বিশ্বকাপের আগে অশনি সংকেত!

নিবিড় চৌধুরী

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের চতুর্থ দিন শেষে তিতকূটে হলেও সংবাদ সম্মেলনে কিছু সত্য কথা বলেছেন মুমিনুল হক। কী সেই কথা? মুমিনুলের মুখেই শুনুন, ‘আমার কাছে মনে হয় যে, শুনতেও খারাপ লাগতে পারে আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটের খেলা এবং আন্তর্জাতিকের খেলা অনেক ভিন্ন। আকাশ পাতাল তফাত। আপনারাও জানেন, আমিও জানি, সবাই জানে। আমি নিজেও তো জাতীয় লিগ খেলি। নিজে কখনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করি না। এখানে আন্তর্জাতিকে যেমন চাপ মোকাবেলা করতে হয়। সততার সঙ্গে কথাগুলো বলছি।’

অসত্য-বানানো বলে মুমিনুলের কথা উড়িয়ে দেওয়ার কোনো অজুহাত নেই। বছরের শুরুতে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) গেল, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ (ডিপিএল) চলছে, বিসিবিতিও (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড) এসেছেন নতুন নির্বাচকেরা; তারপরও বাংলাদেশে ক্রিকেটারদের পারফরম্যন্সের গ্রাফ নিচের দিকে। কেন? এখানে দুই ম্যাচ ভালো খেলে তারকা হওয়া যায় বা দলে জায়গা পাকাপোক্ত হয়ে যায়, এই কারণেই কি আন্তর্জাতিক অঙ্গণে গিয়ে খেলোয়াড়েরা গা বাঁচিয়ে খেলে আসেন? এমনটা যদি হয়, তবে তারা বাংলাদেশের কোটি দর্শক-সমর্থক-ভক্তদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন।

সামনের জুনে ২০ দল নিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। প্রথমবারের মতো মার্কিন মুলুকে (যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ) বসবে আসর। তার আগে দলগুলো নিজেদের ঝালিয়ে নিচ্ছে। ভারতীয় খেলোয়াড়েরা আইপিএল খেলছে, পাকিস্তানের খেলোয়াড়েরা কাকুলে আর্মি ট্র্রেনিং নিচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ যে কটা সিরিজ খেলেছে সম্প্রতি, সেসব একটি বার্তাই দেয়; এবারও না বিশ্বমঞ্চে ভরাডুবি হয়! এপ্রিলে ঘরের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতলেও টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট সিরিজে যেভাবে হারল বাংলাদেশ সেটি বেশ ভাবনার উদ্রেক করছে সবার মনে। নাজমুল হোসেন শান্ত-লিটন দাসদের ব্যাটে রান নেই। ফিল্ডিংয়ে কেমন গা ছাড়া ভাব, হাত ফসকে যায় ক্যাচ। বোলিংয়ে নেই ধারাবাহিকতা। তবে কী এমন ‘অশনি সংকেত’ মাথায় নিয়েই বিশ্বকাপ খেলতে যাবে বাংলাদেশ?

আশার কথা, ফর্মে ফেরার সুযোগ বাংলাদেশ বিশ্বকাপের আগেই পাচ্ছে। কীভাবে? ঘরের মাটিতে চির প্রতিদ্বন্দ্বী জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে। জিম্বাবুয়ে এবারের বিশ্বকাপের টিকিট পায়নি। তাদের ক্রিকেটও দিনকে দিন পিছিয়ে পড়ছে। বাংলাদেশেরও না এমন হাল হয় অদূর ভবিষ্যতে। বিশ্বকাপে আসল লড়াইয়ে নামার আগে আরেকটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলারও সুযোগ থাকছে বাংলাদেশের, প্রতিপক্ষ স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র্র। তবে একটা ম্যাচ দিয়ে হয়তো রানে ফিরবেন লিটনরা। কিন্তু মূল মঞ্চে? যেখানে ‘ডি’ গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কার মতো দল! বাকি দুই প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস ও নেপাল। প্রতি গ্রুপ থেকে দুুই দল সুপার এইটে। বাংলাদেশ কি পারবে দ্বিতীয় পর্বে যেতে?

আশা করা যেত, যদি ব্যাটাররা ধারাবাহিক হতেন। বোলাররা গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এনে দিতে পারতেন ব্রেকথ্রু। কিন্তু ভারতে গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যেভাবে একেকটি হার মাথা পেতে নিয়েছে, সেসব দেখে শান্তদের নিয়ে আশায় বুক বাধা কঠিন। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেবেন শান্ত। কিন্তু তিনি নিজেও রানে নেই। লঙ্কানদের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে তার রিভিউ নেওয়া, ফিল্ডিং সাজানো বেশ সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। আর অনেকদিন ধরে রানে নেই লিটন। এমনকি লঙ্কানদের বিপক্ষে চট্টগ্রামে ওয়ানডে সিরিজের ম্যাচ থেকেও বাদ পড়েছিলেন তিনি। টেস্ট সিরিজ খেললেও রান পাননি।

তারুণ্যনির্ভর দল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাবে বাংলাদেশ। সঙ্গে হয়তো থাকবেন অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান। পাশাপাশি লিটন-সৌম্য সরকার যদি ফর্মে ফেরেন তবে দারুণ কিছু আশা করা যায়। হার্ডহিটার হিসেবে সম্প্রতি শ্রীলঙ্কা সিরিজ দিয়ে নতুনভাবে চেনানো রিশাদ হোসেন বা জাকের আলী অনিকের অন্তর্ভুক্তি শক্তি যোগাবে। মিডল অর্ডারে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো গেলে সফলতা আসবে। তবে এই অলরাউন্ডারের জায়গা নিশ্চিত হবে কি না সেটি অনিশ্চিত। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে শেষ মুহূর্তে জায়গা পেয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। তবে ভারতে সবচেয়ে সফল ব্যাটার তিনিই। বোলিংয়ে একইভাবে অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে মোস্তাফিজুর রহমানকে। এবারের আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে নিজের প্রথম দুই ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন ফিজ। তার কাছে সবাই এমন সেরাটা চাইবেন। হাসান মাহমুদ বাংলাদেশের পেসের নতুন সেনসেশন। শরীফুল ইসলামের সঙ্গে জুটি বাঁধতে পারলে দারুণ কিছু দিতে পারবেন তিনি। আর অভিজ্ঞ তাসকিন আহমেদ বিশ্বকাপ পর্যন্ত ফিট থাকলেই হয়। স্পিনে সাকিবের পাশাপাশি ব্যবহার করা যেতে পারে মেহেদী হাসান মিরাজকে। দুজনই অলরাউন্ডার। বাংলাদেশের জন্য এটা বাড়তি পাওনা। সঙ্গে একজন বিশেষজ্ঞ স্পিনার রাখলেই চলে। তবে এ সবকিছু নির্ভর করে মার্কিন মুলুকের পিচের কন্ডিশন দেখে। যেখানে কোনো খেলার খুব বেশি অভিজ্ঞতা নেই। খারাপ সময় চলছে, আশা করা যায় দুঃসময় কাটিয়ে লিটন-শান্তরা ফর্মে ফিরবেন আর বাংলাদেশকে বিশ্বকাপে স্মরণীয় মুহূর্ত উপহার দেবেন।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: খেলার মাঠ ১

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

fourteen − 10 =