বাহারি ট্রেন্ডি ঝুমকা

নীলাঞ্জনা নীলা

গয়না ছাড়া নারীর সাজ পরিপূর্ণ হয় না। যুগ যুগ ধরে নারীর সাজের অংশ গয়না। পোশাক ও সাজের সাথে মিলিয়ে নারীরা গয়না পরিধান করে থাকে। কয়েক দশক আগে ফিরে গেলে নারীর সাজে দেখা যায় বাহারি সব গয়না। যিনি যত বেশি নকশার গয়না পরিধান করতেন তাকে তত বেশি অভিজাত হিসেবে ধরা হতো। ইদানিং গয়না ফ্যাশন ট্রেন্ডে থাকলেও আগের মতো গা ভর্তি গয়না পরিধান করতে দেখা যায় না। এখন দেখা যায় হালকা গয়নার জনপ্রিয়তা। খুব বেশি গয়না পরতে পছন্দ করে না এমন নারী খুঁজে পাওয়া গেলেও কানে ঝুমকা বা দুল পরতে ভালোবাসে না এমন নারী খুঁজে পাওয়া দায়। ফ্যাশনে ঝুমকা একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে।

অক্সিডাইজড ঝুমকা

মৌচাক, নিউ মার্কেট, গাউছিয়া এবং বিভিন্ন অনলাইন পেজে এখন দেখা যায় অক্সিডাইজ ঝুমকার বাহারি নকশার কালেকশন। বর্তমানে তরুণদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে অক্সিডাইজড দুল। এর কারণ সাজে এটি গর্জিয়াস লুক দেওয়ার পাশাপাশি দামেও অন্যান্য গয়নার থেকে সাশ্রয়ী। স্টুডেন্ট বাজেট ফ্রেন্ডলি হওয়ায় অক্সিডাইজড ঝুমকা বেছে নিচ্ছেন অনেকে। মাঝারি সাইজ থেকে ওভার সাইজ অক্সিডাইজড ঝুমকা পাওয়া যায়। ঝুমকার সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার জন্য কখনো এতে আয়না বসানো হয় কিংবা কখনো লতাপাতা ময়ূর ইত্যাদির নকশা করা হয়। অক্সিডাইস এসব ঝুমকা দেখতে ভারী মনে হলেও এমনভাবে তৈরি করা হয় যা হালকা এবং যে কেউ পরিধান করতে পারেন। যেকোনো দেশীয় সাজ যেমন শাড়ি, সুতির সালোয়ার-কামিজ ইত্যাদির সাথে এসব ঝুমকা মানিয়ে যায়। এছাড়া অনেকে ওয়েস্টার্ন পোশাকের সাথে ফিউশন লুক দেওয়ার জন্য অক্সিডাইজ ঝুমকা পরে থাকেন।

কুন্দন

সালোয়ার-কামিজ কিংবা শাড়ি যেকোনো কিছুর সাথে হালকা সাজ নিয়ে কুন্দনের ঝুমকা পরলে গর্জিয়াস লুক আসে। কুন্দনের ঝুমকা ও গয়না ভারতীয় নারীদের কাছ থেকে বাঙালি নারীদের অংশ হয়েছে। কুন্দনের ঝুমকা পার্টি লুকে বেশি দেখা যায়। কারণ ঝুমকার ডিজাইন ভারী হবার কারণে নিত্য ব্যবহারযোগ্য ঝুমকা এটি নয়। বেশিরভাগ কুন্দনের ঝুমকায় আলাদা করে ফিতা দিয়ে দেওয়া হয় যাতে করে বেশি ভারী না লাগে।

