আফরোজা আখতার পারভীন: বিশ্ব একটি জ্বালানি যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি শতকের শেষে ১.৫ ডিগ্রিতে ধরে রাখার বিষয়টি খুব চ্যালেঞ্জিং হবে। নেগোসিয়েটরদেও পাশাপাশি আমরা সিভিল সোসাইটির পক্ষ থেকে চাপ সৃষ্টি ও জনমত গঠন চেষ্টা অব্যাহত রাখবো। কিন্তু ২০২৫ সালের মধ্যে জলবায়ু তহবিলে ৬০০ কোটি টাকার জোগান নিশ্চিত করা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বিসিপিসিএল-ইপি ক্লাইমেট টকস-এর অতিথি হয়ে সেন্টার ফর পাটিসিপেটরি রির্সাস অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের নির্বাহী প্রধান শামসুদ্দোহা উপরের কথাগুলো বলেন।
তিনি জানান, এবার সিভিল সোসাইটি বেশ প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রায় ২৫টি দেশি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা মিলিত হয়ে আলোচনা করেছে। বিগত কপগুলোতে কী আলোচনা হয়েছে আর কপ২৭-এ কী নিয়ে আলোচনা করা যায় তা নিয়ে মত বিনিময় হয়েছে। এছাড়া গণমাধ্যম কর্মী যারা কপ২৭ কাভার করতে যাবেন তাদের ওরিয়েন্টেশন দেওয়া হয়েছে। সংসদ সদস্যসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে মত বিনিময় হয়েছে।
শামসুদ্দোহা বলেন, প্রতিটি দেশ তাদের এনডিসি দাখিল করেছে। তারা কার্বন দূষণ কমানর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সেগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যাচ্ছে, ১.৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা বজায় রাখার লক্ষ্য অর্জন করা যাচ্ছে না। কপ২৭-এর বড় লক্ষ্য হবে দেশগুলোর এনডিসিতে কার্বন দূষণ কমানর যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া আছে তা আরও বাড়ান।
তার মতে, এখন পর্যন্ত কোনো কপে লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিল গঠন বিষয়ে সাফল্য আসেনি। উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে বার বার চাপ দেওয়া সত্ত্বেও এর সুরাহা হয়নি। আশা করা হচ্ছে, এবার এই এজেন্ডার একটা সমাধান হবে। উন্নত দেশগুলো মিটিগেশনের জন্য অর্থ দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা যথাযথ কি না তা ‘স্টক টেক’বিবেচনা করে দেখবে। এবার ‘স্টক টেক’ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
শামসুদ্দোহা হতাশা জানিয়ে বলেন, ১০০ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যে প্রতিশ্রুতি তা পূরণের কাছাকাছিও আমরা যেতে পারিনি। যতটুকু তহবিল সংগ্রহ হয়েছে বলে বলা হচ্ছে তার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। এ তহবিলের ৫০ ভাগ মিটিগেশনে আর ৫০ ভাগ এডাপটেশনে ব্যবহার হওয়ার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, মিটিগেশনে ৮০ ভাগ আর এডাপটেশনে ২০ ভাগ ব্যবহৃত হচ্ছে। কপ২৭-এ দাবি করা হবে এর নিশ্চয়তা যেন পাওয়া যায়। আর ২০২৫ সালের মধ্যে তহবিলে যেন ৬০০ বিলিয়ন ডলার জমা করা হয়।
তিনি বর্তমান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বলেন, যদিও পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে এটি বেশ চ্যালেঞ্জিং। দেখা যাচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ রাজনৈতিক নয় বরং জ্বালানি যুদ্ধ। বর্তমানে ইউরোপ জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ফসিল জ্বালানি এবং কয়লা ব্যবহার বাড়াচ্ছে। এতে করে কার্বন দূষণ তো কমবেই না বরং বাড়বে। যুদ্ধের জন্য যে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে তার মাত্র ৫ ভাগ যদি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় দেওয়া হতো তাহলে কপে এসব আলোচনার প্রয়োজনই হতো না। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা বৈশ্বিক সমস্যা। কিন্তু উন্নত রাষ্ট্রগুলো রাষ্ট্রীয় বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় প্রতিশ্রুত নয়।
২০৫০ সালে ‘নেট জিরো’ অর্জনের জন্য উন্নত দেশগুলোকে ২০৩০ সালের মধ্যে বাধ্যতামূলক ভাবে কয়লা ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। ফসিল জ্বালানি থেকে বের হতে হবে উন্নত দেশগুলোকে ২০৪০ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ২০৫০ সালের মধ্যে। ২০৫০ এর মধ্যে নেট জিরো অর্জনের জন্য এ বিষয়ে চাপ অব্যাহত রাখা জরুরি। আমাদের দাবি হবে, কয়লা ও ফসিল জ্বালানি ব্যবহার কমান নয়, একবারে বন্ধ করা।
শামসুদ্দোহার মতে, নেট জিরো অর্জনের জন্য যে লক্ষ্য তার সময়কাল এখনও বেশ দূরে। তাই নেট জিরো অর্জন লক্ষ্য পিছিয়ে যাবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। বর্তমান সংকটে যতটুকু সমস্যা তা পূরণের জন্য অতিরিক্ত প্রচেষ্টা চালু রাখতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার এবং জ্বালানিদক্ষতা বাড়িয়ে ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব।
দেশের জ্বালানি পরিকল্পনার সমালোচনা করে বলেন, বাংলাদেশ এনডিসিতে নিজেদের অর্থায়নে ৭% জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কাজ করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা ঠিকমতে আগাচ্ছে না। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার বাড়ানর লক্ষ্যও অর্জিত হচ্ছে না। জ্বালানি পরিকল্পনাও প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
আসলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ছিল না। বর্তমান সংকটকালীন পরিতিস্থিতে এটাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। জ্বালানি খাতে পূর্বের বিনিয়োগের দিকে নজর দিলেই তা স্পষ্ট হয়। সর্বত্র গ্রিড ছড়িয়ে দেওয়ার রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির কারণে যেখানে সোলার এনার্জির প্রসার হতো তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া দেশের মানুষ সোলার এনার্জিকে গুরুত্ব দেয় না বরং গ্রিড লাইন থাকলে সাচ্ছন্দ্য বোধ করে। সোলার এনার্জি নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব পাল্টাতে কাজ করতে হবে।