বিদ্যুতে কমিয়ে শিল্পে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো হবে: উপদেষ্টা

বিদ্যুতে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে শিল্পে বাড়ানো হবে। এ জন্য বিদ্যুতে ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কমিয়ে দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ফাওজুল কবির খান।

বুধবার (৭ মে) সচিবালয়ে শিল্প মালিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন। গ্যাস সংকটের কারণে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় শিল্প মালিকরা সাক্ষাৎ করতে আসেন। বৈঠকে অংশ নেন হামীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একে আজাদ, মেঘনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল।

উপদেষ্টা বলেন, মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত আরও বাড়তি ৪ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হবে। এর ফলে আরও ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ বাড়বে। এতে করে শিল্পে দৈনিক গ্যাস সরবরাহ ২৫০ মিলিয়ন বাড়বে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্যাস কমিয়ে দেওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি হলে সেটি পূরণ করা হবে তেল ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।

দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোর মজুদ কমে যাওয়ায় উৎপাদন কমতির দিকে। এই সংকট কাটতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, দেশীয় ফিল্ডগুলো থেকে উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমরা চলতি বছরের মধ্যে ৫০ কূপ খনন কাজ শেষ করব। এতে আরও ৫০০ মিলিয়নের মতো গ্যাস উৎপাদন বাড়বে। পাশাপাশি ২০২৬ সালের মধ্যে আরও ১০০ কূপ খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলো কিছু করবে বাপেক্স, আর কিছু উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে করা হবে।

তিনি বলেন, শিল্প মালিকরা বলেছেন, গ্যাস চুরির কারণে তাদের সমস্যা হচ্ছে। আমরা সেখানেও জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছি, এটি আরও বাড়ানো হবে। ফিল্ড ভিজিট করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চলমান গ্যাস হঠাৎ করে হয়নি, অনেকদিনের পুঁঞ্জিভূত সমস্যা। আমরা স্বল্পকালীন সরকার যতদূর সম্ভব সব রকমের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা শিল্পমালিকদের বিষয়ে খুবই আন্তরিক, আজকে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে হামীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একে আজাদ বলেন, আমরা তাদের আশ্বাসে আশাবাদী। তারা যেভাবে পরিকল্পনা নেওয়ার কথা বলেছেন, সেভাবে নিশ্চিত করা গেলে আশাকরি সংকট থাকবে না।

পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, এক সময় প্রায় ২৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেলেও ৬ মে দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে পাওয়া গেছে মাত্র ১৯৫১ মিলিয়ন ঘনফুট। ওই দিন এলএনজি আমদানি করা হয়েছে ৮৫৩ মিলিয়ন ঘনফুট। বিদ্যুতে ২৪২০ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ১০৪৮ মিলিয়ন।

১৫০ মিলিয়ন কমিয়ে দেওয়া হলে বিদ্যুতে সরবরাহ নেমে আসবে ৯০০ মিলিয়নে। গ্যাসে যেখানে ৪ টাকার মতো খরচ পড়ে, সেখানে তেলে ১৮ টাকার ওপরে খরচ পড়ে। গ্যাসের পরিবর্তে তেল দিয়ে উৎপাদন করতে গেলে বিদ্যুতের উৎপাদন বেড়ে যাবে কয়েকগুণ।

পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, গত ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) স্পর্ট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি করা হয়েছে ১৭০০ মিলিয়ন ঘনমিটার (১৯ কার্গো)। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) তথ্য বলছে, একই সময়ে সিস্টেম লস হয়েছে ১৯৮৫ মিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস। অর্থাৎ স্পর্ট মার্কেট থেকে আমদানি করা গ্যাসের চেয়েও বেশি অপচয় হয়েছে।

এদিক থেকে ব্যবসায়ীদের দাবি খুবই যৌক্তিক। চুরি কমানো গেলে সরবরাহ স্বয়ংক্রিভাবে অনেক বেড়ে যাবে। তবে ইদানিং চুরি ঠেকাতে ব্যাপক তৎপরতা দৃশ্যমান। পেট্রোবাংলা ও বিতরণ কোম্পানিগুলো সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করছে। তিতাস অধিভুক্ত এলাকা থেকে প্রত্যেক দিনেই অভিযানের খবর পাওয়া যাচ্ছে। তারা অবৈধ সংযোগের পাশাপাশি পাইপলাইনও উচ্ছেদ করার তথ্য জানাচ্ছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

five × 3 =