দেশীয় উপকরণের ঝুমকা

এখন দেশের ডিজাইনাররা দেশীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি করছেন বিভিন্ন ধরনের ঝুমকা। ঝুমকায় ফিউশন আনার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে কড়ি বা রুদ্রাক্ষ। এছাড়া আরো বানানো হয় কাপড় কিংবা কাঠের ঝুমকা। কাপড়ের ঝুমকার মধ্যে বিভিন্ন মেটাল দিয়ে নকশা করা হয়। কাঠের বড় ঝুমকার মধ্যে হ্যান্ডপেইন্ট করতে দেখা যায়। এছাড়া পাথর দিয়ে নকশা করা হয়। কাপড়ের ঝুমকায় ব্যবহার করা হয় জামদানি মোটিফ কিংবা রিকশা প্রিন্টের কাপড়। দেশীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি গয়না পরিধান করে দেশীয় ঐতিহ্য ধারন করা যায়। এছাড়া অনেকে বোহেমিয়ান লুক দেওয়ার জন্য এ ধরনের ঝুমকা পরে থাকেন। এইসব ঝুমকা হালকা গড়নের বলে নিত্যদিন ব্যবহার করা যায়।

জার্মান সিলভার

দেশীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ড তৈরি করছে জার্মান সিলভারের ঝুমকা। জার্মান সিলভার ঝুমকার মধ্যে সাদা পাথর কিংবা পুতি ব্যবহার করা হয়। জার্মান সিলভারের ঝুমকা সাধারণত সাদা রঙের হয়ে থাকে। সাদার মধ্যে রঙিন ভাব আনতে বিভিন্ন রঙের পুতি ব্যবহার করা হয়। যারা হালকা সাজের মধ্যে গর্জিয়াস লুক দিতে চায় তারা এ ধরনের জার্মান সিলভার দুল বেছে থাকেন। জামদানি-কাতান শাড়ি বা যেকোনো সুতির শাড়িসহ বাঙালি লুকের সাথে সিলভার গয়না মানানসই। সিলভার গয়নার ডিজাইন ভিন্নধর্মী হয়। তাই রুচিশীল নারীদের পছন্দ সিলভার ঝুমকা।

রূপার ঝুমকা

কয়েক বছর ধরে রুপার গয়নার চাহিদা অনেক বেড়েছে। সোনার গয়নার দাম আকাশচুম্বি হবার কারণে অনেকেই বিয়ের জন্য রূপার গয়না বেছে নিচ্ছেন। বিয়ের কনের কানেও দেখা যায় বড় রুপার ঝুমকা। একঘেয়ে নকশা থেকে বের হয়ে এখন রূপার মধ্যে বৈচিত্র্যময় নকশা করা হচ্ছে। বাজারে এখন বিভিন্ন সাইজের রুপার ঝুমকা পাওয়া যায়। রুপার উপরে বিভিন্ন ধরনের পাথরের কাজ করা হয়। বড় থেকে ছোট যেকোনো সাইজের রুপার ঝুমকাই রেডিমেড কিনতে পাওয়া যায়। আবার চাইলে কাস্টমাইজ করে বানিয়ে নেওয়া যায়। বিক্রেতারা মনে করেন, সোনার দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এবং রূপার গয়নার বৈচিত্র্যের কারণে এখন সবাই এদিকে ঝুঁকছে।

ইমিটেশন ঝুমকা

বিভিন্ন গয়নার দোকান ঘুরে জানা যায় ইমিটেশন ঝুমকার বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। বিশেষ করে যারা সোনার গয়নার মতো দেখতে ঝুমকা পরিধান করতে চান তারা সাশ্রয়ী মূল্যের বিভিন্ন ইমিটেশনের ঝুমকা বেছে নিয়ে থাকেন।  বিয়ের বাজারেও এখন অনেকে ইমিটেশন ঝুমকা কিনে থাকেন। তাই লোকাল মার্কেট থেকে শুরু করে বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক ইত্যাদি জায়গায় ইমিটেশন ঝুমকার কালেকশন দেখা যায়। তবে ইমিটেশন ব্যবহারে কিছুটা সাবধান হওয়ার জরুরি। কারণ সস্তা উপাদান দিয়ে তৈরি হয় বলে ব্যবহার করলে অনেকের এলার্জি কিংবা চুলকানির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে।

