বিশাল জয়ে নিউ জিল্যান্ডের বিশ্বকাপ মিশন অনিশ্চিত করে দিলো দক্ষিণ আফ্রিকা

সালেক সুফী

কাল পুনেতে মহারাষ্ট্র ক্রিকেট এসোসিয়েশন মাঠে ছিল চলতি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দুই তুখোড় দল দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নিউ জিল্যান্ডের মুখোমুখি লড়াই। ক্রিকেট বোদ্ধারা অনেকেই অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড খেলার মত হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখার আশায় ছিল। কি যে হলো, দক্ষিণ আফ্রিকার দুর্দান্ত প্রতাপের কাছে দাঁড়াতেই পারলো না কিউই পাখির দেশ নিউ জিল্যান্ড।

টস জয় করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে  বাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানানোই কাল হলো নিউ জিল্যান্ডের।  ধীরে সুস্থে শুরু করা দক্ষিণ আফ্রিকা নিজেদের ছন্দে ব্যাটিং করে ৩৫৭/৪ রানের বড় স্কোর করলো। অনেকেই ভেবেছিলেন ধর্মশালায় নিউ জিল্যান্ড দলের মত আরো একটি জমজমাট রান তাড়া দেখার। হলো না দক্ষিণ আফ্রিকার আগ্রাসী বোলিং মোকাবিলায় ৩৩.৩ ওভারেই ১৬৭ রানে যবনিকা পড়লো ব্ল্যাক ক্যাপসদের ইনিংস।

১৯০ রানের বিশাল জয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সেমি ফাইনাল নিশ্চিত হলো। পয়েন্টস তালিকায় ওদের অবস্থান এখন সবার উপরে। অস্ট্রেলিযার নিচে চারে নেমে যাওয়া নিউ জিল্যান্ডের সেমি ফাইনাল খেলা অনেকটাই অনিশ্চিত এখন।

কাল খেলা ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ওপেনার কুইন্টন ডি কক এবারের বিশ্বকাপে চতুর্থ সেঞ্চুরি (১১৩) তুলে নেয়ার মাধ্যমে একই বিশ্বকাপে চার সেঞ্চুরি করা শ্রীলংকান কিম্বদন্তী কুমারা সাংরাকারার  (২০১৫) রেকর্ড স্পর্শ করলো ডি কক।  বাকি খেলাগুলোতে আর একটি সেঞ্চুরি হলেই ছুঁয়ে ফেলা হবে ২০১৯ বিশ্বকাপে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মার (২০১৯) ৫ সেঞ্চুরির মাইলফলক।

এবারের টুর্নামেন্টে কিন্তু তুখোড় ব্যাটিং করছে দক্ষিণ আফ্রিকা। টুর্নামেন্টের সেরা তিনটি বড় স্কোর সহ চারটি ৩৫০ বা তারও বেশি স্কোর ওদের। কাল কিন্তু টস জয় করেছিল নিউ জিল্যান্ড।  হয়তো অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে বিশাল স্কোর তাড়া করে প্রায় ম্যাচ জয় করা থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিল অধিনায়ক লাথাম।

কিন্তু প্রতিদিন তো আর রোববার নয়। শুরুতে ধীর স্থির থাকলেও ম্যাচের মাঝপথে অশান্ত হয়ে ওঠে প্রোটিয়ানরা।  ডি কক (১১৩) এবং রাসি ভান্ডার ডুসেনের (১৩৩) দ্রুপদী ২০০ রানের দ্বিতীয় উইকেট পার্টনারশিপ রান বন্যায় প্লাবিত করে কিউই পাখিদের।  শেষ দিকে ৩০ বলে ৫৩ রানের ধুমধাড়াক্কা ইনিংস খেলে ডেভিড মিলার দলের সংগ্রহ পৌঁছে দেয় ৩৫৭/৪।

জবাবে রান তাড়ায় এদিন কিন্তু হালে পানি পায়নি ব্ল্যাক ক্যাপসরা।  মার্কো জানসেন  (৩/৩১) এবং কেশব মহারাজের (৪/৪৬) পেস-স্পিন আক্রমণে তাসের ঘর/বালির বাঁধের মত ঝরে পড়ে ব্ল্যাক ক্যাপসরা।  ৩৫.৩ ওভারে ১৬৭ রানে গিয়ে যায় ইনিংস।  পরাজয় বিশাল ১৯০ রানে।

গ্লেন ফিলিপস (৬০), উইল ইয়ং (৩৩) ,ড্যারিল মিচেল (২৪) যা কিছু প্রতিরোধ করে। ৭ ম্যাচে ৬ জয় নিয়ে পয়েন্টস তালিকার শীর্ষে এখন দক্ষিণ আফ্রিকা। ৭ ম্যাচে ৩ পরাজয়ে নিউ জিল্যান্ড এখন তালিকায় ৪ নম্বরে।  সেমি ফাইনাল খেলতে হলে বাকি দুটি ম্যাচ ওদের জেতা ছাড়া বিকল্প নেই। ঘাড়ের উপর নিশ্বাস ফেলছে পাকিস্তান, আফগানিস্তান।

দক্ষিণ আফ্রিকা এবারে হয়তো ‘চোকার’ উপাধীটি মেটাতে চলেছে। অনেকেই এখন ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার ফাইনাল দেখছেন। ভুলে গেলে চলবে না খেলাটার নাম ক্রিকেট। সকালের মহারাজা যেখানে বিকেলে পথের ফকিরে পরিণত হওয়ার ভুরি ভুরি নজির আছে।

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

sixteen − 2 =