সালেক সুফী: ডিসেম্বর বাংলাদেশিদের মহান বিজয় অর্জনের মাসে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়ে অনেক আত্মত্যাগ, বিসর্জনের বিনিময়ে। ২০২১ বাংলাদেশের বিজয়ের স্বর্ণজয়ন্তী। সঙ্গত বিবেচনায় এই মাসে অন্তত পাকিস্তানের কাছে ধবল ধোলাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের কাছে গভীর দুঃখের আর কষ্টের। খেলায় জয় পরাজয় হতেই পারে। কিন্তু যেভাবে বৃষ্টি বিঘ্নিত ঢাকা টেস্ট বিনা যুদ্ধে বাংলাদেশ হেরে গেলো সেটি নানা কারণেই আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করে। টি২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ বিদ্ধস্ত হলো। টি২০ সিরিজে তবু কিছুটা লড়াই করেছিল মাহমুদুল্লাহ বাহিনী। কিন্তু টেস্ট সিরিজে চট্টগ্রামে হারলো ৮ উইকেটে এবং ঢাকায় মূলত পাঁচ দিনের ম্যাচে দুই দিনেই ইনিংস পরাজয়। বিদ্ধস্ত বিপর্যস্ত দলটি এখন টেস্ট সিরিজ খেলতে নিউ জিল্যান্ডের পথে। কি বিড়ম্বনা, কি কষ্ট? আর কোথায় গেলে বোধোদয় হবে বাংলাদেশের?
২০০০ থেকে টেস্ট পরিবারের সদস্য বাংলাদেশ। দীর্ঘ দুই দশকে বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট বা টি২০ খেলায় কী অর্জন করেছে? অথচ ১৯৯৯ বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পাকিস্তান দলকে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বে হারিয়ে দিয়ে আলোড়ন তুলেছিল। তখন কিন্তু তৎকালীন হেড কোচ ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি স্যার গর্ডন গ্রিনিজ সঠিক কথাই বলেছিলেন। তাঁর মতো ক্রিকেটবোদ্ধাকে পত্রপাঠ বিদায় করে ভালো করেনি বাংলাদেশ।
কিংবদন্তি ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার স্যার গর্ডন গ্রিনিজ ১৯৯৯ বলেছিলেন বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটের জন্য প্রস্তুত না। ২০২১ এসে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে অবস্থান সেই ধারণাটি সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। ২০০০-২১ কি অর্জন বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে? বুলবুল বিশ্বক্রিকেট উন্নয়নে কাজ করছে। অপি কোথায় জানি না। আকরাম, সুজন হয়তো কিছু করছে। লাভের গুড় পিঁপড়ায় খাচ্ছে।
আমরা সবাই জানি ঘরোয়া ক্রিকেটের মান বলতে এখন আর কিছু অবশিষ্ট নাই। নিচু মানের উইকেট ধীর, নিচু হয়ে আসা উইকেটে না হয় পেস বোলিং খেলার প্রস্তুতি, না যাচাই হয় স্পিন বোলিংয়ের সঠিক মান। ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে বিশ্বমানের ক্রিকেটার গড়ার প্রস্তুতি হয় না। অল্প পানিতে বিচরণ করা মাছগুলো সাগর সাঁতারে মুখ থুবড়ে পড়ে। ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে না আছে স্বল্প, মধ্য বা দীঘস্থায়ী পরিকল্পনা। আর তাই বাংলাদেশ ক্রিকেট দ্রুত তলানিতে ডুবে যাচ্ছে।
ক্রীড়া প্রেমিক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অনুধাবন করবেন প্রতিভার আকাল নেই বাংলাদেশে। অনুর্ধ ১৯ দল, নারী দল ভালো খেলেছে। কিন্তু মূল দলটি হালে পানি পাচ্ছে না। ৯০০ কোটি টাকা ব্যাঙ্ক ব্যালান্স নিয়ে ঘুমিয়ে আছে বিসিবি। কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাগানোর দায়িত্ব এখন প্রধানমন্ত্রীর উপর বর্তাচ্ছে। অচিরেই বিসিবির খোল নলচে বদলে না ফেললে ক্রিকেটের পতন বাঁচানো যাবে না।