মুক্তার দুল

মুক্তার ছোট টপ সবচেয়ে জনপ্রিয় হলেও মুক্তার দুল অনেকেই ব্যবহার করে থাকেন। কয়েক লেয়ারের মুক্তার দুল লক্ষ্য করা যায়। মুক্তার দুলে বিভিন্ন ধরনের পাথর ব্যবহার করা হয়। সাদা, হালকা গোলাপি, আকাশি ইত্যাদি রঙের মুক্তার দুল পাওয়া যায়। মুক্তার গয়না সবসময় অভিজাত। শুধু এ যুগের তরুণীদের নয় সব বয়সী মানুষের মুক্তার গয়নায় মানিয়ে যায়। অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ নারী শাড়ির সাথে যেকোনো অনুষ্ঠানে মুক্তার দুল পরে থাকেন। যুগ যুগ ধরেই মুক্তার গয়না সকলের প্রিয়। যারা ক্লাসি লুক দিতে চান তারা যেকোনো পোশাকের সাথেই মুক্তার দুল পরে থাকেন। অনেকে ক্লাসে কিংবা অফিসে যাওয়ার সময়ও মুক্তার দুল পরিধান করেন।

ঝুমকা দিয়ে সাজ

যেকোনো সাজের সাথে ঝুমকা মানিয়ে যায়। দেশীয় সাজের সাথে বেশি ঝুমকা পরিধান করা হলেও ওয়েস্টার্ন কিংবা অন্যান্য সাজের ক্ষেত্রেও অনেকে ঝুমকা বেছে নিচ্ছেন। তবে বড় থেকে মাঝারি ও ছোট সাইজের ঝুমকা যা নিত্য ব্যবহার করা যায় এবং কানে তেমন ব্যাথা লাগে না এমন ঝুমকার জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। খুব ভারী মেকআপ নিয়ে জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক পরলে মাঝারি সাইজের ঝুমকা পরিধান করলে মানানসই লাগে। আবার অনেকের রয়েছে বড় ঝুমকার প্রতি বিশেষ আকর্ষণ। তবে বড় ঝুমকা পরিধান করলে মেকআপ কিছুটা হালকা রাখা উচিত। ওয়েস্টার্ন পোশাকের সাথে ঝুমকা পরতে চাইলে অক্সিডাইজড কিংবা দেশীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি ঝুমকা বেছে নেওয়া যেতে পারে।

ঝুমকার যত্ন

দেখা যায় যত ভালো কিংবা দাম দিয়ে ঝুমকা কেনা হোক না কেন অনেক সময় তা কালো বা নষ্ট হয়ে যায়। শখের ঝুমকা যাতে নষ্ট না হয় তাই অবশ্যই এর যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। অনেকে দিনের পর দিন ড্রয়ারে কিংবা যেকোনো স্থানে ঝুমকা ফেলে রাখেন, কোনো যত্ন নেন না। ফলে অনেক সময় ঝুমকা ছত্রাক কিংবা ব্যাকটেরিয়ার কারণে নষ্ট হয়ে যায়। বদ্ধ স্থানে না রেখে এমন স্থানে ঝুমকা রাখা উচিত যেখানে পর্যাপ্ত আলো বাতাস পাওয়া যায়। সপ্তাহে অন্তত একদিন রোদে দেওয়া প্রয়োজন, এতে ঝুমকায় ব্যাকটেরিয়া থাকলে তা ধ্বংস হয়ে যাবে। ঝুমকার পর্যাপ্ত যত্ন না নিলে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয়ে কানে ইনফেকশন হওয়া সম্ভাবনা থাকে। যেকোনো উপাদানের ঝুমকা বেছে নেওয়ার আগে জানতে হবে তাতে অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি না, তা না হলে কানের ক্ষতি হতে পারে।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: ফ্যাশন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

9 − 2 =