বিদায়বেলায় কাঁদলেন ফেদেরার, কাঁদালেন দীর্ঘদিনের প্রতিপক্ষ-বন্ধুদের

অবশেষে বিদায় নিলেন আধুনিক টেনিসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় সুইস সেনসেশন রজার ফেদেরার। বিদায় বেলা যেমন নিজে কেঁদেছেন, একইভাবে কাঁদিয়েছেন বন্ধু-সতীর্থ-প্রতিপক্ষদেরও। শনিবার লেভার কাপে ডাবলসে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটিতে তার সঙ্গী ছিলেন দীর্ঘদিনের প্রতিপক্ষ ও বন্ধু রাফায়েল নাদাল। তাই নাদালের কাছে অনুভূতিটা একটু ভিন্ন। পরাজয়ের মধ্য দিয়েই অবশ্য বিদায় ঘটেছে বিশ্ব টেনিসের এই আপদমস্তক পেশাদার এক রাজার।

২০ বারের গ্র্যান্ড স্ল্যাম বিজয়ী ফেদেরারের ক্যারিয়ার যদিও আরো কিছুটা দীর্ঘায়িত হতে পারতো। কিন্তু হাঁটুর ইনজুরির কারনে গত বছরের জুলাইয়ে উইম্বলডনের কোয়ার্টার ফাইনালের পর থেকে আর কোর্টে নামতে পারেননি। ৪১ বছর বয়সে তাই টেনিসকে বিদায় জানাতেই হলো। লন্ডনের হাজারো সমর্থকও প্রিয় তারকার বিদায়ে অনেকটাই আবেগী হয়ে পড়েছিলেন।

টিম ইউরোপের হয়ে খেলতে নেমে গতকাল ফেদেরার ও নাদাল জুটি টিম ওয়ার্ল্ডের ফ্রান্সেস টিয়াফো ও জ্যাক সকের কাছে লন্ডনের ও২ এরিনাতে হেরে গেছেন ৪-৬, ৭-৬ (৭/২), ১১-৯ গেমে। এই ফলাফলে টিম ইউরোপ ও টিম ওয়ার্ল্ড ২-২ ব্যবধানে সমতায় ছিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান এ্যালেক্স ডি মিনায়েরের কাছে এন্ডি মারে দিনের শেষে সিঙ্গেলসে হেরে যাওয়ায় টিম ইউরোপের পরাজয় নিশ্চিত হয়।

বিদায়ক্ষনে আবেগী ফেদেরার বলেছেন, ‘আমরা যেকোন ভাবেই এগিয়ে গিয়েছিলাম। আজকের দিনটা ছিল দুর্দান্ত। আমি সবাইকে বলতে চাই আমার মন খারাপ নয়, আমি খুশী। এখানে খেলতে আসাটাই দারুন এক অনুভূতি। যদিও সবকিছুই ছিল শেষবারের মত। আমি তেমন একটা চাপ অনুভব করছি না। মনে হচ্ছে হয়তোবা আগামীকাল আরো কিছু ঘটতে যাচ্ছে। কিন্তু ম্যাচটি ছিল অসাধারন। রাফাসহ আরো কিছু লিজেন্ডের সাথে এখানে খেলার সুযোগ পাওয়ায় সবাইকে ধন্যবাদ।’

প্রায় দুই দশক ধরে স্পেনের নাদালের বিপক্ষে কোর্টে নামার প্রতিটি মুহূর্ত ফেদেরার উপভোগ করেছেন। ক্যারিয়ারের স্বর্নালী সময়ে দু‘জন মিলে একসাথে জিতেছেন ৪২টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা। এই জুটি প্রথমবার ২০০৪ সালে একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিলেন। এ পর্যন্ত ৯টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালসহ ৪০ বার মোকাবেলা করেছেন। এর মধ্যে নাদাল জিতেছেন ২৪টি, ফেদেরার ১৬টি। শুক্রবার অবশ্য একে অপরের পাশে থেকে প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করেছেন। কোর্টে আসার পরেই পুরো স্টেডিয়ামের ভক্ত-সমর্থকরা শেষবারের মত দাঁড়িয়ে ফেদেরারকে স্বাগত জানিয়েছেন।

শক্তিশালী টিম ইউরোপে আরো ছিলেন নোভাক জকোভিচ ও এন্ডি মারে। আধুনিক টেনিসে ‘বিগ ফোর’ হিসেবে খ্যাত চার তারকা একসাথে একই দলে খেলেছেন। ফেদেরারের বিদায়ক্ষনে এর থেকে স্মরণীয় স্মৃতি আর হতে পারেনা। সিঙ্গেলস ম্যাচে খেলতে অপারগতা জানানোর কারনে ফেদেরারের স্থানে খেলেছেন ইতালির মাত্তেও বেরাত্তিনি। লেভার কাপে এর আগের চারটি আসরই জিতেছে টিম ইউরোপ।

২০০৩ সালে প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম হিসেবে উইম্বলডনের শিরোপা জিতেছিলেন ফেদেরার। ১৯ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে আটটি উইম্বলডন শিরোপাসহ সর্বমোট জিতেছেন ১০৩টি শিরোপা। একাই জয় করেছেন ১৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশী প্রাইজ মানি। নাদাল (২২) ও জকোভিচ (২১) উভয়ই ফেদেরারের গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছেন।

বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

15 + fourteen =