

আমি সেইখানেই বেঁচে থাকবো আজীবন…

আমার জীবনের ক্লাস আজ শেষ হয়ে এলো,

বাজাও হে ছুটির ঘণ্টা! আমি মাস্টার চললাম আজ,

ভালো থাকিস তোরা!

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

2 × 3 =