বিসিবিতে রদবদল – সভাপতি নির্বাচিত হলেন বুলবুল

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) নেতৃত্ব বদলের নাটকীয় অধ্যায়ে আজ নতুন মোড় এসেছে। ছুটির দিনে মিরপুরের শেরেবাংলায় বিসিবির বোর্ড সভায় পরিচালকদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। বোর্ড সভায় আজ পরিচালকদের ভোটে নতুন অধ্যায় শুরু হলো কিংবদন্তি এই ক্রিকেটারের। এছাড়া সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েছেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম ও ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েছেন আরেক পরিচালক ফাহিম সিনহা। খবর বার্তা২৪.কম

এর আগে শুক্রবার প্রজ্ঞাপন জারি করে আমিনুল ইসলামকে বিসিবির পরিচালক হিসেবে মনোনয়ন দেয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। তারপরই বিকেলে ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালকদের সভায় পরিচালকদের প্রত্যক্ষ ভোটে ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। বুলবুল বিসিবির ১৬তম সভাপতি।

জাতীয় দলের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে ইতিহাস গড়া আমিনুল ইসলাম বুলবুল দীর্ঘদিন ধরে আছেন দেশের বাইরে। বিসিবির ক্রিকেট প্রশাসনের বাইরে ছিলেন তিনি। উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে আইসিসি ও এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের হয়ে কাজ করেছেন। সরকারের মনোনয়নে বিসিবি পরিচালনা পর্ষদে ফিরে এবার সভাপতি পদে অভিষেক হলো তার।

বুলবুল দায়িত্ব নিয়েই জানান, তিনি নির্বাচন আয়োজনের মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব হস্তান্তর করতে চান। বলেন, ‘আমি এই পদে স্থায়ী হতে চাই না। সরকার চেয়েছে, আমি সম্মান জানিয়েছি। নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করাই আমার মূল লক্ষ্য।’

তবে এই রদবদলের পেছনে রয়েছে বিসিবির সদ্য সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদকে ঘিরে চলমান উত্তেজনা, অনাস্থা, এবং শেষ পর্যন্ত তার বিতর্কিত পদচ্যুতি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে-এটি কি নিয়মতান্ত্রিক পালাবদল, নাকি প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে সৃষ্ট এক অনভিপ্রেত দৃষ্টান্ত?

বিসিবির বর্তমান অস্থিরতার কেন্দ্রবিন্দু সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ। মাত্র কয়েক মাস আগে নির্বাচিত হওয়া ফারুককে হঠাৎ করেই অনাস্থার মুখে পড়তে হয়। বিসিবির ১০ পরিচালকের মধ্যে ৮ জন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে (এনএসসি) লিখিত অনাস্থা জানান। পরদিনই এনএসসি তার পরিচালক হিসেবে মনোনয়ন বাতিল করে। এর ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সভাপতি পদও খালি হয়।

কিন্তু ফারুক এই পদচ্যুতি মেনে নিতে নারাজ। তার দাবি, এটি জোরপূর্বক অপসারণ এবং তিনি কোনোভাবেই পদত্যাগ করেননি। আইসিসির কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগও জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। আমি স্বেচ্ছায় পদ ছাড়িনি। আইসিসিকে জানিয়েছি, তারা ব্যবস্থা নেবে।’

আইসিসির সংবিধান অনুযায়ী, কোনো বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ ধরা পড়লে সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে স্থগিত বা নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা রাখে তারা। অতীতে জিম্বাবুয়ে, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশ এ ধরনের পরিস্থিতির শিকার হয়েছে। ফারুক যদি প্রমাণ করতে পারেন যে তার অপসারণে রাজনৈতিক চাপ কিংবা প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ ছিল, তাহলে বিসিবিকে জটিল পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতে পারে। যদিও বিসিবির কর্মকর্তারা বিষয়টিকে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়াস হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন।

আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বে বিসিবি এখন একটি অস্থায়ী ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যাবে। যার চূড়ান্ত পরিণতি হবে অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় পরবর্তী নির্বাচন। তবে ফারুক আহমেদের অভিযোগ, আইসিসির সম্ভাব্য তদন্ত এবং বোর্ডে অভ্যন্তরীণ বিভাজন মিলিয়ে সামনের দিনগুলো সহজ হবে না-এটি নিশ্চিত। কিন্তু বুলবুল সেই চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত। হাতে সময় চার মাসের মতো থাকলেও নিজেকে উজাড় করে দিয়ে কাজ করতে চান দেশের ক্রিকেটের জন্য!

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

15 − 14 =