সালেক সুফী: তুখোড় চৌকষ ক্রিকেটার, কুইন্সল্যান্ড গৌরব অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের দুর্ঘটনাজনিত প্রয়াণে অস্ট্রেলিয়া এবং বিশ্বক্রিকেটের আরো এক উল্কা পতন হলো। অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য ২০২২ টি২০ বিশ্বকাপে দেখা হবে ভেবেছিলাম। অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘনায় আহত হয়ে মাত্র ৪৬ বছর বয়সে চলে যাওয়াকে মেনে নিতে কষ্ট হয়। কিছুদিন আগেই পর পর রডনি মার্স আর শেন ওয়ার্ন বিদায় নিয়েছে। আর এখন সাইমন্ডেসের মতো বিরল প্রতিভার অকাল প্রয়াণে ক্রিকেট বিশ্ব ঝাঁকুনি খেলো।
সূঠামদেহি সদাহাস্যময় রঙিন চরিত্রের অধিকারী সাইমন্ডস ছিল অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের স্বর্ণযুগের অন্যতম সেরা সৈনিক। দুবেইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ জয়ী দলের অন্যতম কান্ডারি সাইমন্ডসকে অনেকে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্টি রোডস, কলিন ব্ল্যান্ড সহ সর্বযুগের সেরা ফিল্ডার হিসাবে বিবেচনা করা যায়। আউটফিল্ডে বল্গা হরিণের মতো ক্ষিপ্র , চিতার মতো প্রখর ছিল। ছিল সর্বজয়ী অস্ট্রেলিয়া দল অন্তপ্রাণ। আমি নিজে ওকে কিছু অবিশ্বাস্য রিলেক্স ক্যাচ অনায়াসে লুফে নিতে দেখেছি। বিশাল এলাকা জুড়ে দুর্ভেদ্য দেয়াল তুলতে দ্রুতই দেখেছি। একই ভাবে কিছু খুনে ব্যাটিং করতে দেখেছি।
২০০৩ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সময় আমি বঙ্গোপসাগরে সাঙ্গু গ্যাস ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে ১৫ দিন ছিলাম। বিশ্বকাপে পাকিস্তান ছিল তুখোড় দল। ওয়াসিম, ওয়াকার, শোয়েব, রাজ্জাক, আফ্রিদির সমন্বয়ে গড়া বোলিং আক্রমণ ছিল যে কোনো দলের জন্য আতঙ্ক। অস্ট্রেলিয়া ব্যাটিং করে শুরুতেই প্রথম সারির ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল। সাগরবক্ষে জাহাজে বসে একঝাঁক স্কটিশ আর ইংরেজ মনেপ্রাণে চাচ্ছিলো অস্ট্রেলিয়া যেন হেরে যায়।
দলের এই সংকট মুহূর্তে সাইমন্ডসের ব্যাটে ছিল ভৈরবী তান, কাল বোশেখীর রুদ্র মাতম। ১৪৩ রানের বিধ্বংসি ইনিংস অস্ট্রেলিয়াকে ৩১০ রানের তুঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলো। পাকিস্তান দলের ব্যাটিং ছিল সমৃদ্ধ। কিন্তু মাঠে কভার পয়েন্টে সাইমন্ডস একাই ২৫-৩০ রান রুখে দিয়েছিলো। মোহাম্মদ ইউসুফকে বাজপাখির মতো উড়ন্ত ক্যাচ ধরে ফিরিয়ে দিয়েছিলো। সাইমন্ডসের মৃত্যু সংবাদ শুনার পর আমার চোখে সেদিনের ছবি বার বার ভেসে উঠছে।
ওকে অনেকেই ট্রল করেছে। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে বুলিং হয় অহরহ। সিডনি টেস্টে ভারতের হরভজনের সঙ্গে মাংকি বা মাকি উচ্চারণ বিভ্রাটে লঙ্কাকান্ড হয়েছিল। তবে ব্যক্তিগত জীবনে সাইমন্ডস ছিল শেন ওয়ার্নের মতো বাউন্ডলে আর বেপরোয়া। হয়তো ওর প্রতিভার প্রতি সুবিচার করেনি। ওর চুল, সপ্রতিভ অবয়ব দেখে আমার কবি নজরুলের কথা মনে হতো। আমি জানি ওর অকালমৃত্যু বিশ্বক্রিকেটকেই কম্পন দিয়ে গেলো। একজন ক্রিকেট বীরের প্রয়াত আত্মার প্রতি আমার টুপি খোলা অভিবাদন।