বিশ্বে প্রথমবারের মতো ফুটবল ম্যাচে খেলেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইচালিত হিউম্যানয়েড রোবটরা। এ ম্যাচে দুইটি রোবটকে ‘অজ্ঞান’ হয়ে পড়ে যেতে ও এদেরকে স্ট্রেচারে করে মাঠ থেকে সরিয়ে নিতে দেখা গিয়েছে। খবর বিডিনিউজ।
সপ্তাহান্তে চীনের বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত এক ইভেন্টে একে অপরের বিপক্ষে ফুটবল খেলেছে চারটি রোবট দল। প্রতিটি দলে ছিল ৩টি করে রোবট। এ খেলা চলেছে পুরোপুরি এআইয়ের সাহায্যে, যেখানে মানুষের কোনো সাহায্য বা তদারকি ছিল না বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।
নির্মাতারা বলছেন, এসব রোবটে উন্নত ‘ভিজুয়াল সেন্সর’ থাকার কারণে এরা বল চিনতে ও মাঠে ঠিকভাবে চলাফেরা করতে পেরেছে। এগুলো পড়ে গেলে এরা নিজেরাই উঠে দাঁড়াতে পারে।তবে খেলার সময় কিছু রোবট পড়ে গেলেও নিজে থেকে আর উঠতে পারেনি। ফলে দুটি রোবটকে স্ট্রেচারে করে মাঠ থেকে সরিয়ে নিয়েছেন মানুষ।
এদিকে, কিছু রোবটকে বল মারতে বা কিক দিতেও সমস্যায় পড়তে দেখা গিয়েছে। এ ফুটবল ম্যাচে খেলোয়াড়দের মধ্যে ধীরে ধীরে ধাক্কা লাগার ঘটনাও অনেকবার ঘটেছে।
ইন্ডিপেনডেন্ট লিখেছে, ভবিষ্যতে চীনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ‘ওয়ার্ল্ড হিউম্যানয়েড রোবট গেইমস’-এর এক ঝলক হিসেবে দেখানো হয়েছে এ আয়োজনকে। এর আগে, এ বছরের শুরুতে প্রথমবারের মতো দেশটিতে হিউম্যানয়েড রোবট বক্সিং ম্যাচও অনুষ্ঠিত হয়।
এআইচালিত হিউম্যানয়েড রোবট তৈরিতে নিজেদের প্রচেষ্টা জোরদার করছে চীন, যেখানে ম্যারাথন, বক্সিং ও ফুটবলের মতো খেলাধুলাকে রোবটের জন্য বাস্তব পরীক্ষা ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করছে দেশটি।
রোবট খেলোয়াড় সরবরাহ কোম্পানি ‘বুস্টার রোবোটিকস’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও চেং হাও বলেছেন, খেলাধুলার প্রতিযোগিতা বিভিন্ন হিউম্যানয়েড রোবটের জন্য আদর্শ পরীক্ষা ক্ষেত্র, যা এদের অ্যালগরিদম ও হার্ডওয়্যার-সফটওয়্যার সিস্টেম দ্রুত উন্নত করতে সাহায্য করে।
তিনি বলেছেন, হিউম্যানয়েড রোবট ব্যবহারে নিরাপত্তাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। “ভবিষ্যতে আমরা এমন ব্যবস্থা করতে পারি যাতে রোবটরা মানুষের সঙ্গে ফুটবল খেলতে পারে। এজন্য আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে, এসব রোবট পুরোপরিভাবে নিরাপদ।”
চেং হাও আরও বলেছেন, এ খেলায় অংশ নেওয়া চারটি ইউনিভার্সিটির সব দলের জন্য হার্ডওয়্যার সরবরাহ করেছে ‘বুস্টার রোবোটিকস’। প্রতিটি ইউনিভার্সিটির নিজস্ব গবেষকরা সেসব রোবটের জন্য এমন সফটওয়্যার তৈরি করেছেন, যা রোবটকে বল চিনতে, কী সিদ্ধান্ত নিতে হবে তা ঠিক করতে, কোথায় দাঁড়াতে হবে তা নির্ধারণে ও কিভাবে বল পাস করতে হবে তা শিখিয়েছে। এতে রোবটের গতি, বল মারার শক্তি ও বল কোন দিকে যাবে– এসব বিষয়ও এদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা শিখিয়েছেন গবেষকরা।
এ ফুটবল ম্যাচে জয়ী হয়েছে ‘সিনহুয়া ইউনিভার্সিটি’র ‘টিএইচইউ রোবোটিকস’ নামের দল। ‘চায়না অ্যাগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটি’র ‘মাউন্টেইন সি’ দলকে ৫-৩ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দলটি।
বিশ্বের অন্যান্য বড় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোম্পানি মানুষের মতো বুদ্ধিমান এআই রোবট তৈরিতে ফুটবলকে একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে। ২০২৩ সালে ছোট ছোট ফুটবল খেলার রোবট দেখিয়েছিল মার্কিন সার্চ জায়ান্ট গুগলের এআই স্টার্টআপ ডিপমাইন্ড।