সালেক সুফী: চাঁদের কলঙ্ক যদি মেনে নিতে পারি তাহলে দর্শক টোয়ি টম্বুর মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বিপিএল ২০২৫ আসরের ফাইনাল খেলা শেষে আসরটিকে সফল বলতেই পারি। কাল ফরচুন বরিশাল এবং চট্টগ্রাম কিংসের মধ্যে অনুষ্ঠিত ফাইনাল খেলায় বাটে বলে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হয়েছে। ম্যাচের ভাগ্য পেন্ডুলামের দোলক দোলায় দুলেছে। টস হেরে ব্যাটিং করতে এসে ওপেনারদের ( পারভেজ ইমন এবং খাজা নাফি ) উড়ন্ত সূচনার পরেও ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ১৯৪/৩ নিঃসন্দেহে ২০-৩০ রান কম ছিল. জবাবে ফরচুন বরিশাল তামিম ইকবালের উড়ন্ত সূচনা এবং মায়ার্সের মারকুটে ব্যাটিং সত্ত্বেও একসময় কোনঠাসা হয়ে পড়েছিল। চট্টগ্রামের দুর্বল ফিল্ডিং এবং কিছু কৌশলগত ভুলের কারণে ফরচুন বরিশাল শেষ দিকে রিশাদ হোসেন বীরত্বে ৩ বল হাতে রেখে ১৯৫/৭ করে ৩ উইকেটে জয়ী হয়ে শিরোপা ধরে রাখে। দেখতে হবে ঘোষণা অনুযায়ী লঞ্চে চড়ে শিরোপা বরিশাল যায় কিনা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নানা চ্যালেঞ্জের মাঝেও নানা প্রণোদনা দিয়ে বিপিএল ২০২৫ আয়োজনকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। কয়েকটি ফ্যাঞ্চাইজের খেলোয়াড়দের পাওনা পরিশোধ সংক্রান্ত জটিলতা, কিছু খেলায় ফিক্সিং অভিযোগ ছাড়া এবারের বিপিএল বিপুল দর্শক সমাগম, উন্নত উইকেটে চার ছক্কার ছড়াছড়ি, স্টেডিয়ামে সবুজ চত্বর, জুলাই আগস্ট আন্দোলনের স্মারক এগুলো নিয়ে নতুন মাইলস্টোন হয়ে থাকবে। ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে এবং আগামীতে বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়ায় বিপিএল ২০২৬ আয়োজন করে ব্র্যান্ডিং করা হলে দেশের একমাত্র আন্তর্জাতিক মানের টুর্নামেন্ট ক্রিকেটের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
কাল কিন্তু উইকেট ছিল ব্যাটিং বান্ধব। পিচ পরে বল সুষম হাইট নিচ্ছিলো। ব্যাটসম্যানদের স্টোকস খেলতে বেগ পেতে হয়নি। বাংলাদেশ তরুণ জাতীয় দলের পারভেজ হোসেন ইমন শুরু থেকে শেষ অবদি ব্যাটিং করে ৭৮ রানে অপরাজিত থাকে। ওর সঙ্গে জুটি বেঁধে পাকিস্তানী তরুণ খাজা নাফি প্রথম উইকেটে ১২১ রান জুড়ে দিয়ে বড় স্কোরের মঞ্চ তৈরী করেছিল। কিন্তু এই ধরণের আসরে স্নায়ুর চাপ নেয়ার অভিজ্ঞতা কম থাকায় ইমন শেষ দিকে দায়িত্ব নিয়ে স্কোরটি কাঙ্খিত লক্ষে পৌঁছাতে পারেনি। একসময় আহত হয়ে পড়া গ্রাহাম ক্লার্ককে আড়াল করে শেষ দিকে ইমন বেশি স্ট্রাইক নিলে স্কোর ২২০ -২৩০ হতে পারতো। বলা যায় উইকেট এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী চট্টগ্রামের রাজ্ ভাণ্ডারে ২০ রান কম ছিল।
জবাবে খেলতে নেমে পরিকল্পনা মাফিক দুরন্ত সূচনা করে বরিশাল। অনেক অভিজ্ঞতায় পোড় খাওয়া তামিম ইকবাল মুন্সিয়ানা দেখিয়ে ২৯ বলে ৫৪ রান করে উড়ন্ত সূচনা এনে দেয়। তামিম ছাড়া কাইল মায়ার্স (৪৬), তাওহীদ হৃদয় (৩২ ) ছাড়া মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ এবং নবীর মত অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরা কিন্তু কাল বার্থ হয়েছে। শরিফুল (৪/৩৪) নেতৃত্বে চট্টগ্রামের বোলাররা কিন্তু দারুন লড়াই করে খেলা জমিয়ে তুলেছিল। কিছু ক্যাচ ফস্কায়, রান আউটের সুযোগ হারায় দল। ১৮ এবং ১৯ ওভারে রিশাদ হোসেন ব্যাট হাতে জলে উঠলে ৩ উইকেটে জয় ছিনিয়ে নেয় বরিশাল। টুর্নামেন্টে যোগ্য দল হিসাবেই শিরোপা ধরে রেখেছে ফরচুন বরিশাল।
শেষ কথা হলো এবারের টুর্নামেন্ট থেকে ভুল ত্রুটি বিশেষত কলঙ্ক গুলো সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ বলে বিশ্বাস করি। নাহলে বিপিএল নিয়ে বিশ্ব ক্রিকেট মহলে অনাস্থার সৃষ্টি হবে, উন্নত মানের বিদেশী ক্রিকেটার পাওয়া যাবে না। পরিশেষে বলবো এবারের টুর্নামেন্টে সাকিব মাশরাফিকে খেলতে না দেয়া ক্রিকেটীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ভুল হয়েছে।