বিশ্বের অবাক করা কাণ্ড

৪ হাজার বছর ধরে জ্বলছে আগুন

‘এখানে আগুন জ্বলছে চার হাজার বছর ধরে। কখনো নেভেনি। এমনকি বৃষ্টি, তুষারপাত, ঝড়; কিছুতেই এই আগুন নেভেনি।’ কথাগুলো বলছিলেন আলিয়েভা রাহিলা। পর্যটকদের গাইড হিসেবে কাজ করেন তিনি। যেখানকার আগুনের কথা তিনি বলছিলেন, তা আজারবাইজানের এবশেরন উপদ্বীপে। এর নাম ‘ইয়েনার দাগ’। ইয়েনার দাগের অর্থ ‘পাহাড়ের জ্বলন্ত পাদদেশ’। আক্ষরিক অর্থেই সেখানে পাহাড়ের পাদদেশে আগুন জ্বলছে। আগুন জ্বলছে প্রাকৃতিক গ্যাসের কারণে। সেখান অনবরত গ্যাসের সরবরাহ রয়েছে। আজারবাইজানের ভূমির তলদেশ থেকেই সেখানে গ্যাস আসে আপনাআপনি। বিখ্যাত ইতালিয়ান পরিব্রাজক মার্কো পোলো এ নিয়ে ১৩ শতকে লিখেছিলেন। এরপর বিভিন্ন সময় বণিকেরা এই খবর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। মূলত এই জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডের কারণেই আজারবাইজানকে ‘ল্যান্ড অব ফায়ার’ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। একসময় আজারবাইজানে বিভিন্ন এলাকায় আগুন জ্বলত। প্রাকৃতিক গ্যাসের এক সম্ভার ছিল দেশটি। তবে কূপ খনন করে গ্যাস তুলে নেওয়ায় অন্যান্য জায়গার আগুনগুলো নিভে গেছে। তবে ইয়েনার দাগে আগুন এখনো জ্বলছে। ইয়েনার দাগেই পর্যটকের গাইড হিসেবে কাজ করেন রাহিলা। রাহিলার মতে, এখানে যেসব পর্যটক আসেন, তারা সবচেয়ে বেশি মজা পান যখন তুষারপাত হয়। এ ছাড়া সেখানকার রাতের দৃশ্যও মুগ্ধকর। কারণ, তুষারখণ্ড ইয়েনার দাগে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মিলিয়ে যায়। অর্থাৎ জ্বলন্ত ওই জায়গায় কোনো কিছু পড়ারই সুযোগ পায় না।

শরীরে আগুন নিয়ে ১০০ মিটার দৌড়ে বিশ্ব রেকর্ড

প্রতিনিয়ত কতজন কতভাবেই না বিশ্ব রেকর্ড গড়েন। সংবাদের শিরোনামও হচ্ছেন তারা। কিন্তু জোনাথন ভেরো দেখিয়েছেন ভয়ংকর সাহস। শরীরে আগুন নিয়ে তিনি ১০০ মিটার দৌড়েছেন মাত্র ১৭ সেকেন্ডে। এর মধ্য দিয়ে গড়েন বিশ্ব রেকর্ড। একটি নয়, এক দৌড়ে দুটি বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন তিনি। ফ্রান্সের অগ্নিনির্বাপণকর্মী জোনাথন যখন দৌড়ানো শুরু করেন, তখন তার পুরো শরীরে জ্বলছিল আগুন। ১৭ সেকেন্ডে তিনি ১০০ মিটার দৌড়ানোর পরই তার নাম ওঠে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে। তবে সেখানেই থামেননি; এরপর আরও ১৭২ মিটার দৌড়ে গড়েছেন আরও একটি বিশ্ব রেকর্ড। পেশাদার অগ্নিনির্বাপণকর্মী জোনাথন। ৩৯ বছর বয়সী এই ফরাসি চলচ্চিত্রে স্ট্যান্টম্যান হিসেবেও কাজ করেন। তার জন্ম ফ্রান্সের উবুদাঁ শহরে। সম্প্রতি ওই শহরে শরীরে আগুন নিয়ে দৌড়াতে দেখা যায় তাকে। জোনাথন কোনো অক্সিজেন ছাড়াই ২০০ মিটারের বেশি দৌড়ান। দৌড়ানোর সময় তাকে একটি মানব-মশাল মনে হচ্ছিল। আগুন থেকে সুরক্ষায় তার শরীরে ছিল বিশেষ ধরনের পোশাক। জোনাথনের আগে এই রেকর্ড ছিল অ্যান্টনি ব্রাইটন নামে একজন ব্রিটিশ নাগরিকের। ২০০৯ সাল থেকে রেকর্ডটি ছিল ব্রাইটনের দখলে। জোনাথন মাত্র ১৭ সেকেন্ড দৌড়ে রেকর্ডটি ভেঙেছেন। ওয়াশিংটন টাইমস-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১০০ মিটারের পর ভেরো আরও ১৭২ দশমিক ২৫ মিটার দৌড়ে আরও একটি রেকর্ড ভাঙেন। এই রেকর্ডও বহু দিন অ্যান্টনি ব্রাইটনের দখলে ছিল।

হাই হিল পরে দৌড়ে রেকর্ড

প্রতিকূলতা জয় করা অনেকের কাছে নেশা। শত বাধাবিপত্তি পেরিয়ে তাদের লক্ষ্যে পৌঁছানো চাই-ই চাই। এমন একজন মানুষ ক্রিশ্চিয়ান রবার্তো লোপেজ রদ্রিগেজ। তিনি হাই হিল পরে দৌড়ে রেকর্ড করেছেন। এতে ছিল নানা ঝুঁকি। তবে সেসবের তোয়াক্কা করেননি তিনি। ক্রিশ্চিয়ানের বাড়ি স্পেনে। বয়স ৩৪ বছর। হাই হিল পায়ে তিনি ১০০ মিটার দৌড়েছেন মাত্র ১২ দশমিক ৮২ সেকেন্ডে। এর মাধ্যমে হিল পরে সবচেয়ে কম সময়ে ১০০ কিলোমিটার দৌড়ানোর খেতাব পেলেন তিনি। তার নাম উঠেছে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের খাতায়। এর আগে হাই হিল পরে সবচেয়ে কম সময়ে দৌড়ের রেকর্ড ছিল জার্মানির আন্দ্রেঁ ওরতফের। ২০১৯ সালে তিনি ১০০ মিটার দৌড়েছিলেন ১৪ দশমিক শূন্য ২ সেকেন্ডে। রেকর্ড করা ওই দৌড় কোনো বাধা ছাড়াই শেষ করেছেন ক্রিশ্চিয়ান। একবারের জন্যও পড়ে যাননি বা হোঁচট খাননি। তিনি বলেন, ‘এই দৌড়ের জন্য আটঘাট বেঁধে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। আমার কাছে হাই হিল পরে দৌড়ানো খুবই চ্যালেঞ্জের মনে হয়েছে। তবে স্পেনে এ ধরনের দৌড়ের আয়োজন করা হয়। আর এমন দৌড়ে আমি সব সময়ই ভালো করেছি।’ এই রেকর্ডের পেছনে ক্রিশ্চিয়ানের অনুপ্রেরণা কী ছিল? ক্রিশ্চিয়ান বলেন, তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এই দৌড়ের মাধ্যমে তিনি দেখাতে চেয়েছেন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষ আর দশজনের সমান বা বেশি কিছু করে দেখাতে পারে।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: বিচিত্র

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

18 − 6 =