বিল পরিশোধ, দীর্ঘদিন পর দায় মুক্ত পেট্রোবাংলা

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এ পর্যন্ত বকেয়াসহ মোট ৩ হাজার ৭৩৯ দশমিক ৯৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪৫ হাজার ২৫৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা) পরিশোধ করা হয়েছে। তাদের দায়িত্ব গ্রহণের সময় পেট্রোবাংলার মোট দেনা ছিল ৭৩৭ দশমিক ৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮ হাজার ৭০২ কোটি ৩ লাখ টাকা)।

লক্ষ্যমাত্রা ৩০ জুন থাকলেও ২ মাস পূর্বেই সব মেয়াদোত্তীর্ণ দেনা পরিশোধ করা হয়েছে । বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়, পেট্রোবাংলা এবং সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার যুগোপযোগী ও গতিশীল টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে পূর্বের দেনা পরিশোধ করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা।

এরমধ্যে আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি (আইওসি), দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি চুক্তি ও স্পট মার্কেট হতে আমদানিকৃত এলএনজি সরবরাহকারী, ২ (দুটি) ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল এবং ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফিন্যান্স করপোরেশনের ঋণের সুদসহ পুঞ্জিভূত দেনা ছিল।

পেট্রোবাংলা’র গ্যাস বিতরণ ও উৎপাদন কোম্পানির কাছে পেট্রোবাংলার পাওনা অর্থ আদায়ের জন্য মাসভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং গ্যাস ব্যবহারকারী গ্রাহকগণ নিয়মিত গ্যাস বিল পরিশোধ করায় বিতরণ কোম্পানির পক্ষে এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়েছে।

দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এবং স্পট মার্কেট হতে এলএনজি আমদানির জন্য সরবরাহকারীর অনুকূলে পেট্রোবাংলা কর্তৃক এসবিএলনি ইস্যু এবং এলএনজি গ্রহণের পর ইনভয়েস অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে আমদানি বিল পরিশোধের জন্য সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকের সংখ্যা বৃদ্ধি করায় বৈদেশিক মুদ্রায় আমদানি বিল পরিশোধ করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া, জ্বালানি খাতের গুরুত্ব বিবেচনায় পুঞ্জিভূত আমদানি বিল পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

উল্লেখ্য, মার্চ এবং এপ্রিল ২০২৫ মাসে ৪ শ্রেণীর পাওনাদারকে সর্বমোট ১ হাজার ৪৪৫ দশমিক ৪১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করেছে। ফলে ৩০ এপ্রিল পেট্রোবাংলার নিকট আইওসি শেভরণ ও তাল্লো, দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায় এলএনজি সরবরাহকারী কাতার এনার্জি ও ওকিউটি, স্পট মার্কেট হতে এলএনজি সরবরাহকারী, এফএসআরইউ এবং আইটিএফসির মেয়াদোত্তীর্ণ কোন পাওনা নেই।

এছাড়া, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং অর্থ বিভাগের অনুমোদনের আলোকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) পেট্রোবাংলাকে ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ প্রদান করায় পেট্রোবাংলার পক্ষে সমুদয় বৈদেশিক দেনা পরিশোধ করা আরও সহজতর হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ দেনা পরিশোধ করার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি, জ্বালানি খাত এবং পেট্রোবাংলা নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে সুবিধা অর্জন করতে সক্ষম হবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

বকেয়া পরিশোধের ফলে দেশের ক্রেডিট রেটিংয়ের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। স্পট মার্কেটের মাধ্যমে এলএনজি সরবরাহকারীদের পেট্রোবাংলার প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পাবে। ফলে আমদানির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে এবং কম প্রিমিয়াম চার্জ করার মাধ্যমে এলএনজি আমদানি ব্যয় হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি সরবরাহকারী কর্তৃক সময়মত এলএনজি কার্গোর শীপমেন্ট তথা লোডিং সম্পন্ন করার মাধ্যমে ঝুঁকিমুক্ত সরবরাহ চেইন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। বিলম্ব সুদ পরিশোধ পরিহার করতে পেট্রোবাংলা সক্ষম হবে। ইতোমধ্যে পরিশোধিত জরিমানার পরিমাণ প্রায় ৫৪ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

গ্যাসের চাহিদা ও যোগানের মধ্যে গ্যাপ কমানোর লক্ষ্যে গ্যাস অনুসন্ধান, মূল্যায়ন কাম উন্নয়ন এবং ওয়ার্কওভারের মাধ্যমে গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থায় বিদ্যমান সিস্টেম/কারিগরি লস হ্রাসের লক্ষ্যে প্রণীত রোড ম্যাপ বাস্তবায়ন, সাশ্রয়ী মূল্যে বেশি পরিমাণে এলএনজি আমদানি, গ্যাসের প্রাইস গ্যাপ কমানোর লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায় বেশি পরিমাণে এলএনজি আমদানির পদক্ষেপ গ্রহণ, এলএনজি আমদানি এবং গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাস বিতরণে বর্তমানে প্রযোজ্য দ্বৈত ভ্যাট পরিহারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা।

জ্বালানি খাতের গুরুত্ব বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনে ভবিষ্যতে বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহের ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছে পেট্রোবাংলা।

পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, অর্থ বিভাগ, শিল্প মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, পিডিবি, বিসিআইসি, বৈদেশিক মুদ্রায় আমদানি বিল পরিশোধকারী আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ও বেসরকারি ব্যাংকসমূহকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।

সিংহভাগ গ্যাস ব্যবহারকারী গ্রাহকগণ নিয়মিত গ্যাস বিল পরিশোধ করায় কর্তৃপক্ষ তাদেরকেও ধন্যবাদ জানিয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

one × five =