বিনিয়োগ চ্যালেঞ্জ থাকলেও ছাদে সোলার বিদ্যুৎ সম্ভাবনা বাংলাদেশে বিপুল

আজ বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) এক ওয়েবিনারে বক্তারা বাংলাদেশে ছাদে সৌরবিদ্যুৎ সম্প্রসারণের গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনা আছে বলে মত প্রকাশ করেছেন। এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার ম্যাগাজিন এবং গ্লোবাল থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইইএফএ) যৌথভাবে ‘স্কেলিং আপ রুফটপ সোলার ডিপ্লয়মেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওয়েবিনারটির আয়োজন করে। ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন এনার্জি এন্ড পাওয়ার সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেন।

মূল উপস্থাপনায়, আইইইএফএ-এর বাংলাদেশের প্রধান এনার্জি বিশ্লেষক, শফিকুল আলম ছাদে সৌর বিদ্যুতের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণী দিয়ে বলেন, বর্তমানে নেট মিটারড এবং নন-নেটমিটারড উভয় ব্যবস্থায় ছাদে ১৬৬.৮৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা আছে। গত দেড় বছরে কয়েক দফা বিদ্যুতের মূল্য দফায় দফায় বৃদ্ধি করার ফলে এখন ছাদে সোলার বিদ্যুৎ স্থাপন অর্থনৈতিকভাবে আগের চেয়ে আরও বেশি সাশ্রয়ী ও লাভজনক।

শফিকুল আলম বলেন, যদিও ২০২৩ সালটি ছাদে সৌর বিদ্যুৎ ক্ষমতা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় ছিল তবে খাতটি বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। অর্থের সংস্থান করা, রুফটপ সোলার স্থাপনে বিল্ডিং মালিকদের আস্থা অর্জন, আইন এবং সুদহার পরিবর্তনের তথ্য জানা না থাকা, সোলার সামগ্রীর ওপর উচ্চ আমদানি শুল্ক, ইউটিলিটিগুলির জন্য রাজস্ব আয়ে এর প্রভাব এবং প্রধান স্টেকহোল্ডারদের সক্ষমতার ব্যবধান বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন প্রকল্প ছাদে সোলারের জন্য বিনিয়োগের সবচেয়ে সস্তা উৎস। কিন্তু ছাদ সোলারসহ আরও ৭০টি পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে ৪০০ কোটি টাকার এই তহবিল থেকে অর্থায়ন করা হয়। ফলে ছাদে সৌরশক্তি বাড়াতে অর্থায়ন কমে যায়। একইভাবে, ইডকল-এর অর্থায়ন স্কিমটিও এ সেক্টরের দ্রুত সম্প্রসারণের জন্য  যথেষ্ট নয়। তাই ছাদে সোলার বিদ্যুতে বিনিয়োগে বাংলাদেশের আরও অর্থায়ন প্রয়োজন হবে।

শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশকে এমন একটি বাজার মডেল ডিজাইন করতে হবে যা বাস্তবায়নের গতি বাড়িয়ে ছাদে সোলার বিদ্যুতে বিনিয়োগ উৎসাহিত এবং ঝুঁকিমুক্ত করে। আমাদের নতুন কিছু উদ্ভাবনের প্রয়োজন নেই তবে বিদ্যমান ব্যবস্থার কার্যকারিতা বাড়াতে হবে এবং পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন করতে হবে। শ্রেডাকে স্টেকহোল্ডারদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং বিল্ডিং মালিকদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগ নিতে হবে।

বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসআরইএ) সভাপতি ও এনার্জিপ্যাকের পরিচালক ইঞ্জি. নুরুল আকতার বলেন,  উচ্চ আমদানি শুল্ক এবং কম সচেতনতা ছাদে সোলার বিদ্যুৎ বাস্তবায়ন গতি ধীর করে দিচ্ছে।

ইডকলের সিইও বলেন, ইডকলের অর্থায়ন ক্ষেত্রগুলির মধ্যে প্রধান হলো রুফটপ সোলার।  তিনি মূল বক্তার সাথে একমত হন যে এই খাতে চাহিদার বিপরীতে ইডকলের অর্থায়ন যথেষ্ট নয়। তিনি মনে করেন, ছাদে সোলারের উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

বুয়েটের সাবেক ডিন প্রফেসর ইজাজ বলেন, রুফটপ সোলারের জন্য সম্ভবত ফিড-ইন-ট্যারিফ বেশি কার্যকর হতে পারে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে কার্বন বর্ডার অ্যাডজাস্টমেন্ট মেকানিজম এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার কারণে আমাদের রপ্তানিমুখী শিল্পগুলোতে ছাদে সোলার বিদ্যুৎ স্থাপন করতে হবে।

দর্শকদের এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশের শিল্প ও বাণিজ্যিক ভবনে বর্তমানে সোলার স্থাপন খরচ এবং সোলার বিদ্যুতের মূল্য ভিয়েতনামের ফিড-ইন-ট্যারিফের চেয়ে সাশ্রয়ী।

ওয়েবিনারের বিশেষ অতিথি এবং আইইইএফএ দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক বিভূতি গার্গ উল্লেখ করেন যে বাংলাদেশ ভার্চুয়াল নেট মিটারিং এবং পিয়ার-টু-পিয়ার ট্রেডিংয়ের মতো উদ্ভাবনী ব্যবসায়িক মডেল নিয়ে ভাবতে পারে। ব্লেন্ডেড ফাইন্যান্স এখানে একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। এটি লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ যে সৌর প্রযুক্তির ব্যয় ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে এবং ছাদে সৌরশক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ওয়েবিনারের প্রধান অতিথি পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ সোলার হোম সিস্টেম খুব ভালো করেছে। এখন উদ্দীপনা চলছে ছাদে নেট মিটারিং এর আওতায় সোলার বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে। ছাদে সোলার বিদ্যুৎ স্থাপনে একটি স্থাপনায় মোট বরাদ্ধের ৭০% সীমা বাতিলের কথা সরকার বিবেচনা করছে। আমরা কর্পোরেট পাওয়ার ক্রয় চুক্তি নিয়েও কাজ করছি। যেহেতু আমরা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য গ্রিডের গুণমান উন্নত করার জন্য কাজ করছি ফলে ছাদে সোলার ইউনিট থেকে গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের সমস্যাটিও সমাধান করা হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

6 + 1 =